ভিডিও >> দ্বি-দলীয় রাজনীতির ফোকরে দাঁড়ানোর মত শক্তি বাংলাদেশে নেইঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
09 February 2015, Monday
অর্থনীতিবিদ ড· দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- বর্তমানে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের উপরই অধৈর্যø আচরণ প্রদর্শন করছে। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং সকল রাজনীতি দলের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তবে দেশে এখনও এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই যারা দ্বি-দলীয় রাজনীতির ফোকরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। সাধারণ মানুষ দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার পরও কেন এখনও মধ্যপন্থার কোনো শক্তি কেন উঠতে পারছে না? তবে সবচেয়ে ভীতির ব্যাপার হল দুই রাজনৈতিক দল যে মরণ খেলায় মেতেছে তাতে রাজনীতির ভেতরে কোনো উগ্রশক্তি বিকল্প হয়ে দাঁড়ায় কিনা। এটাই হল সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তôা!
‘এ সময়ের রাজনীতি ও অর্থনীতি’ আলোচ্য বিষয়ের উপর অর্থনীতিবিদ ড· দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বৈশাখী টেলিভিশনের ‘জিরো আওয়ার অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ড· দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- বর্তমানে বাংলাদেশে বোমাবাজির এক নৃশংস আবহাওয়া বিরাজ করছে। বর্তমান ড়্গমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পড়্গ হতে মনে করা হচ্ছে যে- বোমাবাজি ও মানুষ পুড়িয়ে যারা নৃশংস রাজনীতি করে তাদের বিরম্নদ্ধে সাধারণ জনগণ বিতৃষ্ণা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। আওয়ামী লীগ সরকার এই চিন্তôার উপর দৃঢ় আস্থাবান।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল মনে করছে যে- রাজনৈতিক আবহাওয়া যদি অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে তুঙ্গে নেয়া যায়, তবে সাধারণ জনগণ মনে করবে হয়তো বর্তমান সরকার জনগণকে আর নিরাপত্তা দিতে পারছে না। বরং এই সরকার নির্বাচিত জায়গায় অনির্বাচিত লোক দিয়ে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। তাই জনমনে এই আকাঙ্ক্ষা আসতেই পারে যে- অন্য কোন ধরণের সমাধান খোঁজা যায় কিনা? বিএনপির আকাঙ্ক্ষা হল ঐ পরিস্থিতি পর্যন্তô যাওয়া। বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপির এই একই আকাঙ্ক্ষা ছিল। হয়তো বৈদেশিক দাতা গোষ্ঠির সহায়তায় কোনো গণতান্ত্রিক সমাধান আসবে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ খুবই তীব্র ছিল, কিন্তু সেই সুযোগ জনগণ পায়নি। এর অন্যতম উদাহরণ হল নিজ-নিজ এলাকার সংসদ সদস্যের নাম ক‘জন মানুষই আজ বলতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় নব্বই থেকে পঁচানব্বই শতাংশ মানুষই সংসদ সদস্যের নাম ঠিক মত বলতে পারে না। এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে- ৫ জানুয়ারিতে বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হয়েছিল? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যতখানি না ভোট না দিয়ে উত্তেজিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়েছে ঐ সময়ের নৃশংসতা দেখে। মারামারি স্ড়্গুল-কলেজ, নির্বাচনি কেন্দ্র, ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়াসহ নানান সহিংসতায় জর্জরিত ছিল সেই সময়। ঐ সময়ের সহিংসতা বাংলাদেশের কোনো মানুষই মেনে নেয়নি। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল নির্বাচনের পর বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। তার অন্যতম কারণ হল- বিএনপির প্রতি সাধারণ জনগণের ভাবমূর্তি এবং ভরসা অনেকটা কমে গিয়েছিল। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে বিএনপির আঁতাত এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপির অচল ভূমিকা নিয়ে মানুষ একধরণের অস্বস্থির মধ্যে ছিল।
তিনি বলেন- দীর্ঘ একবছর পরেও রাজনীতিতে নৃশংস আবহাওয়া চলছে। এতে সাধারণ জনগণ সবসময় নৃশংসতার বিরম্নদ্ধে অবস্থান করছে। অন্যদিকে জনগণ মনে করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার একধরণের একগুয়েমি করছে। এতে সরকার এমন আচরণ করছে, তাতে সহিংসতা কমছে না বরং আগের চেয়ে বাড়ছে। কিন্তু এই সহিংসতা কামানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের পড়্গ হতে আসছেও না। প্রায় সারা দেশে কম-বেশি শব্দবোমা, পেট্রোলবোমাসহ নানান সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশের সাথে সাথে ঢাকা শহরের ভেতরও একধরণের অস্বস্থিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে অনেকেই কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত একবছর আগে আওয়ামী লীগ সরকার নৃশংস ঘটনা থেকে যতটা সুবিধা করতে পেয়েছে, বরং এই বছর তার পুরো সুবিধা টুকু পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মনে বারবার শুধু প্রশ্ন জেগেই ওঠছে যে- আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ড়্গমতায় আছে কিনা? সরকার কেন বিরোধী দলের সাথে আলোচনার সুযোগ করে দিচ্ছে না? সরকার দেশ পরিচালনায় একগুয়েমি আচরণ প্রদর্শন করছে কেন ?
তিনি আরো বলেন- এমতাবস্থায় দেশ এবং জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা। যেখানে রাজনীতিবিদদের অভিন্ন স্বার্থকে বেশি গুরম্নত্ব প্রদান করা হবে। অন্যদিকে যারা রাষ্ট্র কাঠামোর নিরাপত্তা দেয় তারা যদি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে, তবে তা দেশের জন্য অত্যন্তô খারাপ। সাম্প্রতিককালে নিরাপত্তাবাহিনীদের কথাবার্তাগুলো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর চেয়ে দলীয় কর্মকর্তাদের মতো হয়ে যায়। তাই এই সমস্যার প্রতিষেধক পাওয়া খুবই মুশকিল। যদি এই সমস্যার সমাধান না করা হয় তবে আগুন নিয়ে খেলার মাত্রা বেড়েই যাবে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর অবস্থানের বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড· দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র নিয়ে বিদেশিদের অতিমাত্রার যে একটা চেষ্টা বা ঊচ্ছ্বাস ছিল তা বর্তমানে কিছুটা স্তিôমিত থাইল্যান্ড বা মিশরের দিকে তাকালেই এটা পরিস্ড়্গার বোঝা যায়। বাংলাদেশ এই পরিস্থিতির সুযোগ পেতে পারে।
ওবামার ভারত সফরে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ভারত-মার্কিন সম্পর্ক তাদের দ্বিপাড়্গিক জিনিস। তারা আঞ্চলিক ড়্গেত্রে বা নির্দিষ্ট কোন দেশের ড়্গেত্রে কী মনোভাব পোষণ করে তা পরিস্ড়্গার নয়। ভারত এবং আমেরিকা বাংলাদেশের বিষয়ে যে একই ভূমিকা রাখবে তা মনে করার কিছু নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন