
ফেসবুক এখন শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়—বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এটি অনলাইন ব্যবসা, কনটেন্ট ক্রিয়েশন এবং নানা ধরনের পেশাদার ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তবে, অনেক ব্যবহারকারী হঠাৎ করে তাদের ফেসবুক আইডি বা পেজ ডিজেবল বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, যার পেছনের কারণ অনেক সময় অস্পষ্ট থাকে।
এখানে তুলে ধরা হলো, কোন কোন কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং কীভাবে তা সমাধান করা যেতে পারে।
ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘন
ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা একটি কঠোর কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে, যা মূলত ছয়টি প্রধান বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গঠিত:
- সহিংসতা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ
- ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা
- আপত্তিকর বা অশ্লীল কনটেন্ট
- তথ্যের সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা
- মেধাস্বত্ব (কপিরাইট)
- রিপোর্ট ও অভিযোগের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি
যদি কেউ ঘৃণাত্মক ভাষা, সহিংসতা, পর্নোগ্রাফি বা বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার করেন, তাহলে তার অ্যাকাউন্ট বা পেইজ পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
কপিরাইট সমস্যা ও রাইটস ম্যানেজার
ফেসবুকে কপিরাইট লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটে। ‘Rights Manager’ নামের একটি টুল ব্যবহার করে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের ভিডিও বা মিডিয়া সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
কিন্তু, অনেক নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এই টুলের ব্যবহার জানেন না। ফলে, তাদের কনটেন্ট অন্য কেউ আপলোড করলে ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেম ভুলভাবে মূল কনটেন্ট ক্রিয়েটরের আইডি বা পেইজ-ই ডিজেবল করে দেয়
ফেসবুকের রোবটিক রিভিউ সিস্টেম
বর্তমানে ফেসবুক অনেকাংশে অটোমেটেড সিস্টেম দিয়ে পরিচালিত। এতে অনেক সময়:
- ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে
- মানুষের যাচাই ছাড়াই
একটি আইডি বা পেইজ সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি নির্দোষ ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ হতাশাজনক অভিজ্ঞতাও নিয়ে আসতে পারে।
ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়
ভেরিফাইড (নীল ব্যাজ) আইডি বা পেজ তুলনামূলক নিরাপদ হলেও কোনো গাইডলাইন ভঙ্গ করলে, অথবা সিস্টেমগত ত্রুটির কারণে ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টও ডিজেবল হতে পারে।
ডিজেবল আইডি বা পেজ পুনরুদ্ধারের উপায়
যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ হঠাৎ করে ডিজেবল হয়ে যায়, তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
ফেসবুক হেল্প সেন্টারে যোগাযোগ করুন – নিবন্ধিত ই-মেইল বা ফোন নম্বর ব্যবহার করে ফিডব্যাক দিন।
পরিচয় প্রমাণ দিন – জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন ইত্যাদির স্ক্যান কপি জমা দিন।
আপিল ফর্ম পূরণ করুন – ফেসবুক সাপোর্ট পেজে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে আপিল জমা দিন।
অপেক্ষা করুন – রিভিউ প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন
- সবসময় ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন পড়ুন এবং মেনে চলুন
- কনটেন্ট শেয়ার করার আগে কপিরাইট নিশ্চিত করুন
- সন্দেহজনক অ্যাপস বা লিঙ্ক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
- প্রয়োজনে আইডি ও পেইজ দুই-স্তর নিরাপত্তা (2FA) সক্রিয় করুন
মনে রাখবেন, ফেসবুক এখন শুধু বিনোদনের নয়, জীবিকারও মাধ্যম। তাই আপনার আইডি বা পেইজ নিরাপদ রাখতে নিয়মিত সতর্ক থাকা জরুরি।
সূত্র : প্রযুক্তি