Image description

জুলাই বিপ্লবের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে আছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজে থানাগুলোতে গিয়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশকে সক্রিয় করার চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে গত ৪ জুলাই পাটগ্রামে দণ্ডিত দুজনকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাটি পুলিশকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। কুমিল্লায় গণপিটুনিতে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টিও শক্তভাবে আমলে নিয়েছে পুলিশ।

যেসব এলাকায় হট্টগোল হচ্ছে, সেখানে ত্বরিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না পুলিশ। উল্টো পুলিশকে উত্তেজিত জনতা নানরকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন আসক সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে গণপিটুনিতে সারা দেশে ৯৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ হয়েছে মবের মাধ্যমে। ওই সব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পর নানা উন্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমছে, পুলিশের ভয় উঠে যাচ্ছে। এসব ঘটনা যাতে আরো কোনো স্থানে না হতে পারে, এজন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলার এসপিদের মৌখিক বার্তা পাঠানো হয়েছে। হট্টগোল হলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এ বিষয়ে ৬৪টি জেলার এসপিদের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আইজিপি বাহারুল আলম আমার দেশকে জানান, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের এক এসপি জানান, মব করে যাতে কেউ আইন ভাঙতে না পারে, এজন্য সতর্ক আছি। পাশাপাশি পুলিশ উঠান বৈঠক করে মানুষকে সচেতন করছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থের ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা থেকে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে জনগণ। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গত বুধবার রাতের এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। অভিযোগ উঠেছে, দুষ্কৃতকারীরা বিএনপির ছত্রছায়ায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির সাবেক নেতা চপল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নামে থানায় মামলা করেছে। ওই ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অন্যদিকে কুমিল্লার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে একটি বাড়িতে মাদক কারবার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে কিছু লোক হামলা চালায়। হামলায় ওই গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তার ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

এ ছাড়াও রাজধানীর মহাখালীতে হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে ভিআইপি কেবিন না পেয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। হোটেলের সিঁড়িতে দুই নারীকে মব সৃষ্টি করে যৌন হেনস্তা ও মারধরের ভিডিও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সেটি ফেসবুকে আসার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে সম্প্রতি মব তৈরি করে জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারধর করা হয়। ওই ঘটনাটি নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে সেটি আবার ভেঙে পড়েছে। ঢাকার একাধিক স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। গত ১ জুলাই ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। বাড্ডায় বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করা হলেও ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করেছে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তারা আমলে নিয়েছেন। ওই ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগী অথবা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় তারা একাধিক জনকে আইনের আওতায় এনেছেন। যারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি, তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লোকজন যাতে মব সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে। মবের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের খবর দিতে বলা হয়েছে।