
‘পাসপোর্ট অফিস’ মানেই দালালদের হাঁকডাক, নানারকম ভোগান্তি আর হয়রানি। এমন চিরচেনা দৃশ্য বদলে গেছে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেলো, দালালদের থেকে সতর্ক করতে হ্যান্ডমাইকে অনবরত চলছে ঘোষণা। দেওয়ালে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে চিহ্নিত দালালদের ছবি। আর আনসারদের দিয়ে চলছে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ। বদলে যাওয়া পাসপোর্ট অফিসের এমন চিত্রে সেবাগ্রহীতারাও খুশি।
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, আগে যেমন পাসপোর্ট অফিসে গেলে দালালরা চোখের ইশারায় কিংবা সরাসরি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতো, সেই চিত্র একেবারেই নেই। তার বিপরীতে হ্যান্ডমাইকে অনবরত ঘোষণা চলছে। দালালদের থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশনার পাশাপাশি বলা হচ্ছে, কোনও সমস্যা হলে সরাসরি কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হতে।
পাসপোর্ট অফিসে চিহ্নিত দালাল; যারা আগে কখনও না কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে তাদের ছবিও সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেবা প্রত্যাশীরা যেন দালালদের খপ্পড়ে না পড়েন, সেজন্য পুরো অফিসেই নজরদারি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেলো, কর্তব্যরত আনসারদের তৎপরতাও বেড়েছে। সেবা প্রত্যাশীরা কোনও সমস্যায় পড়ছেন কিনা কিংবা কী সমস্যায় তারা এসেছেন, কোন রুমে সেই সমস্যার সমাধান হবে; তা সঠিকভাবে বলে দিচ্ছেন। ছবি তোলার লাইনেও কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য কয়েকজন আনসার তদারকি করছেন। সবমিলিয়ে পুরো অফিস জুড়েই শৃঙ্খলা ফিরেছে।
নতুন পাসপোর্ট করতে আসা আসিফ মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাসপোর্ট করতে অনলাইনে আবেদন করেছেন তিনি। এখন ছবি তোলারর জন্য এসেছেন তিনি।
দালাল বা অন্য কোনও ঝামেলায় পড়েননি জানিয়ে এই তরুণ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেমনটা শুনেছি, তার থেকে বেশ ভালো পরিবেশ এখন। ছবি তোলার লাইনটা একটু দীর্ঘ ছিল। এ কারণে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এছাড়া দালাল বা ঘুষের কোনও কারবার নেই। এমনকি কেউ এসে দ্রুত করে দেবো, এমন কথাও কেউ বলেনি।’ এমন সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এই গ্রহীতা।
সুমাইয়া সুলতানা নামের আরেক পাসপোর্ট প্রত্যাশী বলেন, ‘আগে শুনেছি পাসপোর্ট অফিসে দালাল থাকে, ঘুষও দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এখানকার চিত্র ভিন্ন । ঘুষ ও দালাল কোনটিই নেই এখানে।’
তিনি বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা আর দালালদের ছবি দেওয়ায় ভালোই হয়েছে। লোকজন এদের চিনবে আর সতর্ক হবে। প্রত্যেকটি অফিসই এমন হওয়া উচিৎ।’ ঘুষ ও দালাল মুক্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এদিকে এ বিষয় নিয়ে কথা হয় হয় ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি যোগদানের পর দালালমুক্ত করার ঘোষণা দেন, নিয়েছেন নানা পদক্ষেপও। হ্যান্ড মাইকে দালাল বিষয়ে সতর্ক করতে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক দালালদের ছবি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা সেবা নিতে আসবেন তারা যেন এদের ছবি দেখে সতর্ক হন। এর ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আনসারদের দিয়েও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এমনকি আনসার সদস্যরাও যেন কোনও প্রকার অবৈধ কাজে জড়িত হতে না পারেন, সে ব্যাপারেও তাদের সতর্ক করা হয়েছে।’ হয়রানিমুক্ত উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাসপোর্টের প্রত্যেকটি অফিস দালালমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ঢাকা বিভাগীয় অফিস এখন দালালমুক্ত। হয়রানি ছাড়াই মানুষ সেবা পাচ্ছেন। আমরা এ ধরনের সেবাই দিতে চাই। আর দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের যে কঠোর অবস্থান এখনও তাই আছে।’ দালাল দেখা মাত্রই কর্তব্যরত আনসার অথবা কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।