Image description
মনোমালিন্য বা মান-অভিমান থেকে অনেক সময় পারস্পরিক কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ ও জিঘাংসা বৃদ্ধি পায়। প্রাণের সম্পর্ক হয়ে যায় প্রাণসংহারি আতঙ্ক। এভাবে কথা বন্ধ করলে নিজেদের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। দুনিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পরকালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যারা এভাবে কথা বন্ধ করে এবং তিন দিনের ভেতর পরস্পরে বোঝাপড়া না করে আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন।
 
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরস্পর সম্পর্কছেদ করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশিকথাবার্তা বলা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।’ (বুখারি : ৬০৫৬; মুসলিম : ২৫৫৯)
 
এ জন্য মানুষের কর্তব্য প্রথমত নিজেকে সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ করা। আর যখন নিজেকে সংশোধন করে নেবে তখন সম্পর্ক ঠিক থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা পুণ্য ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। কেননা তাঁর ন্যায়দণ্ড অত্যন্ত কঠিন’ (সুরা মায়েদা : ২)। হজরত আবু আইয়ুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তার মুসলমান ভাইকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে রাখা জায়েজ নয়। এভাবে তারা উভয়ে যখন মুখোমুখি হয় তখন একজন অগ্রসর হয় কিন্তু অপরজন এড়িয়ে যায়। তবে এদের মধ্যে যে পূর্বে সালাম প্রদান করবে সে-ই উত্তম’ (বুখারি ও মুসলিম)।
 
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমল উপস্থাপন করা হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে না এরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তবে যে ব্যক্তির তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে তাকে মাফ করেন না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এ দুজনের ব্যাপারটি রেখে দাও, যাতে তারা পারস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন করে নিতে পারে।’ (মুসলিম)
 
নিজেরা তো সবসময় চেষ্টা করা, যেন কোনো সম্পর্ক এমন পর্যায়ে না গড়ায়, যাতে কথাবার্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উপরন্তু যদি কাউকে কথাবার্তা বন্ধ করতে দেখা যায়, তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া চাই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ঈমানদাররা পরস্পর ভাই ভাই। অতএব ভাইদের সম্পর্ক পুনর্গঠিত করে দাও’ (সুরা হুজুরাত : ১০)। যদি কেউ কথাবার্তা বন্ধের পর আপসে মিলিত হয়ে যায়, তবে তারা পুণ্যের অধিকারী হয়।
 
হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ঈমানদার ব্যক্তির জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে তিন দিনের অধিক পরিত্যাগ করে থাকা বৈধ নয়। তিন দিন গত হওয়ার পর সাক্ষাৎ করে যদি সে তাকে সালাম করে এবং অপরজনও সালামের উত্তর দেয়, তবে উভয়ই পুণ্যের অংশীদার হবে। যদি সে সালামের উত্তর না দেয়, তবে পাপী হবে। তবে সালাম প্রদানকারী পরিত্যাগ করার পাপ হতে মুক্ত হয়ে যাবে’ (আবু দাউদ)। মূল কথা হচ্ছে, নিজেকে সংযমী, নিয়ন্ত্রিত ও সংশোধিত রাখা। এতে সুন্দর হবে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন।