জাহানারা আলম ও রুমানা আহমেদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের দল থেকে বাদ দেওয়া, ড্রেসিংরুমে ‘একনায়কতন্ত্র’ চালানো এবং জুনিয়র খেলোয়াড়দের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক সব গুরুতর অভিযোগ জোরালোভাবে খণ্ডন করেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, যে সময়ে সিনিয়রদের বাদ দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি নির্বাচক প্যানেলেরই অংশ ছিলেন না। উল্টো সেসময় টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে একজন অপরিপক্ক অধিনায়ক হিসেবে দেখত।
নারী ক্রিকেটাঙ্গনে চলমান অস্থিরতার মধ্যে জ্যোতিই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’ বিতর্ক নিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। সিনিয়রদের বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে জ্যোতি বলেন, ‘আমি এই কথা অনেকদিন ধরে শুনছি। আচ্ছা, সিন্ডিকেটটা কী? আমি কাকে সরাবো? আমি কি নির্বাচক? আমি ২০২১ সালে অধিনায়ক হওয়ার পর ২০২৩ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে নির্বাচক প্যানেলেই যুক্ত ছিলাম না। রুমানা আপু, জাহানারা আপু, সালমা আপুরা যখন বাদ পড়েন, তখন নির্বাচক প্যানেলের বৈঠকে রাখা হতো না আমাকে। তাহলে তারা কেন আমাকে দোষারোপ করছে? আমার প্রতি এত রাগ বা হিংসা কেন?’
জ্যোতি সেসময়ের একটি ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ‘একবার নিউজিল্যান্ডে কোচ হাসান তিলকরত্নে যখন রুমানা আপু, সালমা আপুদের বিশ্রামে রাখলেন, সালমা আপু আমাকে বললেন, ‘তুই আমাদের বসিয়ে দিয়েছিস’। আমি বললাম, ‘সালমা আপু, বিশ্বাস করুন, আমি কিছুই জানি না।’ তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তাহলে তুই কি শুধু টস করার জন্য অধিনায়ক?’ আমাকে এমন কথাও শুনতে হয়েছে।’
জুনিয়র ক্রিকেটার মুর্শিদাকে চড় মারার অভিযোগ প্রসঙ্গে জ্যোতি এটিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘ভুল অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের এনসিএলে আমি তো ওর দলেই খেলিনি, আমরা ভিন্ন দলে ছিলাম। আমি তার সঙ্গে খুব বেশি কথাও বলিনি। কে দেখেছে আমি তাকে চড় মেরেছি? তার কাছে কী প্রমাণ আছে?’
মাঠে মারুফা আক্তারকে ধমক দিয়ে কাঁদানোর যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক। জ্যোতি জানান, ‘শ্রীলঙ্কায় ওই ম্যাচে সে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি ক্যাচ ছাড়ে। তার বোলিং কোটা শেষ ছিল। আমি চিন্তায় ছিলাম তার বোলিংয়ের হাতটি (ডান হাত) আবার ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয় কিনা। তাই আমি কিপিং পজিশন থেকে চিৎকার করে বলি, ‘এই মারুফা, তুই বের হয়ে যা।’ আমার ওই চিৎকার হয়তো তাকে কষ্ট দিয়েছিল।’
তবে জ্যোতির দাবি, মারুফা সেই কারণে কাঁদেননি। ‘খেলা শেষে আমি আমার ছোট বোনের মতো ওকে জড়িয়ে ধরি। সে আমাকে বলে, ‘আপু, আমি ওই কারণে কাঁদছি না। আমি কাঁদছি কারণ আমি বারবার ক্যাচ মিস করছি।’ আমি তাকে বলেছিলাম, আমি তার ওপর বিশ্বাস হারাইনি।’
মাঠে গালিগালাজ করার অভিযোগের জবাবে অধিনায়ক বলেন, ‘আমি কি মানসিকভাবে অসুস্থ? আমি এমন পরিবার থেকে আসিনি। স্টাম্প মাইকের কাছে থাকায় আমার গলা বেশি শোনা যায়। বড়জোর একটা মিসফিল্ডের পর বলতে পারি ‘কী করছিস’, কিন্তু গালিগালাজ করি না।’