![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/5a892ca1c20038f2b99f569bde7a376d.png)
আয়নাঘরের কারিগর মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক অসংখ্য গুম-খুন, ক্রসফায়ারের সেনাপতি। পালাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কথিত গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাবেক মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকের নাম উচ্চারিত হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার পর দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হন।
বিভিন্ন খাতে তার একক আধিপত্য ছিল, যার মধ্যে রয়েছে সমরাস্ত্র, ব্যাংক-বীমা, পোশাক শিল্প, আবাসন, এভিয়েশন, শেয়ারবাজার, জ্বালানি, সামরিক বাহিনীর বদলি-পদোন্নতি, শিল্প ও বাণিজ্য খাত।তারিক সিদ্দিকের একচেটিয়া আধিপত্যের ফলে দেশের বিভিন্ন খাতের সংশ্লিষ্টরা ব্যাপকভাবে তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়, তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করে ফেলতেন, দাবির অঙ্গ হিসেবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক সুবিধা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার নামে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর কাছে যেকোনো ব্যবসায়ী এক ফোন কলেই শত কোটি টাকা দাবি করতে বাধ্য হতেন।
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিভিন্ন সরকারি পদ ও সেবা সুবিধার মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। ১৫ বছরের মধ্যে তিনি শত শত বিঘা জমি, বহু ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি, বাড়ি, রিসোর্ট, বাংলো, মাছের ঘের এবং গরুর খামারের মালিক হয়েছেন। তাঁর জমি ও সম্পদ খুঁজে পাওয়া গেছে ঢাকার বিভিন্ন স্থান, গাজীপুর, কক্সবাজার, সাভার, মিরপুর, ধানমণ্ডি এবং পূর্বাচল এলাকায়
পূর্বাচলে, বিশেষ করে ৩০০ ফিট মূল সড়ক থেকে ১০০ ফিট সংযোগ সড়কের পাশে, তারিক সিদ্দিকের ৫টি আবাসিক প্লট রয়েছে। জলসিঁড়ি আবাসিক প্রকল্পের ১৭টি সেক্টরের মধ্যে ৫টি সেক্টরে ৪১টি প্লট রয়েছে তার নামে। এছাড়া, গাজীপুর এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে, যা তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্রয় করেছেন। এসব জমিতে তিনি বাগানবাড়ি, পুকুর, প্রাসাদ, পশুপাখি লালন-পালনসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক সুবিধা গড়ে তুলেছেন।
তারিক সিদ্দিক সেনাবাহিনীতেও ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। পদোন্নতি ও বদলি কার্যক্রমে তিনি তার প্রভাব বিস্তার করতেন এবং তার অনুসারীদের সুবিধা প্রদান করতেন। বহু সেনা কর্মকর্তাকে তিনি পদোন্নতি ও বদলির মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা এনে দিয়েছিলেন, যার বিনিময়ে তার পরিবার ও আত্মীয়রা বিভিন্ন জমি এবং সম্পত্তি লাভ করেছিল।
তারিক সিদ্দিক শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ব্যাপক পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার একটি শীর্ষস্থানীয় সম্পত্তি লন্ডনে রয়েছে, যেখানে তিনি ১৯ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ডে একটি প্রাসাদ কিনেছেন, যা তার মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নামে। এই বাড়িটি ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়েলেস এইচ এম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্টার হয়েছে। এছাড়া, তার বড় মেয়ে নুরীন তাসমিয়া সিদ্দিককেও লন্ডনের পার্শ্ববর্তী টাউন ক্যান্টে একটি দামী বাড়ি কিনে দিয়েছেন।
এছাড়া তারিক সিদ্দিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং রিসোর্টে গোপন বিনিয়োগ করেছেন। গাজীপুর এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন রিসোর্টে তার শেয়ার রয়েছে। রূপগঞ্জের পূর্বাচল নিঝুম পল্লী রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট এবং সারা রিসোর্টেও তিনি শেয়ার ধারক। এসব বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ধরনের মুনাফা অর্জন করেছেন, যা তার অন্যান্য সম্পত্তির মতোই অস্বচ্ছ ও সন্দেহজনক।
তারিক সিদ্দিকের ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি। মিরপুর ডিওএইচএসে স্ত্রীর নামে ১৩টি ফ্ল্যাট, ধানমণ্ডি এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জমি এবং বাড়ি রয়েছে। তিনি একাধিক বাণিজ্যিক ভবন, ফ্ল্যাট এবং জমির মালিক হয়েছেন গুলশান, বনানী, মহাখালী, পল্লবী, এবং সাভার এলাকার মধ্যে। এছাড়া, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ, শীলখালী ও লেঙ্গুরবিল মৌজায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে।
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি দুর্নীতি ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। যদিও এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবুও এসব সম্পত্তির বিস্তার ও তার প্রভাবের বিষয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।