তখন ইউনাইটেডও রীতিমতো হাল ছেড়ে দিয়েছিল। ম্যানুয়েল উগারতের আত্মঘাতী গোলে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পিছিয়ে ছিল ১-০ ব্যবধানে। পরিস্থিতিটা এমন কেউ যে একজন নায়ক বনবেন, একটা গোল করে নিদেনপক্ষে একটা পয়েন্ট এনে দেবেন, তেমন পরিস্থিতিটা খুবই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল।
তবে একজন অন্তত হারাননি। তিনি আমাদ দিয়ালো ত্রায়োরে। বিশ্বাস যার জীবনের ধ্রুবতারা, হাল না ছেড়ে দেওয়া যার চরিত্রেরই একটা অংশ, তিনি কেন হাল ছাড়বেন? মাঠের খেলাতে জবাবটা দিলেন। ৮২ মিনিটেও যারা ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল, সে ইউনাইটেডকে এনে দিলেন ৩-১ গোলের দারুণ জয়। তিন গোলের তিনটিই করলেন তিনি। বনে গেলেন ইউনাইটেডের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, যিনি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মাটিতে হ্যাটট্রিক করেছেন।
ম্যাচ শেষে তিনি বললেন, ‘আমরা বিশ্বাস হারাইনি, ফুটবলে আপনাকে বিশ্বাসটা করে যেতেই হবে।’ ম্যাচের প্রসঙ্গে কথাগুলো বললেও আমাদ চাইলে নিজেকে নিয়েও এই একই কথা বলতে পারতেন।
এই তো মাস তিনেক আগের কথা। এরিক টেন হাগের ইউনাইটেডে তিনি মোটাদাগে ব্রাত্য। সুযোগ পাচ্ছেন বটে, কিন্তু সেসবও খুবই অপ্রতুল। চুক্তিতে বাকি ছিল আর আধ মৌসুম, যা শেষ হলে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে নতুন কোনো ক্লাব ধরতে হতো, যার জন্য হয়তো সাইনিং বোনাসও পেতেন না কানাকড়ি। ভবিষ্যৎটা তখন বেশ বিবর্ণই মনে হচ্ছিল তার। ঠিক সে সময়েও আশা হারাননি তিনি।
মাস তিনেক পরে সেই আমাদ দিয়ালোই এখন ইউনাইটেডের তারকা। দলকে দারুণ সব জয় এনে দিয়েছেন। তার হাতে এখন সাড়ে পাঁচ বছরের একটা চুক্তিও আছে। এমন সব কিছু হয়েছে, তার পেছনে তো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে ওই আশাই। এই বিশ্বাসই তো মানুষের সব। তীব্র যন্ত্রণার দিনটাও মুখ বুঝে সহ্য করে যায় মানুষ, তা তো ওই আশা ওই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই।
মাঠের ফুটবলে এমন সব কিছু বাস্তব হয়েছে গত অক্টোবরে টেন হাগের বিদায়ের পরে। রুড ভ্যান নিস্টেলরয় আর নতুন কোচ রুবেন আমোরির অধীনে তিনি টানা ১২ ম্যাচে শুরু করলেন একাদশে। তিনি যে দারুণ খেলছেন, তার ছাপ পড়েছে পরিসংখ্যানে, ৫ টি করে গোল করেছেন ও করিয়েছেন। গত রাতের তিন গোলের আগের দুই গোল আবার এসেছে ম্যানচেস্টার সিটি আর লিভারপুলের বিপক্ষে। নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে তার চেয়ে ভালো গোল-অ্যাসিস্ট আছে কেবল মোহামেদ সালাহ (২০) আর আলেক্সান্দার ইসাকের (১৭)। বুঝুন তাহলে কেমন ভালো খেলছেন তিনি!
তবে ইউনাইটেডের ম্যাচে তার উপস্থিতি তার গোল-অ্যাসিস্টের দিকে না তাকালেও মেলে। ইনসাইড ফরোয়ার্ড হোক কিংবা উইংব্যাক, যে ভূমিকাতেই তাকে খেলানো হোক না কেন, মাঠের সবচেয়ে পরিশ্রমী ফুটবলারটা থাকেন এই আমাদ দিয়ালোই। গোল করা আর করানো তো আছেই!
তার মুন্সিয়ানা বৃহস্পতিবার রাতে আবারও দেখিয়েছেন আমাদ। দারুণ এক গোলে সমতা ফিরিয়েছেন। এরপর যোগ করা সময়ে তার করা দুই গোল ইউনাইটেডকে এনে দিয়েছে একটা দারুণ জয়।
তবে এমন পারফর্ম্যান্সের পরও কোচ রুবেন আমোরির কাছ থেকে তিনি প্রশংসা পেলেন সামান্যই। ‘আমি তাকে কিচ্ছু বলিনি। তাকে আমি বলব তাকে এখন বিশ্রাম নিতে, ভালো খাবার খেয়ে রোববারের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত থাকতে, তখন আবারও তাকে আমার দরকার পড়বে’ – পর্তুগিজ কোচ বললেন।
প্রয়োজনে এগিয়ে আসছেন, ধন্যবাদের ধারও ধারছেন না– এমন দৃশ্য তো রূপালি পর্দায় সুপারহিরোদের বেলাতে দেখা যায়। শেষ তিন মাসে আমাদ দিয়ালো ত্রায়োরে তো ইউনাইটেডের সুপারহিরোই বনে গেছেন!
নিজের ভবিষ্যৎ ফিকে দেখছিলেন একটা সময়, সেই থেকে এখন ইউনাইটেডের সুপার হিরো তিনি– এমন ১৮০ ডিগ্রিই উলটে গেছে আমাদ দিয়ালোর জীবন। আর এ সবকিছুর পেছনে যে কাজ করেছে তার বিশ্বাস, তা আর আলাদা করে বলে না দিলেও হয়।