Image description

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশজুড়ে যখন লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, সেই ঢেউ শুধু সীমান্তের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। 

কেউ সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন, আবার কেউ বিদেশে থেকেও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহায়তার মাধ্যমে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। প্রবাসীদের এই সক্রিয় ভূমিকা—বিশেষ  করে প্রবাসী নারীদের অবদান—নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলার আশিষ কিফায়েত নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র ‘আমাদ’স ড্রিম’।

চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র আমাদ মাহবুব—একজন বাংলাদেশি নারী, মেহেদী ও কত্থক নৃত্যশিল্পী। সামাজিক নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে স্নায়ুবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ‘আমাদ’স ড্রিম’ তার ব্যক্তিগত সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক শিকড়ের টান এবং রাজনৈতিক সচেতনতার যাত্রা তুলে ধরে।

এটি কেবল প্রবাসী জীবনের গল্প নয়। বরং প্রতিফলিত করে ২০২৪ সালের জুলাই গণআন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় ভূমিকা। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, কেউ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন, আবার কেউ নিজেদের পেশাগত দক্ষতা ব্যবহার করেছেন আন্দোলনের পক্ষে।

চলচ্চিত্রটিতে শিল্প ও প্রতীকের ভাষায় এই বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষভাবে দেখানো হয়েছে কিভাবে আমাদ তার মেহেদী শিল্পকে আন্দোলনের প্রতি সংহতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন এবং নকশা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের গণআন্দোলনের পাশে দাঁড়ান।

তথ্যচিত্রটি এরই মধ্য ১০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছ। ‘আমাদ’স ড্রিম’ নির্বাচিত হয়েছে জাম্বিয়া শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, অ্যান্টি-ওয়ার ইন্টারন্যশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আয়োজিত আনাতোলিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও গোল্ডেন ব্রিজ ইস্তাম্বুল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এছাড়া, চলচ্চিত্রটি ইস্ট ভিলেজ নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র উৎসব এবং এথেন্স আন্তর্জাতিক আর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেছে। 

পরিচালক আশিষ কিফায়েত একজন বাংলাদেশি অডিও-ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলার, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করেন। তিনি অভিবাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।

২০২৫ সালে তিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করকরান স্কুল অব দ্য আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে নিউ মিডিয়া ফটোজার্নালিজমে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য টাইমস, ব্লুমবার্গ নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান এবং দ্য হিল–এ।