Image description

Muhammad Sajal (মুহাম্মদ সজল)


 
ঢাকা-৮ আসনে অলরেডি মীর্জা আব্বাস আর ওসমান হাদী আছেন, এরপর দাড়াইতেসেন সুজন, জামাতের হেলাল উদ্দিন, আপ বির আলী আহসান জোনায়েদ, এবং সাদিক কায়েমের নামও শোনা যাইতেসে।
মীর্জা আব্বাসের নামে অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, ভেটেরান পার্লামেন্টারিয়ান হিসাবে অনেক দিকেই তিনি আগায়ে থাকবেন, অন্তত ১৫% ভোট পকেটে নিয়া উনি মাঠে নামবেন। ওসমান হাদী এখন পর্যন্ত জুলাইয়ের পরের সবচে পপুলার কয়েকজন ফেইসের একজন হইতে পারসেন, কালচারাল কাল্ট হয়ে যাইতেসেন উনি ক্রমেই।
 
কিন্তু এইসবের সাথে যদি সাদিক কায়েম, সুজন আর জোনায়েদরা এখানে যুক্ত হন, তাইলে শেষমেশ যা হবে, এই সিটে জিতবেন মীর্জা আব্বাস।
ঢাকা-৯ আসনে তাসনিম জারা দাড়িয়েছেন, যদিও দেড় বছর ধরে এখানে শোনা গেছে নাহিদ ইসলামের নাম। মীর্জা আব্বাসকে নমিনেশন দেয়া হয় নি এখানে, বিএনপি এই আসন খালি রেখেছে এখনো, হয়তো শেষ মুহুর্তে এখানে দাড়াতে পারেন আফরোজা আব্বাস। কিন্তু জামায়াত একেবারে ফোকাসড হয়ে কাজ করছে ঢাকা-৯ নিয়ে, তাদের প্রার্থী কবীর আহমেদের কর্মীরা চষে বেড়াচ্ছে সবখানে। এই আসনে বিএনপি-এনসিপির যে দ্বিধা ও নিষ্ক্রিয়তা, এর ফল হতে পারে জামায়াতের জয়।
 
আবার, যাত্রাবাড়ী-ডেমরাতে ঢাকা-৫ থেকে নির্বাচন করবেন বিএনপির নবী উল্লাহ নবী এবং জামায়াতের মোহাম্মদ কামাল হোসাইন। দুইজনই যার যার দলের শক্ত প্রার্থী। সম্ভাবনা আছে এনসিপি এইখানে নমিনেশন দেবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে। এখানে তীব্র সম্ভাবনা হচ্ছে হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকা-৫ থেকে হেরে যাবেন। ঢাকা-৫ এ জামায়াত ১৫-২০ বছর ধরে তার সমর্থকদের মাইগ্রেট করাচ্ছে, সাথে আছে বিপুল কওমী মাদ্রাসার ভোট। বিএনপি এই আসন শেষবার জিতেছে ২০০১ সালে। অতএব, এই আসনে জামায়াতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জেতাটা এনসিপির ক্যান্ডিডেটের জন্য ডিফিকাল্ট হবে। বিএনপি-এনসিপি জোট হলে হয়তো এই আসনে হাসনাতের জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু এই আসনে সত্যিকার অর্থে দাঁড়ানো উচিত ছিল আলী আহসান জোনায়েদের। জামায়াত, কওমী এবং সুইং, সব ধরনের ভোট আলী আহসান জোনায়েদ এখান থেকে পেতে পারতেন যাত্রাবাড়ীর রাজপথের জুলাই যোদ্ধা হিসেবে। শেষমেশ দেখা যাবে, বিএনপি বা জামায়াতের দুজনের একজন, মোস্ট লাইকলি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এখানেও ভোটে জিতে আসবেন।
 
এরপর আসি, ঢাকা-১৭ আসন নিয়ে। ঢাকা-১৭ তে এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন কে এটা এখনো স্পষ্ট না। বিএনপি টেক্কা মেরেছে আন্দালিব রহমান পার্থকে দাড় করিয়ে দিয়ে, জামায়াতের ডা. খালিদুজ্জামানও সেখানে ভালই প্রচারনা করছেন। এই আসনের যেখানেই যাবেন এই দুই প্রার্থীর নাম পাওয়া যাবে। ঢাকা-১৭ তে এনসিপির সবচে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হতে পারতেন তাসনিম জারা, কিন্তু বিএনপির সাথে নেগোসিয়েশানেই হয়তো তিনি এই আসনে দাড়ান নি। ঢাকা-১৭ সম্ভবত আন্দালিব রহমান পার্থর জয়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছে।
 
ঢাকা-১১ তে নাহিদ ইসলামের নামগন্ধও নেই এখনো, এম এ কাইয়ুম এবং জামায়াতের আতিকুর রহমানের লড়াইয়ে শেষমেশ কে জিততে পারেন এখানে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই আসন কাইয়ুম সাহেবের হোমগ্রাউন্ড, তার জয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। নাহিদ ইসলাম জিততে না পারলে দলের ভেতর তার আহবায়ক পদে থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
 
ঢাকা-১৮ আসনে নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী এনসিপির প্রার্থী, পক্ষান্তরে বিএনপির প্রার্থী মীর স্নিগ্ধ। জামায়াতের আশরাফুল হক আছেন এই আসনে। এখন পর্যন্ত আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে অমীমাংসিত আসনগুলোর একটা হল ঢাকা-১৮। খুব সম্ভবত, এই আসনটা এনসিপি হাসনাত আব্দুল্লাহকে দিলে জিতে নিতে পারতো। নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী চায়ের কাপে ঝড় তুলতে জানলেও ভোটের মাঠে এখনো জয়ের সম্ভাবনা জাগানোর মত কিছু দেখাতে পারেন নি।
বেশ কয়েকটা আসন সম্পর্কে নিজের চোখে দেখা, বন্ধুবান্ধবের সাথে আলাপ আলোচনা করে যা মনে হল তা লিখলাম।
 
ঢাকায় একটা সময় জামায়াতের কোন ভোট ছিল না, এমনকি ২০১৮ সালেও না। এমনকি ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে ফেয়ার ইলেকশান হলেও বিএনপি ল্যান্ডস্লাইড জয় পেতো বেশিরভাগ আসনে। এখন বাস্তবতা ভিন্ন। ফেইসবুক-ইউটিউবে বিএনপির ইমেজ শুন্যের নিচে চলে গেছে গত এক বছরে, বিপরীতে জামায়াত শুরু থেকেই নির্বাচন নিয়ে ছিল সিরিয়াস। ওদিকে ফেইসবুকে হাইপে থাকা এনসিপির নির্বাচন নিয়ে আদৌ পরিকল্পনা কি তা জানেন না তাদের অনেক কেন্দ্রীয় নেতারাও। সব মিলিয়ে, নির্বাচনে তাদের ভালো করার সম্ভাবনা সীমিত।
 
তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী অনেকে মনে করছেন, ইলেকশান হবে নেগোসিয়েশানের মাধ্যমে এবং যেসব সিটে মেরিকা কাউকে জেতাতে চাইবে, ঐসব সিটে সেই প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। মানে আরেকটা রিগড ইলেকশানের আশঙ্কা করছেন তারা।
 
বাস্তবে, বিএনপি এবং জামায়াত যেভাবে পরস্পরের মুখোমুখি দাড়িয়েছে, তাতে মেরিকা চাইলেই কাউকে জেতাবে এবং অন্যপক্ষ তা মেনে নেবে, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আমি খুব বেশি দেখি না।
এনসিপির বয়স এক বছর হতেই নির্বাচনটা হবে। এই নির্বাচনে জেতাটা তাদের জন্য ডু অর ডাই টাইপ কিছু না। কিন্তু প্রার্থী ও নেতৃত্ব তুলে আনার ব্যাপারে, পার্টি লাইন হিসেবে দাড়ানোর ব্যাপারে এবং দলকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে তাদের কৌশল কতটা প্রশংসিত হয়, তা বোঝা যাবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে। সে জায়গাতে এখনো দলটি এভারেজ পারফরম্যান্স করতে পেরেছে বলেও মনে হচ্ছে না, বরঞ্চ পুরোপুরি নির্ভর করছে বড় দুই দলের কোন একটার জোটসঙ্গী হওয়ার ওপরে। ক্ষমতা না জনতা স্লোগান দেয়া দলটা বাস্তবে এমন পাওয়ার করিডোর নির্ভর হয়ে পড়া একপ্রকার স্ববিরোধী অবস্থান বলেই মনে করছেন অনেকে, যারা ভোট দিতে এনসিপির প্রার্থী খুজতেন নিজ আসনে।