
আইপিএলের ১৮ বছরের ইতিহাসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) প্রথম শিরোপা বলে কথা। উপলক্ষ্য রাঙ্গাতে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ‘ভিক্টোরি প্যারেড’ উৎসব। সেই উৎসব শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে ‘বেঙ্গালুরু ট্রাজেডিতে’। হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণহানী ঘটেছে ১১ জনের, আহত হয়েছেন আরও ৩৩ জন।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এম সিদ্দারামাইয়া হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। যদিও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আহতের সংখ্যা ৫০–এর বেশি।
আহমেদাবাদে মঙ্গলবারের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা জেতে বেঙ্গালুরু। পরের দিনই বেঙ্গালুরু ফিরে বিধান সৌধ থেকে ‘ভিক্টরি প্যারেড’ করতে করতেই নিজেদের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পৌঁছান কোহলি-পতিদার-ক্রুনালরা। স্টেডিয়ামে ছিল না তিল ধারণের ঠাই।
এদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন আট-থেকে আশি- সব স্তরের মানুষ। উন্মাদনা লাগাম ছাড়িয়ে যাওয়াতেই বেঁধেছে বিপত্তি। ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত জনসমাগম দেখে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মালিকপক্ষ নাকি আদেশ অমান্য করেই এই প্যারেড করে। পরে পুলিশ এতে বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়। সেই হুড়োহুড়িতেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় সর্বমহল থেকে কর্ণাটক সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গাফিলতি আছে রাজ্য সরকারের। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার মদন লাল মনে করেন, এর দায় নিতে হবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মালিকপক্ষক
ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মদন লালের অভিযোগ দুটি—কয়েক দিন অপেক্ষা না করে ট্রফি জয়ের পরদিনই এত বড় আয়োজন করা এবং পদদলিত হয়ে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরও স্টেডিয়ামের ভেতর উদ্যাপন চালিয়ে যাওয়া। নিহতদের পক্ষ থেকে সরকার ও আরসিবির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি রুপির মামলা করারও পরামর্শ দিয়েছেন মদন লাল।
বিজয় উৎসবের আয়োজনের ক্ষেত্রে যে বড়সড় খামতি ছিল বলে সরাসরি অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। বোর্ড সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া বলেছেন, 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল। এটাই জনপ্রিয়তার নেতিবাচক দিক। ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত মানুষ। আয়োজকদের আরও ভালোভাবে পুরো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।'
সরাসরি আরসিবি ম্যানেজমেন্ট বা কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ঘাড়ে বন্দুক না চাপালেও বোর্ডের সচিব আরও বলেছেন, 'যখন কেউ এরকম মাত্রার বিজয় উৎসবের আয়োজন করেন, তখন উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। করতে হয় সুরক্ষা সংক্রান্ত উপযুক্ত পদক্ষেপ। কোথাও তো কোনও গাফিলতি থেকে গিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'অতীতেও আইপিএল জয়ের পরে সেলিব্রেশন হয়েছে। যেমন গত বছর কেকেআর জেতার পরে কলকাতায় (বিজয় মিছিল) হয়েছিল (২০২৪ সালে সেরকম কিছু না হলেও ২০১২ সালে কেকেআর আইপিএল জয়ের পরে বিজয় মিছিল হয়েছিল)। কিন্তু সেখানে কিছু হয়নি। আমরা যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, তখনও সবকিছু সুরক্ষিতভাবে হয়েছিল। মুম্বইয়ে জনসমুদ্র নেমে এসেছিল। কিন্তু কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় হতবাক বেঙ্গালুরু তারকা বিরাট কোহলি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বলার মতো অবস্থা নেই। খুবই ভয় পেয়েছি।’
কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার হৃদয় আজ বেদনার্ত। সবার শান্তি ও শক্তি কামনা করছি।’
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, 'বেঙ্গালুরুতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এই শোকের মুহূর্তে মৃতদের পরিজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।'