Image description

সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদাসহ ১৮ ফুটবলার পিটার বাটলারের অনুশীলন বয়কট করে চলছেন। তাদের বিকল্প তৈরি করতেই বাটলার জুনিয়রদের নিয়ে কাজ করছেন। একদিকে তদন্ত করছে ফেডারেশনের বিশেষ কমিটি, অন্যদিকে তারা আবার বাটলারকে দিয়ে অনুশীলন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। বাটলারও নতুন নতুন খেলোয়াড় অনুশীলনে আনছেন, যা ফেডারেশনের সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। মে মাসে রয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। ওই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জুনিয়র দল প্রস্তুত করার কথা বললেও, যদি সাবিনারা শেষ পর্যন্ত বয়কটেই থাকেন তাহলে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে জুনিয়র দলই আরব আমিরাতে পাঠানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা করছে বাফুফে। 
মাঠে খেলেন ফুটবলাররা। তাদের পারফর্ম্যান্সেই চ্যাম্পিয়ন হয় দল। কোচেরও অবশ্যই অবদান থাকে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২৩ জনের স্কোয়াডে ১৬ জনই কোচের বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কোচ নিয়ে খেলোয়াড়দের বড় অংশের বিরোধ বাফুফের আগেই জানা। এরপরও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা না করেই বাফুফে বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের চুক্তি ১৫ই জানুয়ারি দুই বছরের চুক্তি করে ফেডারেশন। অথচ যারা মাঠে খেলে চ্যাম্পিয়ন  করিয়েছেন, সেই খেলোয়াড়দের চুক্তি অক্টোবরে শেষ হলেও এখনো নবায়ন করা হয়নি। দেড় কোটি টাকা বোনাস ঘোষণার কথাও যেন ভুলেই গেছেন ফেডারেশনের কর্তারা! উল্টো মেয়েদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। পেশাদার ও জাতীয় ফুটবলার হিসেবে কোচ নিয়ে করা ফুটবলারদের দাবি ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। মেয়েদের অভিযোগ পুরোপুরিভাবে গুরুত্বপূর্ণও মনে করছেন না অনেকে। কারণ প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে মডেলিং বা টিকটক, ফিটনেস কমে যাওয়া-কোচ এইসব বললে সেটা বডি শেমিং হয় না। খেলোয়াড়দের অনেক সময় কোচ মজা করেও কিছু বলতে পারেন, সেটাকে সিরিয়াসলি নেয়ার যৌক্তিকতাও নেই। 

 

তবে সামাজিকমাধ্যমে এখন আন্দোলনকারী মেয়েদের ব্যক্তিগত পর্যায়ের সমালোচনা করা হচ্ছে। যা অনেকটাই সাইবার বুলিংয়ের শামিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সুমাইয়াতো জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিনিয়ত হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন তিনি। বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করলেও বিদ্রোহ করা মেয়েরা বাফুফে ভবনেই রয়েছেন। সামাজিকমাধ্যমে প্রতিনিয়ত সমালোচনা ও হেয় হলেও বাফুফে যেন তাদের পাশে নেই। মানসিক সান্ত্বনা বা কোনো নির্দেশনা দেননি বাফুফের কোনো কর্মকর্তা। এই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের প্রতি বাফুফের কর্মকর্তারা যে উদাসহীন, তা নতুন কোনো ঘটনা না। এর আগেও সাফ জিতেয়ে ফেরার পর প্রায় এক বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সাবিনারা। টাকার অভাবে এই মেয়েদের খেলতে পাঠানো হয়নি অলিম্পিক বাছাই পর্বে। এখানেই শেষ না, বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনেও যেতে হয়েছিল সাবিনা-কৃষ্ণাদের। বরাবরই তারা অবহেলার শিকার হয়েছেন। এসব নিয়ে যখনই কথা বলেছেন, তখনই রোষানলে পড়েছেন বাফুফের এক কর্তার। এবারো তাদের কথার কোনো মূল্য দেয়া হয়নি। সাফ থেকেই বাটলারের সঙ্গে প্রকাশ্যে বির্তকে জড়ান ফুটবলাররা। মিডিয়ার কোচের বিপক্ষে কথা বলে সাবিনারা যেমন কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন। কোচও করেছেন একই কাজ। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেলেও বাফুফের তরফ থেকে এর সমাধানের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এমনি দ্বিতীয় দফা কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সময়েও মেয়েদের সঙ্গে কথা বলারও কোনো প্রয়োজন মনে করেনি বাফুফে। বিপত্তিটা বেধেছে এখানেই। গত বৃহস্পতিবার রাতে গঠিত বিশেষ কমিটি নারী ফুটবলারের অভিযোগ শুনেছেন। ১৮ জনই বাটলারের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে। গতকাল সন্ধ্যায় আবারো বসেছিল বিশেষ কমিটি। এদিন তারা সাক্ষ্য নিয়েছে বাটলারসহ কোচিং স্টাফদের। আজ বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফেডারেশনে আসার কথা রয়েছে। আগামীকাল বিশেষ কমিটির সভাপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। যতটুকু জানা গেছে, তাতে মেয়েদের দোষের পাল্লাই বেশি দেখছেন বিশেষ কমিটি। আর সেটা হলে এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভিন, মারিয়া মান্দা, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন নীলা ও শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্যারিয়ার। ক্ষোভে এদের সঙ্গে অবসরে চলে যেতে পারেন আরও কয়েকজন। আর সেটা হলে নতুন এক দল নিয়েই ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নতুন দল নিয়ে আরব আমিরাত যাবে বাংলাদেশ।