তারা দুজনই অধ্যাপক। নামও এক, গোলাম রব্বানী। সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে নিজ দলের মনোনয়নও পেয়েছেন দুজন। একজন বিএনপি থেকে, আরেকজন জামায়াতে ইসলামী থেকে। নাম এবং পদবি মিলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। ভোটারদের ভাষ্য, নির্বাচনে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতে ইসলামী দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রংপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। অপরদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। উভয়েই নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এসএম ফখর উজ-জামান জাহাঙ্গীর। আসনটি এক সময়ে জাতীয় পার্টির শক্ত দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সে অবস্থা এখন আর নেই। ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার জোয়ারে এবার কোণঠাসা লাঙ্গল প্রতীক।
উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার ও মোড়ের চায়ের টেবিল থেকে রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গনে দুই গোলাম রব্বানীকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা চলছে। ব্যক্তিগত ইমেজ ও দলের সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষায় কে শেষ হাসি হাসবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এটি নিয়ে দ্বিমত থাকলেও সবাই মোটামুটি একমত, দুই গোলাম রব্বানীর মধ্যেই মূল লড়াই হবে। লাঙ্গলের প্রার্থীও আলোচনায় এসেছেন। তবে নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী এবার সুবিধা করতে পারবেন না, সে ব্যাপারে মোটামুটি একমত সবাই।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রাজারাম গ্রামের মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘এবার যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব; যিনি গণমানুষের পক্ষে সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবেন।’
লতিবপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার শোনোসো (শুনছি), দুই গোলাম রব্বানী দাঁড়াইছে। কাক ভোট দিম। সেইটা ভাবি পাওছো না। যাক ভালো নাগবে, তাকে ভোট দিম।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৯ জন।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে ১১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন– এবি পার্টির আব্দুল বাসেত মারজান, বাসদের মমিনুল ইসলাম, সিপিবির আবু হেলাল, নাগরিক ঐক্যের মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মো. গোলজার হোসেন, স্বতন্ত্র খন্দকার মুকিত আল মাহমুদ, খেলাফতে মজলিসের শায়খুল হাদিস মুফতি আনোয়ার হুসাইন কাসেমী ও বাসদের বিদ্রোহী একজন।
জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, মানুষ এখন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পারছে। দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারের দুঃশাসনে মানুষ জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। এসব মানুষের পাশে থেকে ইনসাফভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে, তাদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যেন কোনো বিশেষ দলের হয়ে কাজ না করে। ভোটাররা যেন নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, একটি দল মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা পরকালের ভয় দেখিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে। মানুষ বুঝতে পারছে, এসব ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভয়-বাধাহীন ও প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচন হলে তাঁর জয় কেউ রুখতে পারবে না।
জাতীয় পার্টির এসএম ফখর উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, এ এলাকার মানুষের মূল স্লোগান হলো–পল্লিবন্ধু এইচ এম এরশাদের প্রতীক ‘লাঙ্গল’। তিনি যেখানেই যাচ্ছি, অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।