
একজন গ্রাহক এখন থেকে নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিতে পারবেন। এত দিন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সব অপারেটর মিলিয়ে ১৫টি সিম নেওয়া যেত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিম কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কমিশন এ-সংক্রান্ত পর্যালোচনা করেছে। তাদের পর্যালোচনা বলছে, এত বেশিসংখ্যক সিম একজন গ্রাহক ব্যবহার করেন না। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলন চর্চা বিবেচনায় একজনের নামের বিপরীতে সিম সর্বোচ্চ ১০টি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ কমিশন সভায় ১৯ মে সিমের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এরই মধ্যে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

২০১৭ সালে বিটিআরসি একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে বিটিআরসি আরেক নির্দেশনায় জানিয়েছিল, একজন গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন।
বিটিআরসির হিসাবে, গত মার্চ শেষে দেশে সক্রিয় সিমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬২ লাখের বেশি। যদিও এক ব্যক্তির কাছে একাধিক সিম থাকতে পারে। বিটিআরসি বলছে, দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত গ্রাহকের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ গ্রাহকের নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্রাহকের কাছে। ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহারকারী গ্রাহক মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বিটিআরসি দেশের তিনটি মোবাইল অপারেটরের পাঁচজন ব্যবহারকারীর তিন মাসের ব্যবহারের ধরন পর্যালোচনা করেছে। এঁদের ১৫টি করে সিম রয়েছে। বিটিআরসি বলছে, এঁরা একসঙ্গে ৫ থেকে ৬টির বেশি সিম সচল রাখেন না। ১৫টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকায় অপারেটররা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ফলে অনেক সিম কোনো কাজে আসে না।
বিটিআরসি যে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, সেগুলোকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। নইলে সিমের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সমস্যা রয়ে যাবে।

বিটিআরসি বলছে, দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লাখ সিম বিক্রি হয়। তারা পর্যালোচনায় দেখেছে, এক দিনে একই গ্রাহক দুই বা তার বেশি সিম নিবন্ধন করছেন, যা অস্বাভাবিক। কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধন করেন, যা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশে একজন গ্রাহকের কাছে কয়টি সিম বিক্রির সুযোগ আছে, তা–ও পর্যালোচনা করেছে বিটিআরসি। তারা বলছে, একজন গ্রাহক ভারতে সর্বোচ্চ ৯টি, পাকিস্তানে ৫টি, মালদ্বীপে ১০টি ও ইন্দোনেশিয়ায় ৩টি সিম নিবন্ধন করতে পারেন। তবে শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নেই।
সব মিলিয়ে বিটিআরসি একজন গ্রাহকের বিপরীতে সিমের সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এতে যে ২৬ লাখ গ্রাহক ১০টির বেশি সিম ব্যবহার করেন, তাঁদের ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে।
একজন গ্রাহকের বিপরীতে একাধিক সিম নিবন্ধন করার সুযোগ রাখার কারণ হিসেবে বিটিআরসি বলছে, অনেক প্রবীণ ব্যক্তির আঙুলের ছাপ স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না।
বিটিআরসি বলছে, দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লাখ সিম বিক্রি হয়। তারা পর্যালোচনায় দেখেছে, এক দিনে একই গ্রাহক দুই বা তার বেশি সিম নিবন্ধন করছেন, যা অস্বাভাবিক। কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধন করেন, যা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
সে ক্ষেত্রে তাঁরা পরিবারের অন্য কারও নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল অপারেটরদের সেবাকেন্দ্র না থাকায় অনেক নারী বা প্রবীণ ব্যক্তির পক্ষে নিজের নামে সিম নিবন্ধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে ১৮ বছরের কম বয়সীদের সিমগুলো পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নামে নিবন্ধন করা হয়। অনেকেই বাসায় নানা ডিভাইসে ব্যক্তিগত নামে সিম ব্যবহার করে থাকেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ডিভাইসের ব্যবহার বাড়বে।
বিটিআরসির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসি যে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, সেগুলোকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। নইলে সিমের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সমস্যা রয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জাতীয় নিরাপত্তা, গ্রাহক ও ব্যবসার চিন্তা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, অসাধু খুচরা বিক্রেতাদের যে সমস্যা বিটিআরসি উল্লেখ করেছে, তার জন্য কাউকে চিহ্নিত করে শাস্তি বা জরিমানা দেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসে।
বিটিআরসি যে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, সেগুলোকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। নইলে সিমের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সমস্যা রয়ে যাবে।