Image description

জিটুজি অর্থায়নে সারাদেশের ইউনিয়নপর্যায় পর্যন্ত ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে চায় টেলিটক। সরকার টু সরকার (জিটুজি) প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। আর বাংলাদেশ সরকার দেবে ৯০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ। তবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সীমিত সময়ে এমন দরপত্রের সুযোগে তিন কোম্পানির সিন্ডিকেটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি।

সিন্ডিকেট গড়ে তোলা তিন কোম্পানি হলো, চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।

সূত্র মতে, এ প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সেখানে বলা হয়, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি টেন্ডার সিকিউারিটি অর্থাৎ দরপত্রের নিরাপত্তা অর্থ ৩০ লাখ ইউএস ডলার জমা দিতে হবে। সব কোম্পানিকে শুধু একক পণ্য প্রস্তাব করতে হবে। অর্থাৎ একই প্রযুক্তিসম্পন্ন কেবল একটি পণ্যই থাকতে পারবে। একাধিক কোম্পানির পণ্য উল্লেখ করার সুযোগ নেই।

দরপত্র প্রক্রিয়াটি দুই ধাপে সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের দরপত্র দুটি আলাদা বাক্সে বা খামে জমা দিতে হবে। প্রথমটিতে থাকবে প্রস্তাবিত পণ্যের কারিগরি বিবরণ। অন্যটিতে থাকবে আর্থিক প্রস্তাব। দরপত্র কমিটি প্রথমে পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সক্ষমতা মূল্যায়ন করবে। শুধু কারিগরি বিবরণ মূল্যায়নে যোগ্য আবেদনকারীদেরই আর্থিক দরপত্র বিবেচনা করা হবে।

কিন্তু চীনা কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি কোম্পানিই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তাদের মধ্যে চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি) ও ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) দরপত্র জমা দেওয়ার সময় কোনো নিরাপত্তা অর্থ জমা দেয়নি। পাশাপাশি প্রত্যেকটি পণ্যের আলাদা আলাদা নাম ও দাম উল্লেখ করার কথা থাকলেও সেই শর্তও পূরণ করেনি চীনা দুই কোম্পানি। আবার দরপত্র জমা দেওয়ার সময় তারা কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব আলাদা না দিয়ে সবকিছু একসঙ্গে জমা দিয়েও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

প্রকল্পটির টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন কমিটির সদস্য ড. ফোরকান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সিআইটিসিসি ও ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ নামের দুটি কোম্পানি অভিজ্ঞ। তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা দরপত্রে কীভাবে অংশ নিতে হয়। তারা যেভাবে দরপত্র জমা দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট ভুলটা ইচ্ছাকৃত। এতে মনে হতে পারে কোনো পক্ষের প্রভাব রয়েছে।

প্রভাব রাখার বিষয়টি যাচ্ছে চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানির (সিএমইসি) দিকে। কারণ অন্য দুই কোম্পানি বাদ পড়লে কাজটি যাবে তাদের পকেটে। বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না জেনেও একাধিক অখ্যাত কোম্পানির বিকল্প পণ্যের কথা উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে বিকল্প রাখার মানে হচ্ছে নিজের সুবিধামতো কম দামে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহ করার অপচেষ্টা। অন্য দু্টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় চায়না মেশিনারিজের তৎপরতা পর্যালোচনা করলে এ তিন কোম্পানির যোগসাজশ স্পষ্ট।

এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতিতে টেলিটক পড়েছে বিপাকে। নতুন করে দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করছে তারা। কিন্তু সীমিত এ দরপত্রের বেধে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আবারও দরপত্র আহ্বান করলে তা কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

 

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্পের হেড অব প্রকিউরমেন্ট নুরুল মাবুদ গণমাধ্যমকে বলেন, তিনটি কোম্পানি দরপত্রের নিয়ম ভেঙেছে। তাই কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সবাইকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। ফলে এ দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করছি আমরা। সে ক্ষেত্রে তিন কোম্পানির মধ্যেই আবারও দরপত্র আহ্বান করবো নাকি নতুন কোম্পানি আসবে সে বিষয় নির্দেশ চেয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ও ইআরডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিপিটিইউর কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন দরপত্রে টেলিটক কাকে আহ্বান করবে, সেটা টেলিটকের নিজস্ব এখতিয়ার। একই কথা বলছে ইআরডিও। তাদের মতে, টেলিটক যদি এ ইপিসির মধ্যে কোনো পরিবর্তন চায় তাহলে সেটা ইআরডিকে জানাবে টেলিটক। আর সে অনুযায়ী চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান চাইবে ইআরডি।আস