
হামজা চৌধুরীর অভিষেক ম্যাচে প্রথমার্ধে দারুন ফুটবল খেলেছিল বাংলাদেশ। সুযোগও এসেছিল অনেক। যার বেশিরভাগের নেপথ্যে ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা এই ফুটবলার। সেগুলোকে আফসোসে রূপ দিয়ে ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ। শিলংয়ের জহুরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুই দলের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে । ‘সি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ খেলতে নভেম্বরে ঢাকায় আসবে ভারত।
পাহাড়ি শহর শিলংয়ের রাস্তায় ট্রাফিক লেগেই থাকে। অতিমাত্রায় ট্রাফিক থাকায় এখানকার মানুষ গাড়ীর চেয়ে পায়ে হেটে চলাচলে বেশি অভস্ত। একারণেই ম্যাচের শুরুতে স্টেডিয়ামে সেভাবে দর্শকের দেখা মেলেনি। তবে সময় যতো গড়িয়েছে ১৫ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম রূপ নিয়েছে নীল সমুদ্রে। নীল সমুদ্রের ঢেউ শুরুতেই স্তদ্ধ করে দেয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
অভিষেক ম্যাচে সত্যিকারের নেতার মতোই খেলেছেন হামজা। নিচে ওপরে উঠেছেন সতীর্থদের প্রয়োজন অনুযায়ী। প্রতিপক্ষের পাস ধরেছেন, বল ক্লিয়ার করেছেন এবং আক্রমণেও উঠেছেন। অভিষেক ম্যাচ বিচারে এখনই বলে দেওয়া যায়, বাংলাদেশ দলে মানিয়ে নেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন হামজা। তার বাড়ানো বলেই কিক অফের পরেই কী অবিশ্বাস্যভাবেই তা নষ্ট করেন শাহরিয়ার ইমন। কিক অফের শট নিলেন হামজার চৌধুরীর উদ্দেশ্যে। তিনি বল রিসিভ করেই লং পাস বাড়ালেন ডান দিকে। মজিবুর রহমান জনি যদিও প্রস্তুতি ছিলেন না, তারপর ভারতীয় গোলরক্ষক ভিশাল কাইথ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দিলেন জনির পায়েই। কিন্তু ফাঁকা পোস্টে জনি দূরূহ কোণ থেকে বাইরের জাল কাঁপালেন তাড়াহুড়ো করে শট নিয়ে! এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে গতকাল ভারতের বিপক্ষে শুরু থেকে একাধিক সুযোগ পায় বাংলাদেশ। জনির ওই মিস জলেও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে থাকে বাংলাদেশ।
দশম মিনিটে শাকিল আহাদ তপুর ক্রসে ইমনের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। একটু পর রাকিব ও জনির মধ্যে থেকে কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন এক ডিফেন্ডার। কর্নার নিতে আসেন হামজা। গ্যালারি থেকে এবার শুরু হয় দুয়ো! ম্যাচের ১৮তম মিনিটে শেখ মোরসালিনের ক্রস ইমন ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। পোস্টে বল থাকলে খুলতে পারত ম্যাচের ডেডলক। এদিন নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে বাইরে রেখেই একাদশ সাজান হাভিয়ের কাবরেরা। জামালের পরিবর্তে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠে তপুর কাধে। তবে তপুও বেশিক্ষণ খেলতে পারেননি। হ্যামস্ট্রিং চোটে ম্যাচের ১৯তম মিনিটেই মাঠ ছাড়েন এই ডিফেন্ডার। তার বদলি নামেন রহমত মিয়া।
সুনীল ছেত্রীকে কড়া পাহারায় রাখার কাজটুকু শুরু থেকে দারুণভাবে করছিলেন কাজী তারিক রায়হান। তাতে পোস্টে মিতুলকে তেমন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল না। ২৮তম মিনিটে লিস্টন কোলাসোর কাছের পোস্টে নেওয়া শট অনায়াসে গ্লাভসে জমান তিনি। ৩১তম মিনিটে প্রথম কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন মিতুল। বাম দিক থেকে লিস্টন কোলাসোর ক্রসে উদান্তা সিংয়ের হেড পাসে বল যায় ফারুক চৌধুরীর পায়ে। ছোট বক্সের ভেতর থেকে তার শট ঝাঁপিয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় আটকে সে পরীক্ষায় উতরে যান মিতুল। এর ঠিক দশ মিনিটে পর আবারও জনি নষ্ট করেন সুবর্ণ সুযোগ। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলে ইমনের হেড পাস করলে বল যায় জনির কাছে। এক ছুটে বক্সে ঢুকেও পড়েন তিনি। তখন সামনে কেবল ভারত গোলরক্ষক। অথচ না করলেন চিপ, না নিলেন শট, কাইথ ক্লিয়ার করলেন অনায়াসে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই নিজেদের গুছিয়ে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ বাড়ায় ভারত। নিশ্চুপ গ্যালারিও জেগে উঠে। ম্যাচের ৬১তম মিনিটে দলে জোড়া পরিবর্তন আনেন হাভিয়ের কাবরেরা। জনি ও শাহারিয়ার ইমনকে উঠিয়ে চন্দন রায় ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে মাঠে নামান এই স্প্যানিশ কোচ। তবে দুই পরিবর্তনে বাংলাদেশের খেলায় পরিবর্তন আসেনি। উল্টো দর্শকের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে লিস্টন কোলাচো, উদান্ত সিং ও সুনীল ছেত্রী বার বার পরীক্ষায় ফেলেন মিতুল মারমাকে। বাধ্য হয়েই মাঝমাঠ থেকে নিচে নেমে খেলতে দেখা যায় হামজা চৌধুরীকে। ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে কাউন্ট্যার এট্যাক থেকে রাকিবের ক্রস ফাহিম পা ছোয়ালেও তা বাইরে চয়ে যায়।
৭৯তম মিনিটে আবারো জোড়া পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। মোরসালিন ও হৃদয়ের যায়গায় এক সঙ্গে দুই সোহেল মাঠে নামেন। পাঁচ পরিবর্তনে খেলার কৌশলেও বদল আনেন কাবরেরা। হামজার পজিশনে সোহেলকে খেলিয়ে তাকে উপরে খেলার সুযোগ করে দেন বাংলাদেশের কোচ। ম্যাচের ৮৯তম মিনিটে রহমতের থ্রো ফাহিমের জোড়ালে শট ডানদিকে ঝাপিয়ে পরে রক্ষা করেন ভারত গোলরক্ষক। যোগকরা সময়ের রাকিব শেষ সুযোগ নষ্ট করলে আফসোসের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। আগামী ১০ই জুন ঢাকায় গ্রুপের আরেক ম্যাচে সিঙ্গাপুরের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ।