Image description

দুটি কুড়ি আর একটি পাতার শহর সিলেট। চা বাগান আর পাহাড়ি সৌন্দর্যে অপরূপ এই নগরী শুধু পর্যটনেই নয়, দেশের ক্রিকেট মানচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই আছে দেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম প্রকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

সিলেটের লাক্কাতুরা স্টেডিয়ামে প্রবেশ মুখেই রয়েছে চা বাগান। বড় বড় পাহাড়ের টিলা, যে চিত্র দেখলে মন জুড়িয়ে যেতে বাধ্য থাকিবেন পর্যটকরা। আর এই মনোমুগ্ধকর স্টেডিয়ামেই রাত পোহালে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১২তম আসর।

উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামবে সিলেট টাইটান্স এবং রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। এই ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আগ্রহের কারণও রয়েছে। কারণ এটা দুই বন্ধুর লড়াই। অর্থাৎ, নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াই। ম্যাচের আগের দিন অবশ্য আজ বৃৃহস্পতিবার কথা বলেছেন দুইজনই এ বিষয়ে। 

সকালে রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় প্লেয়ার হিসেবে এটা খুবই রোমাঞ্চকর যে হোম ক্রাউডের বিপক্ষে আমরা খেলব। এটা আসলেই আনন্দের। তাই এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার টিমে যতগুলো প্লেয়ার আছে সবাই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। অবশ্য কোনো দলকে এগিয়ে রাখতে চান না শান্ত, ‘দুই টিমই খুবই ভালো দল। আমি এখানে আলাদাভাবে কোনো দলকে (এগিয়ে) দেখতে চাচ্ছি না। আগামীকাল যে দলটা ভালো খেলবে সেই জিতবে। তবে এখানে দুইটা দলই খুবই ভালো।’

মিরাজ বিকেলে বলেন, 'রাজশাহীর অনেক ভালো খেলোয়াড় রয়েছে হালকা করে দেখার কিছু নেই। প্রত্যেকটা ফ্র্যাঞ্চাইজিরই স্বপ্ন থাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আর অবশ্যই আমারও স্বপ্ন সিলেটকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য। কারণ, সিলেট কখনো চ্যাম্পিয়ন হয়নি। তাই এটা একটা আমার কাছে মনে হয় যে প্রথমবার যদি সিলেট চ্যাম্পিয়ন হয় আর সেটা যদি আমার হাত ধরেই হয় তাহলে তো এটা অবশ্যই একটা ভালো লাগার বিষয়।'

এদিকে বিপিএল শুরু হওয়ার আগের দিন আজকের (বৃহস্পতিবার) সকালটা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম র‌য়্যালসের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে। দুপুর না হতেই নেতিবাচক খবরের শিরোনামে আসে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। নানা অব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষোভ জানিয়ে দলীয় অনুশীলন ছেড়ে যান দুই কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও তালহা জুবায়ের। পরে বিকেলে অবশ্য অভিমান ভেঙে তারা যোগ দেন দলে। 

দল ছাড়ার ব্যাখায় সুজন বলেছেন, ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে (উত্তপ্ত পরিস্থিতি) হয়তবা এরকম একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। দলের মালিকদের ধন্যবাদ, যারা দুজনই আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। উনারা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, বিসিবি থেকেও আমার সঙ্গে কথা বলছে একটু। অনুশীলনে যে অনুশীলন সামগ্রীগুলো দরকার হবে সেগুলো আমি পাইনি। তখন আমার একটু মেজাজ খারাপই হয়েছে আসলে। আমার সাথে হয়তবা একটু বাজে ব্যবহার করে ফেলেছে। আমি ভেবেছি টুর্নামেন্ট এখনো শুরুই হয়নি এখনই যদি বাজে ব্যবহার করে তাহলে খেলা হারলে কী হবে। তৌহিদ এবং আদনান দুজনই আমার সঙ্গে কথা বলেছে। এটা আসলে পুুরোপুরি ভুল বোঝাবুঝি।’

সুজন মনে করেন এমন ঘটনা এখনই হয়ে যাওয়ায় ভালো হয়েছে, ‘যেটা আজকে হয়েছে হয়তবা ভালো হয়েছে একদিক থেকে। পরে হওয়ার থেকে আগে হয়ে যাওয়াটা ভালো হয়েছে হয়তবা। এটা হয়ে যাওয়াতে মনে হয় ভালো হয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের দলের বন্ডিং আরও ভালো হবে, সেটা আমি বিশ্বাস করি।’

এদিকে সিলেটের মাঠে সবসময় দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও কড়া নজর বিসিবির। সিলেট মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী (পিপিএম) জানালেন, 'আমরা বিপিএলকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি এবং ফাইনাল টাচ হিসেবে আমি নিজে ভিজিটিংয়ে আসছি।'

'কোনো দুর্বলতা থাকলে সেগুলোও আমরা অবজারভেশনে রেখেছি এবং সেগুলো আমরা পূরণ করার চেষ্টা করব। আশা করছি আমাদের যে অ্যারেঞ্জমেন্ট, এর মাধ্যমে আমরা সুন্দর, নিরাপত্তাটাকে নিশ্চিত রেখে একটা সুন্দর বিপিএল উপহার দিতে পারব। বাড়তি ব্যবস্থা এবার নেওয়া হয়েছে। একটু পরিষ্কার করেই বলতে চাই, ফাউ খেলা দেখতে আসা লোকজনের কারণেই কিন্তু নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এবার এটা আমরা শক্তভাবে দেখব। নিরাপত্তার ইস্যুটা আমাদের সবার আগে। আগে কি হয়েছে জানি না, আগেরগুলো আমরা ভুলে গিয়ে সম্পন্ন নতুনভাবে করছি। নিরাপত্তা ইস্যুকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখব। এবার সবমিলিয়ে ৬০৫ জন সদস্য থাকবে।'

এদিকে বিপিএলের প্রথম দুই দিনের খেলার টিকিট সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বিসিবি পরিচালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, 'আগামী শুক্রবার বিপিএল-এর প্রথম খেলা। একটা সুসংবাদ হচ্ছে সিলেটে প্রথম দুটি খেলার টিকিট ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা এখন শতভাগ অনলাইনে কাগজবিহীন পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি করছি।'

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ প্রসঙ্গে আমজাদ বলেন, 'আমাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত থাকবেন।'

বিপিএল ঘিরে সিলেটের মাঠ গ্যালারি সাজাতে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। শেষ সময়ের কাজ এগিয়ে নিতে রাত অবধিও কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে। এসব চেষ্টার মধ্যে বিতর্ক সঙ্গী করে শুরু হতে যাওয়া বিপিএল সফল করতে পারে উপভোগ্য মাঠের ক্রিকেট।