
আমরা প্রতিদিন ব্রাউজার, অ্যাপ কিংবা পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে নির্ভর করে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করি, ধরে নিই আমাদের তথ্য নিরাপদ। কিন্তু ডিজিটাল দুনিয়া যতটা সুরক্ষিত মনে হয়, বাস্তবে তা নয়। হঠাৎ করেই আপনার লগইন তথ্য কোনো সাইবার অপরাধীর হাতে চলে যেতে পারেছড়িয়ে পড়তে পারে অনিরাপদ ফোরাম, ডেটা ব্রিচ ডাম্প বা ডার্ক ওয়েবে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, আপনি জানতে পারেন অনেক দেরিতে যখন ক্ষতি হয়ে গেছে।
১. Have I Been Pwnedগ
এই ফ্রি ও স্বাধীন প্ল্যাটফর্মে শুধু আপনার ইমেইল আইডি বসালেই জানা যাবে সেটি কোনো পূর্ববর্তী ডেটা ব্রিচে ফাঁস হয়েছে কি না।
বৈশিষ্ট্য:
ইমেইল দিয়ে ব্রিচ চেক
প্রাইভেসি সুরক্ষিত রেখে পাসওয়ার্ড পরীক্ষা
ভবিষ্যতের জন্য ইমেইল সতর্কবার্তা
কেন জরুরি:
এই টুলটি দ্রুত, গোপনীয় এবং সাইনআপ ছাড়াই ব্যবহারযোগ্য। আপনার ইমেইল একবার ব্রিচে পড়েছে বুঝতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
২. Google Password Checkup (গুগল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এর মাধ্যমে)
যারা গুগলের ক্রোম ব্রাউজার বা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি বিল্ট-ইন সুবিধা। এই টুলটি আপনার সংরক্ষিত পাসওয়ার্ডগুলোর মধ্যে কোনগুলো লিক হয়েছে বা দুর্বল, তা বলে দেয়।
বৈশিষ্ট্য:
কম্প্রোমাইজড, পুনঃব্যবহৃত বা দুর্বল পাসওয়ার্ড সম্পর্কে রিয়েল-টাইম সতর্কতা
ব্রাউজার এবং গুগল অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে
ব্যাকগ্রাউন্ডে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে
কেন জরুরি: যেহেতু অনেকেই প্রতিদিন গুগল ব্যবহার করেন এবং পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করেন, এটি একটি শক্তিশালী টুল, যা আপনি হয়তো ব্যবহার করছেন অথচ জানেন না।
৩. Google One Dark Web Report
এই টুলটি ডার্ক ওয়েবে আপনার ইমেইল, ফোন নম্বর কিংবা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে কি না তা স্ক্যান করে জানায়।
বৈশিষ্ট্য:
ডার্ক ওয়েব ফোরাম ও ডেটাবেস স্ক্যান করে
ইমেইল ছাড়াও অন্যান্য তথ্য খোঁজে
গুগল ওয়ান সাবস্ক্রিপশন থাকলেই অ্যাক্সেসযোগ্য (ট্রায়ালেও চলবে)
কেন জরুরি:
চুরি হওয়া তথ্য প্রায়ই ডার্ক ওয়েবেই প্রথম ছড়ায়। এই টুলটির মাধ্যমে আপনি দেরিতে জানার বদলে শুরুতেই সতর্ক হতে পারবেন।
৪. Apple iCloud Keychain Password Monitoring
আপনি যদি অ্যাপল ব্যবহারকারী হন, তাহলে আইক্লাউড কিচেইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেবে আপনার স্টোর করা পাসওয়ার্ড কোনো ডেটা লিকে পড়েছে কি না।
বৈশিষ্ট্য:
iOS ও macOS উভয়েই কাজ করে
ফাঁস হওয়া, দুর্বল বা পুনর্ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড চিহ্নিত করে
নিরাপদ পাসওয়ার্ড তৈরিতে উৎসাহিত করে
কেন জরুরি:
অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একদম ফ্রি এবং বিল্ট-ইন একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা—ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য এটি একটি সহজ ও কার্যকর উপায়।
তাই এখন প্রশ্ন: আপনার পাসওয়ার্ড কি ফাঁস হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তাহলে করণীয় কী?
কীভাবে বুঝবেন আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে?
অনেক সময় কোনো ডেটা লিকের খবর আপনার চোখে না পড়লেও, আপনার অ্যাকাউন্টে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে তথ্য হয়তো হ্যাকারদের হাতে পৌঁছেছে। নিচের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন:
কখনো কখনো আপনি বুঝে ওঠার আগেই আপনার অ্যাকাউন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন—
*অপরিচিত লোকেশন বা ডিভাইস থেকে লগইন নোটিফিকেশন
*আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অদ্ভুত বা স্প্যাম মেসেজ পাঠানো
*আপনি অনুরোধ না করলেও পাসওয়ার্ড রিসেট ইমেইল আসা
*‘বেশি লগইন চেষ্টা’ দেখিয়ে অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যাওয়া
*অচেনা লেনদেন বা চার্জ
আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে কী করবেন?
যেকোনো টুলে যদি দেখা যায় আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিচের কাজগুলো করুন—
*পাসওয়ার্ড সঙ্গে সঙ্গে বদলান এবং টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুন
*লগইন হিস্টরি ও অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি খুঁটিয়ে দেখুন
*একই পাসওয়ার্ড অন্যত্র ব্যবহার করলে সেখানেও পরিবর্তন আনুন
*রিকভারি ইমেইল ও ফোন নম্বর সঠিক আছে কি না যাচাই করুন
এমন একটি নতুন ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যা অন্য কোথাও ব্যবহার হয়নি
*একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বানাবেন যেভাবে
*অন্তত ১২ অক্ষরের দীর্ঘ এবং এলোমেলো
*কোনো নাম, শব্দকোষে থাকা শব্দ বা তারিখ নয়
*বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও প্রতীক মিলিয়ে ব্যবহার করুন
*একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার করবেন না
পাসওয়ার্ড সুরক্ষা এখন আর শুধুমাত্র টেকনোলজির বিষয় নয়, এটি আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রথম ও প্রধান দেয়াল। তাই এই দেয়ালকে দুর্বল হতে দেবেন না। পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে কি না তা নিয়মিত চেক করুন, সতর্ক থাকুন, এবং আগেভাগেই পদক্ষেপ নিন।