অ্যাডিলেডে ঘটন–অঘটনের দ্বিতীয় দিন। এর মাঝেই প্রশ্ন উঠেছে, পাঁচ টেস্টের এই সিরিজে তৃতীয় ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই কি ছাইদানি (অ্যাশেজ) ধরে রাখা মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া?
আগে প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া যাক। পার্থ ও ব্রিসবেনে জিতে সিরিজে এরই মধ্যে ২–০ তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেডে ৮৩ ওভারে ৮ উইকেটে ৩২৬ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে প্যাট কামিন্সের দল। আজ দ্বিতীয় দিনে সকালের সেশনে আরও ৮.২ ওভার খেলে মোট ৯১.২ ওভারে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৭১ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক দল।
ইংল্যান্ড এরপর তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তেমন ভালো করতে পারেনি। ৬৮ ওভারে ৮ উইকেটে ২১৩ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে বেন স্টোকসের দল। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থেকে এখনো ১৫৮ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। এই টেস্টে হাতে আছে আরও তিন দিন। অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো করলে অ্যাডিলেডেও হারের শঙ্কায় পড়ে যেতে পারে ইংল্যান্ড।
এবার ছোট্ট ছোট্ট ঘটনার প্রসঙ্গে আসা যাক। গতকাল প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করা অস্ট্রেলিয়া উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারিকে আউট করে উইকেট না পেলেও আজ সেই রিভিউটি ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ হিসেবে ফেরত পায় ইংল্যান্ড। ক্যারিকে ৭২ রানে ক্যাচ আউটের আবেদন করে আম্পায়ারের সাড়া না পাওয়ায় রিভিউ নিয়েও ফল পায়নি ইংল্যান্ড। রিয়েল টাইম স্নিকোমিটারে পরিস্কার স্পাইক ফুটলেও বল ক্যারির ব্যাটের নিচ দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার একাধিক ফ্রেম আগে স্পাইক ফুটে ওঠায় আউট দেননি তৃতীয় আম্পায়ার। প্রযুক্তিগত এই ভুলের দায় নিয়েছে স্নিকোমিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিবিজি স্পোর্টস। আর ক্যারি নিজেও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তাঁর নিজেরও মনে হয়েছে বল ব্যাট স্পর্শ করেছিল। প্রথম দিনের খেলা শেষে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর কাছে ইংল্যান্ড দল এ নিয়ে অভিযোগ করার পর রিভিউ ফেরত পায় ইংল্যান্ড।
সকালের সেশনে আরেকটি ঘটনায় ওলট–পালট হয় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের রেকর্ডবই। ইংল্যান্ডের ইনিংসে ৮ম ওভারে ওপেনার জ্যাক ক্রলিকে (৯) ফেরান কামিন্স। মাঝে এক ওভার পরই ১০ম ওভারে ৬ বলের মধ্যে ওলি পোপ (৩) ও বেন ডাকেটকে (২৯) ফিরিয়ে গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন লায়ন। ১৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৯ রানে মধ্যাহৃভোজনে যাওয়া ইংল্যান্ড পরের সেশনে ২৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে আরও ৭৩ রান তোলে। চা বিরতির সময় তাঁদের স্কোর ছিল ৩৯ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩২। শেষ সেশনে ২৯ ওভারে আরও ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এই সেশনে উঠেছে ৮১ রান। ক্রিজে ১৫১ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। অন্য প্রান্তে তাঁর সঙ্গী ৪৮ বলে ৩০ রান করা জফরা আর্চার।
লিড বিচারে দ্বিতীয় দিনে সকালের সেশনে নিজেদের ইনিংসে যোগ করা ৪৫ রান বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার জন্য। তখন সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক (৭৫ বলে ৫৪)। ইংল্যান্ড আজ ব্যাটিংয়ে নেমে দুটি জুটিতে যা একটু লড়াই করেছে। আর এ দুটি জুটিতেই স্টোকসের বড় অবদান। পঞ্চম উইকেটে হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে তাঁর ৫৬ রানের জুটিটি আজকের দিনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ। এরপর নবম উইকেটে আর্চারের সঙ্গে ৮৪ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পার করেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের এবারের অ্যাশেজ ভাগ্যের অনেককিছুই নির্ভর করছে আগামীকাল তৃতীয় দিনে এই জুটি কতদূর যেতে পারে, তার ওপর। পায়ে ক্রাম্প নিয়েও স্টোকসের আজকের প্রতিরোধ ছিল প্রশংসনীয়। তবে আগামীকাল রানের ব্যবধান কমাতে ইংল্যান্ড নিশ্চয়ই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করবে। কারণ হাতে উইকেট মাত্র ২টি।
চোট কাটিয়ে অ্যাডিলেডে টেস্টে ফেরা কামিন্স অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় দিনের সেরা বোলার। ক্রলি, জো রুট ও জেমি স্মিথকে ফেরান তিনি। ২টি করে উইকেট স্কট বোল্যান্ড ও লায়নের। ১টি উইকেট ক্যামেরন গ্রিনের।
সকালের সেশনে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটটি নিয়ে ৬ বছর পর টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার স্বাদ পান আর্চার। দুই দিনে চার সেশন মিলিয়ে ২০.২ ওভার বোলিং করা আর্চার ড্রেসিংরুমে ফিরে বেশিক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেননি। ৫২.২ ওভারই ব্যাটিংয়ে নামতে হয় তাঁকে। ১৯ ওভার বোলিং করার পর প্রায় দুই সেশন ধরে ব্যাট করা স্টোকসের সঙ্গে ১০ ওভারের বেশি সময় ক্রিজে কাটিয়ে দেন আর্চার। এই সিরিজে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কেমন হচ্ছে তা বোঝাতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট—ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তাদের পেসার আর্চারের ব্যাটিংগড় রুটের পরই সর্বোচ্চ (৩৯.০০)!
ইংল্যান্ডের ইনিংসে এ পর্যন্ত ৫টি ক্যাচ নেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ক্যারি। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ইংল্যান্ডের ম্যাট প্রায়রের পর তৃতীয় উইকেটকিপার হিসেবে অ্যাশেজে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫টি ক্যাচ নিলেন ক্যারি।স্নিকো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে আজও। দুটো ঘটনাই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জেমি স্মিথকে নিয়ে। ৪৪তম ওভারে কামিন্সের বলে স্মিথের ক্যাচ নিয়ে বিতর্ক হয়। তৃতীয় আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় স্টার্ক এ সময় ক্ষোভ ঝাড়েন, যা শোনা গেছে স্টাম্প মাইকে, ‘স্নিকোকে ছাঁটাই করা দরকার। এটা সবচেয়ে বাজে প্রযুক্তি।’ কামিন্সের পরের ওভারে স্মিথের বিরুদ্ধে আবারও ক্যাচের আবেদন ওঠে। মাঠের আম্পায়ার নিতিন মেনন তৃতীয় আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানের দ্বারস্থ হন আবারও। বল স্মিথের ব্যাট পেরিয়ে যাওয়ার পর স্নিকোতে স্পাইক ফুটে ওঠে এবং আউট ঘোষণা করেন গ্যাফানে। ইংল্যান্ড দল থেকে গ্যালারিতে তাদের সমর্থকেরা সিদ্ধান্তটি ভালোভাবে নেয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৯১.২ ওভারে ৩৭১ (ক্যারি ১০৬, স্টার্ক ৫৪, খাজা ৮২, ইংলিস ৩২; আর্চার ৫/৫৩, কার্স ২/৮৯, জ্যাকস ২/১০৫)
ইংল্যান্ড: ৬৮ ওভারে ২১৩/৮ (স্টোকস ৪৫*, ব্রুক ৪৫, আর্চার ৩০*, ডাকেট ২৯; কামিন্স ৩/৫৪, বোল্যান্ড ২/৩১, লায়ন ২/৫১, গ্রিন ১/২২)—দ্বিতীয় দিন শেষে।