Image description
 

বাংলাদেশে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার পর থেকেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে গেমিং ও ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি। বর্তমানে গেমিং শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। গেমিং ও ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রযুক্তির প্রসার, মোবাইল গেমিংয়ের জনপ্রিয়তা এবং দেশীয় গেম ডেভেলপারদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা এই খাতকে সম্ভাবনাময় করে তুলছে।

 

তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ এখন মোবাইল গেমিংয়ের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী। একটা সময় মোবাইল গেমিং শুধু অবসর সময় কাটানো ও বিনোদনের মাধ্যম ছিল। বর্তমানে অনেকেই এটিকে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির বাজার মূল্য ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মিউজিক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সমন্বিত বাজার থেকেও বেশি।

 

বাংলাদেশে গেমিং কমিউনিটি : দেশে গেমারদের অনেক বড় কমিউনিটি রয়েছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এসব কমিউনিটি তৈরির প্রধান মাধ্যম। এমন অনেক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে, যেখানে সব গেমার নিজেদের ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন। আর নির্দিষ্ট গেমসভেদেও রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। এসব গ্রুপ থেকে অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গেমসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ‘ক্ল্যান’। এসব ‘ক্ল্যান’ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও নিয়মিত বিভিন্ন গেমস প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে। যার বেশিরভাগ আয়োজনই হচ্ছে অনলাইনে। এ ছাড়া এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গেমারদের নিয়োগ দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে গেমারদের বেতনও দেয়।

 

গেমিং ও ই-স্পোর্টসের ক্ষেত্রগুলো : গেমিং ও ই-স্পোর্টসের অনেকগুলো ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে সব ধরনের মানুষ কাজ করতে পারে। নিচে এমন কিছু ক্ষেত্রের বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

 

গেম তৈরি : গেমিং ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় একটি অংশ হলো গেমস তৈরি করা। গেমিংশিল্পের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে গেম ডেভেলপারদের চাহিদা। এ ছাড়া গেমসের গ্রাফিকসের কাজ, প্রোগ্রামিং, গেম ডিজাইনিং, গেম স্টোরি রাইটিংসহ নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

 

টুর্নামেন্টের আয়োজন : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরের বিভিন্ন সময় বিশাল প্রাইজপুলের টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। কোনো দক্ষ খেলোয়াড় এসব টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে প্রাইজমানি জিততে পারেন। তা ছাড়া এ ধরনের বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে আয়োজক হিসেবে ভালো আয়ের সুযোগ থাকে। এ ছাড়া টুর্নামেন্টের ক্র-মেম্বার হিসেবে কাজ করেও উপার্জন করা সম্ভব। টুর্নামেন্টে সক্রিয়ভাবে অংশ না নিয়েও টিম ম্যানেজার, কোচ, গেম এনালিস্ট, কমেন্টেটর হিসেবেও এসব প্রতিযোগিতা থেকে আয়ের সুযোগ থাকে।

 

কনটেন্ট তৈরি : বিভিন্ন গেমসের লাইভ স্ট্রিমিং বর্তমান সময়ে অনেক জনপ্রিয়। অনেক দক্ষ খেলোয়াড় তাদের খেলার ভিডিও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। ফলে নতুন খেলোয়াড় বা যারা এখনো পুরোপুরি দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি, তারা সেসব ভিডিও দেখে নিজেদের স্কিল বাড়াতে পারে। গেমিংয়ের এসব ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইচ স্ট্রিম করে অনেকেই নিজেদের ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। ফলে তাদের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় ব্র্যান্ড ডিল থেকে ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বেশ ভালো আয় করতে পারছেন।

 

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা : বাংলাদেশে প্রযুক্তির যে উত্থান হয়েছে, তাতে গেমিংশিল্প বিকশিত হলে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিমেশন, সফটওয়্যার ডিজাইনসহ বিভিন্ন খাতও সমানভাবে উন্নত হবে বলে অনেকেরই বিশ্বাস। দেশেই বিভিন্ন গেম তৈরি করে তা বিদেশে বিক্রি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের দেশ যেখানে প্রধানত পোশাক কারখানা ও কৃষি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি দেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে পারে। বাংলাদেশে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ, গেমিং ব্যবসার জটিলতা নিরসন এবং পেমেন্ট-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব গেমিংশিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে।