বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য নাম খালেদা জিয়া। গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি আলোকিত করে আছেন। দেশের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন তিনি। দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে পঞ্চম বারের মতো তিনি এ পদে নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া সংগ্রামে অবর্তীন হয়ে যেমন জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন, স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন, তেমনি নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করেছেন, পূর্ণ মেয়াদে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রধান নির্বাহী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও তিনি অর্জন করেন। অলংকৃত করেছেন সংসদ নেতার পদ, পার্লামেন্টারি পার্টির সভাপতি, বিরোধী দলীয় নেতা এবং সার্ক চেয়ারপার্সনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের সম্মানজনক আসন। তেমনি দলীয় প্রধানের উচ্চাসন তাকে জাতীয় রাজনীতিতে একচ্ছত্র ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেয়। দেশের মানুষ তাকে দেশনেত্রী সম্বোধনে সম্মান করে। অবশ্য রাজনৈতিক জীবনের খুব কঠিন সময় এখন পার করছেন খালেদা জিয়া। জানুয়ারি ২০০৭-এ সেনা সমর্থিত জরুরী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া, তার পরিবার ও দলের ওপর যে বিপর্যয় নেমে আসে তার ধারাবাহিকতা এখন আরো ভয়াবহ আকারে চলছে। শেখ হাসিনা সরকারের চরম প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। তাঁকে চিরতরে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ভিত্তিহীন একটি মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করা হয়। দু’বছরের বেশি সময় তিনি নির্মম কারাভোগ করেছেন। করোনা মহামারীর কারণে তাঁর সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত অস্থায়ী জামিন দেয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠাই তার সামনে এখন চ্যালেঞ্জ।
প্রথম জীবন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা
খালেদা জিয়ার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরের একটি সম্ভ্রান্ত, স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারে। পিতা ছিলেন ইস্কান্দার মজুমদার। মাতা ছিলেন বেগম তৈয়বা মজুমদার। এই পরিবারের আদি বাড়ি ছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ফেনী জেলায়। খালেদা জিয়ার ডাক নাম পুতুল। তার বড় দুই বোন এবং ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বোন ও এক ভাই বেঁচে নেই। পিতা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। ভাইবোনের জীবন আনন্দ ও সুখের ছিল। খালেদা জিয়া লেখাপড়া করেন দিনাজপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে- তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকো। ২০১৫সালে কোকোর অকাল মৃত্যু হয়।
২৫মার্চ ১৯৭১ এর রাতে বাঙালি জনগনের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি অতর্কিত হামলা শুরু করে। এই সময়ে মেজর জিয়াউর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামে কর্মরত। সেই রাতেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশরূপে ঘোষণা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি তার অধীনস্থ ও অনুগত বাঙ্গালী সামরিক অফিসার ও জোয়ানদের একত্রিত করেন এবং বলেন, “উই রিভোল্ট (ডব ৎবাড়ষঃ)। আমরা বিদ্রোহ করলাম।” এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একইভাবে দেশের অন্যান্য অংশে কর্মরত আর্মি, ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস), পুলিশ ও আসনার বাহিনীর সদস্যরাও একযোগে বিদ্রোহ করেন। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। জিয়াউর রহমান ছিলেন এক নম্বর রনাঙ্গনের অধিনায়ক ও জেড ফোর্সের প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমানের অংশগ্রহণ করার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামে স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে ছিল এক রকম নিরুপদ্রুপ জীবন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তার সে জীবন পাল্টে যায়। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা দেয়। এ সময় দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দিন কাটিয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। পাকিস্তানি সেনাবহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার আগ পর্যন্ত আত্মগোপনে থেকেছেন চট্টগ্রাম ও ঢাকার আনাচে-কানাচে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে এসেছিলেন নিরাপদ জীবনের লক্ষ্যে। কিন্তু পাকিস্তানীদের শ্যেন দৃষ্টি এড়াতে পারেননি। গ্রেফতার হয়ে বন্দি শিবিরে যাওয়ার পর নতুন শংকা দেখা দেয়। তিনি জানতেন না, তাকে অন্য বন্দিদের মতো মেরে ফেলা হবে বা স্বামীকে তার জীবনে কোন দিন আর দেখতে পাবেন কিনা? প্রায় ৯মাস মুক্তিযুদ্ধ চলার পর অবশেষ ১৬ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ রূপে আবির্ভূত হয়। একাত্তরের বন্দী শিবির থেকে দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। স্বামী জিয়াউর রহমানও মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন থেকে ফেরেন বীরের বেশে। স্বাধীনতা পাওয়ার সেই মুহুর্তটি ছিল খালেদা জিয়ার জীবনে এক বিরল অভিজ্ঞতা। সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তির সেই সাধই ছিল আলাদা। স্বামী সংসার নিয়ে আবার আনন্দের পথচলা। সুখেই কাটতে থাকে তাদের জীবন।
১৯৭২ সালের জুন মাসে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি প্রধান হন। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন এবং তার একদলীয় বাকশাল সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হন আওয়ামীলীগেরই নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ। জিয়াউর রহমান ২৫আগষ্ট ১৯৭৫ সেনাবাহিনী প্রধান হন। একই বছর ৩নভেম্বর বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে গিয়ে দেশে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেন। তারই ইন্ধনে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসের বাসভবনে বন্দী করা হয়। কয়েকদিন বলা যায় দেশ চলে সরকারবিহীন অবস্থায়। এ পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সংগঠিত হয় সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব। তার ধারাবাহিকতায় দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গনমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার লক্ষে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এই লক্ষ্য পূরণে সহায়করূপে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯ দফা বৈপ্লবিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির স্লোগান নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় এ দলের যাত্রা। এরপর ৩ জুন ১৯৭৮ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটে দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন। তার বহু সাফল্যের মধ্যে সবচাইতে বড় সাফল্য ছিল বাংলাদেশের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করা। পচাত্তর পূর্ববর্তী আওয়ামীলীগ ও বাকশাল শাসনামলে বাংলাদেশ মাসের পর মাস যে দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে তিনি দেশকে মুক্ত করেন। সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে চালু করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র।
রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও গনতন্ত্রের সংগ্রাম
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হলেও খালেদা জিয়া লাজুক গৃহবধু রুপে তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে সাংসারিক কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হলেও আড়ালে থাকতেই তিনি ভালবাসতেন। সেই তাকেই একদিন গৃহকোণ থেকে রাজপথে এসে দাড়াতে হয়। সে এক করুন এবং একইসঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। প্রেসিডেন্ট জিয়া দু’দিনের সফরে সাংগঠনিক কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। তিনি অবস্থান করছিলেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। খালেদা জিয়া দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে ছিলেন। সেটি ছিল এক কালো রাত। ১৯৮১ সালের ৩০ মে’র সেই কালো রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর একটি কুচক্রী মহলের হাতে প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়া মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। এই করুন মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া তার প্রেমময়ী স্বামীকে চিরতরে হারালেন। এই মৃত্যু তার মনে গভীর দাগ সৃষ্টি করে। হৃদয়ে সৃষ্টি করে চির তাজা এক ক্ষত ও দুঃখ। তবে এই করুণ মৃত্যু তাকে এনে দেয় প্রবল এক শক্তি এবং সসম্মানে ও সাহসিকতার সঙ্গে বেঁচে থাকার এক অনন্য প্রেরণা এবং প্রত্যয়। জিয়াউর রহমানের অবর্তমানে তার তেজোদীপ্ত নেতৃত্ব থেকে বিএনপি যখন বঞ্চিত হয়েছে, তখন দলের নির্ভরযোগ্য কোনো উত্তরাধিকারী নির্ধারিত ছিল না। ফলে খালেদা জিয়াকে এক রকম বিএনপির নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর দলের নেতা-কর্মী ও দেশের মানুষের প্রবল আগ্রহ ও চাপে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। রাজনীতিতে অভিসিক্ত হয়ে তিনি দলের সকল সারির নেতৃত্বকে সুসংঘবদ্ধ করেন এবং দলকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত করে সর্বসম্মতভাবে দলের প্রধান নির্বাচিত হন। স্বামীর মৃত্যুতে শোকার্ত অবস্থায় খালেদা জিয়া এভাবেই বিএনপির হাল ধরেন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ লাভ করার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। এরপর ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৪ সলের ১০ মে দলীয় নির্বাচনে হন পার্টির প্রথম নির্বাচিত চেয়ারপার্সন।
রাজনীতিতে পদার্পনের পরপরই তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪মার্চ বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন জারি করেন। এরশাদের সামরিক সরকার বিএনপি নেতাদের ঢালাও গ্রেফতার করে দলে একের পর এক ভাঙ্গনের অপচেষ্টা চালান। এ অবস্থায় একদিকে দল রক্ষা, ও দল পুর্নগঠন, এবং অন্যদিকে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কঠিন দায়িত্ব এসে পড়ে নতুন নেত্রী খালেদা জিয়ার উপর। স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে তার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। এই জোট গঠন করে খালেদা জিয়া জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরব্যাপী আন্দোলনে এরশাদের অবৈধ ও অগনতান্ত্রিক সরকারের সাথে আপস করেননি। অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কোন সমঝোতায় যায়নি। তাই তখন তার উপাধী হয় “আপসহীন নেত্রী”। তিনি তার নীতিতে অবিচল থাকেন।
এরশাদ সরকার তখন বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞামূলক আইন প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার গতিবিধি সীমাবদ্ধ রাখে। এতে তিনি দমে যাননি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার উৎখাত আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে যেতে থাকেন। অপরদিকে আওয়ামীলীগসহ অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় জেনারেল এরশাদ তাঁর শাসনকে একটি বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক চেহারা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার শাসনামলে সব নির্বাচন বয়কট করেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন “যারা এরশাদের নির্বাচনে অংশ নেবে, তারা হবে জাতীয় বেঈমান।” এই ঘোষনার মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে স্বঘোষিত জাতীয় বেঈমান হিসেবে দেশবাসীর কাছে চিহ্নিত হয়। খালেদা জিয়ার দাবির যথার্থতা ক্রমেই মানুষ বুঝতে পারে। দেশের স্বার্থে অত্যন্ত সততার সঙ্গে খালেদা জিয়া এমন আন্দোলন গড়ে তুলেন, যার ফলে শেখ হাসিনা এবং তার দলও বুঝতে পারে এরশাদ সরকারের সঙ্গে নৈকট্যের দরুণ তাদের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। ফলে এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগও সংসদ ছেড়ে এরশাদ হটাও আন্দোলনে যোগ দিতে বাধ্য হয়। দেশব্যাপী তুমুল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং দুদিন পর ৬ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি নির্দলীয় অন্তবর্তী সরকারের কাছে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরশাদ আমলে এভাবেই খালেদা জিয়া রাজনীতি ও সংগ্রামে ওই যে এলেন আর ফিরে তাকাননি পেছনের দিকে। এগিয়েই গেছেন রাজনীতির মহাসড়ক ধরে। এরশাদ স্বৈরাচারের পতনই ছিল ওই মহাসড়কের পাশে একটি গন্তব্য। আবার শেখ হাসিনা সরকারের (১৯৯৬-২০০১) দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে চারদলীয় ঐক্যজেট গঠিত হয় তারই নেতৃত্বে। বেগম জিয়া ও চারদলীয় জোটের বক্তব্য ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে দুঃশাসন চালাচ্ছে ও দুর্নীতি করছে, তাই ভোটের মাধ্যমে তাদের সরাতে হবে। ২০০১ সালে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেন তিনি। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার দল যেমন জনগণের ভোটে বিস্ময়করভাবে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তেমনি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর চারদলীয় ঐক্যজোট নীরব ভোট বিপ্লবে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়। ২০০৭ সালে ১/১১র জরুরী সরকার দেশকে রাজনীতি শূন্য করতে যে পদক্ষেপ নেয়, সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ করে দেন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদ এবং বর্তমান অবৈধ সময়ের ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অবতীর্ন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেখ হাসিনার ধূর্ত কর্তৃত্ববাদী শাসন তাঁকে রাজনীতি থেকে একেবারে সরিয়ে দেয়ার নীল নকশা বাস্তবায়ন করে। এরই অংশ হিসেবে ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দিয়ে তাঁকে জেলে বন্দী ও নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষনা করা হয়। জেলে যাওয়ার আগে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে শরীক হওয়ার ডাক দিয়ে যান তিনি।
দেশ পরিচালনায় খালেদা জিয়া
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত অন্তবর্তী সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তৎকালীন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তাকে শপথ গ্রহণ করান। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে ষষ্ঠ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হিসেবে ১৯৯৬ সালের মার্চে দ্বিতীয় দফায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার এই সরকারটি ছিল সংক্ষিপ্ত সময়ের । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাস করার জন্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হিসাবে এ নির্বাচন করা হয়। আর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হওয়ার পর ১০ অক্টোবর ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৯১-৯৬ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের ৬ আগষ্ট বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনে। যমুনা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় খালেদা জিয়া সরকারের হাতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সমাজ বিকাশ বিশেষত শিক্ষা তথা নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এই সরকারের সাফল্য অনন্য। একইভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার এ সরকার ছিল অগ্রগন্য। ১৯৯৬সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার সরকার সংবিধানে নির্বাচন কালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবীতে আওয়ামীলীগ ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে।
২০০১ থেকে ২০০৬ এই পাঁচ বছরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের উন্নয়নমুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যায়। শিক্ষা, বিশেষত নারী শিক্ষার অভূতপূর্ব প্রসার, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, গ্রামের মানুষের হাতে মোবাইল ফোন, শহরে গার্মেন্টস এবং অন্য ছোট ও মাঝারি সাইজের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষত আবাসন শিল্পে মানুষের কর্মসংস্থান, বিদেশে কর্মসংস্থান, বৈদেশিক বিনিয়োগ Ñ এসবের ফলে বাংলাদেশের নতুন পরিচিতি হয় ইমার্জিং টাইগার বা উদীয়মান বাঘ।
এরশাদ জান্তা ও শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের নির্যাতন-নিষ্পেষন
জেনারেল এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক আপোসহীন গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন খালেদা জিয়া। সেই সংগ্রামে তাকে সইতে হয়েছে নির্মম অত্যাচার। সাত বার তাকে গৃহবন্দী করা হয়। রাজপথে তিনি স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হন। কাঁদানে গ্যাসের সেল তার শরীরে আঘাত করে। গ্যাসের ঝাঁঝালো ধূয়া ছুঁড়ে মারা হয় তার চোখে মুখে। এ সময় তার প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়।
স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন- ‘এক মূহূর্তের জন্যেও তাকে শান্তিতে থাকতে দেব না।’ কথা অনুযায়ী কাজও করেন শেখ হাসিনা। তার ডাকা ১৭৩ দিনের হরতাল অবরোধ, অসহযোগ এবং জ্বালাও-পোড়াও-এ খালেদা জিয়া শেষের দিকে ঠিকই শান্তিতে আর দেশ চালাতে পারেননি। তার সরকারকে পদে পদে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে দেশকে, সরকারকে অস্থিতিশীলও করা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বিরোধী দল বিএনপি’র ওপর প্রচণ্ড দমন-পীড়ন চালান। হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলা দেয়ার পাশাপাশি বিএনপি’র ৬০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গুলি ও টিয়ার সেল মেরে পল্টনে খালেদা জিয়াকে গুরুতর আহত ও তাঁর জনসভা ভেঙে দেয়া হয়। রাজনৈতিক আক্রোশে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি মামলাও দেয়া হয়।
খালেদা জিয়াকে ১/১১’ও এর আঁতাতের সরকারের ভয়াবহ নির্যাতন
আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জেনারেল মঈন-মাসুদ গংদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অশুভ প্রক্রিয়ায় ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত জরুরি সরকার ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেন, এ সরকার তাঁর আন্দোলনের ফসল। এই জরুরি সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কুচক্রীরা প্রথমে তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য বিদেশে সপরিবারে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা চালায়। এটা ব্যর্থ হলে তাকে বিনা অপরাধে ৬ মাস ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। পরে গ্রেফতার করে এক বছর নির্জন কারাগারে বন্দী রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দেয়া হয় এবং চালানো হয় সীমাহীন কুৎসা ও অপপ্রচার। শুধু খালেদা জিয়াই নয়, তার দু’ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়। তারেক রহমানের উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। তার মেরুদণ্ডের হাঁড় ভেঙে দেয়া হয়। বন্দী থাকার কারণে মা বেগম তৈয়বা মজুমদারের মৃত্যুর সময়ও পাশে থাকতে পারেননি তিনি। তাকে গুরুতর অসুস্থ দু’সন্তানকে দেখতেও দেয়া হয়নি। এক বছর পর প্যারোলে মুক্তি পেলেও পরিবার থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন। এখন পর্যন্ত তিনি ছেলে, ছেলে বউ ও নাতনিদের নিয়ে একত্রে থাকতে পারছেন না। নিঃসঙ্গ এবং বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপনই করতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।
জরুরি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সরকার খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে বলপূর্বক খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাসভবন থেকে এক কাপড়ে উচ্ছেদ করা হয়। এই বাড়িটি ছিল স্বামী শহীদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার ৩৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত ঠিকানা। বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় সারাদিন তিনি অভুক্ত ছিলেন। অথচ খালেদা জিয়ার নামে তৎকালীন সংসদ বাড়িটি বরাদ্ধ দিয়েছিল। এদেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য ডিওএইচএস বা সামরিক আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে অনেক কর্মকর্তাকে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন। নিজে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েও ডিওএইচএস-এ কোনো প্লট বরাদ্দ নেননি। অন্য কোথাও তার নিজের নামে একখণ্ড জমিও ছিল না। তাই শাহাদাতের পর রাষ্ট্র তার পরিবারের জন্য বাড়ি বরাদ্ধ করেছিল এবং সেটা সংসদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগও ছিল। কিন্তু প্রতিহিংসার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বাড়ির বরাদ্দও বাতিলের ব্যবস্থা করেন। মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন থাকাকালে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু হয়। এ সময় মা খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ। তার লাশ দেশে আসে। লাশ জড়িয়ে ধরে অঝোর কান্না ছাড়া কিছুই করার ছিল না মায়ের। তবে কোকোর জানাজায় লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে একথাই জানিয়ে দেয় জিয়া পরিবারের পাশে বরাবরের মতই তারা আছেন। কোকোর লাশ বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফনের জন্য আবেদন করা হলে সেখানে সাড়ে তিন হাত জায়গাও তার ভাগ্যে জুটেনি। অথচ কোকোর পিতা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক সেনাপ্রধান এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। দেশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সেনা পরিবারের সদস্য হিসেবে কোকোর বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফনের অধিকার ছিল। প্রতিহিংসা পরায়ন সরকার তাকে প্রাপ্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করে।
অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের নির্যাতন ও প্রতিহিংসা
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য এক নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেন। এর অংশ হিসেবেই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন খালেদা জিয়া। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনি নির্বাচন চান। কিন্তু নানা চলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানে এগিয়ে যান। নির্বাচনের আগে ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া জনগণকে জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকায় মার্চ করার কর্মসূচি আহবান করেন। সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এ কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দেয়। খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বালির ট্রাক বসিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ওইদিন বাসভবন থেকে তিনি বেরিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেন। তাকে আসতে দেয়া হয়নি। ফলে গেটে দাঁড়িয়েই তিনি বক্তৃতা দেন। তাকে বাসভবনে অবরুদ্ধ রেখেই ৫ জানুয়ারি অস্ত্র ও গুলির মুখে একতরফাভাবে প্রহসনের নির্বাচনী তামাশা করা হয়।
৫ জানুয়ারির ভূয়া নির্বাচনের পর ওই সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচনের জন্য একবছর সময় দেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি কোন কর্মসূচী দেননি। কিন্তু সরকার নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায়। ২০১৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা দিবসকে সামনে রেখে নতুন নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলনের কর্মসূচী দেন খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় ৩ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়। ডজনখানেক ইট ও বালির ট্রাক বসিয়ে এবং গেট তালাবদ্ধ করে প্রথমে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। বের হতে চাইলে তাঁকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় পেপার স্প্রে বা মরিচের গুড়া। এরপর তাকে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় তাঁর অফিসের বিদ্যুৎ লাইন, ডিশলাইন, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক । তাঁর ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্য কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের নামে কখনও ভাড়া করা লোক, কখনও দলীয় ক্যাডার ও স্কুলের শিশুদের জোরপূর্বক এনে উৎপীড়ন করা হয়। নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে তথাকথিত শ্রমিক পেশাজীবীদের নামে দলীয় লোক দিয়ে কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি, গুলশান অফিস লক্ষ্য করে ইট, ককেটল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে তাকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপচেষ্টা করা হয়। সরকার কতটা অমানবিক তার নিষ্ঠুর উদাহরণ হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তার সঙ্গের লোকদের অভুক্ত রাখার জন্য গুলশান অফিসে খাবার সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘খুনী, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী, দানব, আততায়ী, আল কায়দা, আইএস’Ñ মুখে যখন যা এসেছে তা-ই বলেছে। তাঁর মতো একজন বিশাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে এ ধরনের গালমন্দ ও বাক্য উচ্চারণে তাদের এতটুকু বুক কাঁপেনি কিংবা বিবেকে বাধেনি।
সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে খালেদা জিয়ার শান্তিপূর্ণ কর্মসুচি সরকারই নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথে নিয়ে যায়। একইভাবে তারা বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম ও দমন-পীড়ন চালিয়ে স্তব্ধ করে দেয় আন্দোলন। রাজপথে নামার চেষ্টা করলেই গুলি চালিয়ে কিংবা ধরে নিয়ে দৈহিক নির্যাতন করা হয়। এভাবে বহু নেতাকর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। পুলিশ র্যাব বিজিবির পাহারায় সরকার একদিকে যানবাহন নামিয়েছে, অন্যদিকে যানবহনে আগুন ও পেট্রলবোমা মেরে সাধারণ মানুষকে নিহত এবং দগ্ধ করেছে। রাজারবাগে কর্মকর্তাদের এক গোপন বৈঠকে পুলিশের এক বড় কর্মকর্তা নাশকতায় পুলিশের জড়িত থাকার কথা নিজেই স্বীকার করেন যা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমেও প্রচারিত হয়। ওই সময় নাশকতার সঙ্গে অস্ত্র গুলি বোমাসহ শাসকদলের ক্যাডাররা ধরা পড়লেও উপরের নির্দেশে ছাড়া পেয়ে যায়।
অবশেষে দীর্ঘ ৯২ দিন পর গুলশান অফিসের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘোষণা করলে সেই নির্বাচনে তার সমর্থক প্রার্থীরা অংশ নেন। খালেদা জিয়া তাদের সমর্থনে জনসংযোগে বের হলে তাকে হত্যার উদ্দেশে কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, ফকিরেরপুল ও উত্তরা এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করা হয়।
নীল নকশার অংশ হিসেবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ভিত্তিহীন মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের হাস্যকর সংসদ নির্বাচনটি সম্পন্ন করা হয়। এ নির্বাচন আগের রাতেই ভোট প্রদান প্রায় সম্পন্ন করা হয় ব্যালট বাক্স দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে ভর্তি করার মাধ্যমে। এটা ছিল খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে চিরতরে মাইনাস করার নীল নকশারই অংশ। নাজিমউদ্দিন রোডের নির্জন কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে কক্ষে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। দু’বছরের বেশি সময় বন্দী রাখার পর করোনা মহামারীর কারণে তাঁর সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত অস্থায়ী জামিন দেয়া হয়। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের সমস্যা সহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। দুইবার তাঁর হাঁটুতে একবার চোখে অপরাশেন হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুস এবং জটিল কিডনি সমস্যায়ও তিনি জর্জরিত। কিন্তু তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার।
রাজনৈতিক জীবনের অসামান্য রেকর্ড
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন খালেদা জিয়া। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একমাত্র প্রার্থী হিসেবে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন থেকে অষ্টম নির্বাচন পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে প্রার্থী হয়ে চারবারই পাঁচটি করে আসনে জয়ী হন। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে দাড়িয়ে তিনটিতেই তিনি জয়লাভ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার বাইরে বিরোধী দলীয় নেত্রী থেকে আবারও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রথম রেকর্ডটি তিনিই সৃষ্টি করেন। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও তিনিই অর্জন করেন। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়াই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। বগুড়া-৬ আসনে ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মাহবুব আলম ভোট পান ৫৪ হাজার ৭৭৭। অর্থাৎ ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৩ ভোটের ব্যবধানে বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদ নির্বাচনে কোন প্রার্থীর সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে রেকর্ড স্থাপনের এমন নজির অতীতে দেখা যায়নি।
দেশ সর্ম্পকে অনুভূতি
তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আলোকিত করে আছেন খালেদা জিয়া। রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র ঘুরেছেন। বাংলাদেশকে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। এ লেখকের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আমার মা জননী জন্মভূমি। এই দেশ সবদিক থেকে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক মনে-প্রাণে আমি চাই। আর আমিইবা কেন, নিজের দেশের মঙ্গল কে না চায় বলুন।’ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে তাকে যখন জেলে নেয়া হয়, তার ঠিক আগে আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। এই দেশে জন্মেছি, এই দেশেই মরতে চাই।’ ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেল থেকে বেরিয়ে আবার বললেন, গত দেড় বছর আমার দেশ ও আমার জনগণের দুঃখ কষ্ট আমাকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে। নিশ্চয়ই এই দুঃখ কষ্ট থাকবে না। আবার আমরা উঠে দাঁড়াবো। ঐক্যবদ্ধভাবেই দেশকে গড়ে তুলবো।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ
২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সংবাদ জানার পর ওই দিন সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশান কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় তিনি সেখানে ঢুকতে পারেননি। নিঃসন্দেহে সেটি ছিল ভুল। গুলশান অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ছোট ছেলের মৃত্যুতে খালেদা জিয়া এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, ডাক্তার তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। এ কথা প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে আগেই জানানো হয়েছিলো। তবুও প্রধানমন্ত্রী যখন এসে পড়েছেন খালেদা জিয়া অচেতন থাকলেও তার কর্মকর্তা কিংবা দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানানো প্রয়োজন ছিল। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ অবশ্য পরদিন এজন্যে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বিবৃতির মাধ্যমে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
নিজের অজান্তে ভুলটি হলেও এই একটি উদাহরণ ছাড়া রাজনীতির ৩৩ বছরে খালেদা জিয়ারই আছে বিনয় আর উদারতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সময় চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি হয়েছিল। এর প্রতিবাদে ৭দল ও ১৫ দলের কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুই নেত্রীর নেতৃত্বে শোক মিছিল। কিন্তু শোক মিছিলে সেদিন শেখ হাসিনা আসেননি, বেগম জিয়া ঠিকই এসেছিলেন। তেমনি ১৯৮৬ সালের ২০ মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে ৭ দল ও ১৫ দলের এরশাদবিরোধী কর্মসূচি ছিল দুই নেত্রীর নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম থেকে যৌথ গণমিছিল। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সেই মিছিলেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেগম জিয়া। ১৯৮৬ সালে এরশাদের পাতানো নির্বাচনের পর ৭ দল ও ১৫ দলের ঐক্য ভেঙে যায়। ১৯৮৮ সালে আবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার উদ্যোগ খালেদা জিয়াই নিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি শেখ হাসিনাকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে পহেলা বৈশাখ ছুটে গিয়েছিলেন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিয়েতে যোগ দিতে এমপি হোস্টেলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা তাকে রিসিভ করেননি কিন্তু সেনাকুঞ্জে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বিয়েতে শেখ হাসিনা এলে গাড়ি থেকে নামার পর বেগম জিয়া দু’বারই সেখানে নিজে উপস্থিত থেকে তাকে স্বাগত জানান এবং একসঙ্গে পাশাপাশি বসে খাবার খান ও ছেলের বউকে দেখাতে নিয়ে যান। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে হজ্ব করে এসে শেখ হাসিনাকে জায়নামাজ, তসবিহ, আতর ও খেজুর পাঠিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সমবেদনা জানাতে সুধা সদনে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাদের প্রবল আপত্তির মুখে যেতে পারেননি। এক-এগারোর জরুরি সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে কোর্টে তোলার সময় কোর্ট প্রাঙ্গণে তার যে দুর্ভোগ হয়, পুলিশ তাকে যেভাবে হেস্তনেস্ত করে, বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। তেমনি শেরেবাংলা নগরের সাবজেলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার চোখের অসুখ বেড়ে গেলে কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে বেগম জিয়া তার বক্তৃতায় তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারকে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। জরুরি শাসনের অবসানের পর অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। এ সময় শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যু সংবাদে খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক জানাতে ছুটে যান ধানমন্ডির সুধা সদনে। সেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। রাজনীতিতে এ ধরনের সৌজন্যবোধ এবং সংস্কৃতিতেই বিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়া।
নতুন সংগ্রামেও বিজয় অনিবার্য
নব্বইয়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ১/১১’র মঈন-মাসুদ চক্রের সেনা সমর্থিত সরকারের বিরাজনীতিকরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অসামান্য নারী বেগম খালেদা জিয়া হিমালয়সম দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তার সেই দৃঢ়তাই অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত হতে শক্তি জুগিয়েছিল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সব দুর্যোগ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন আন্দোলনে এভাবেই বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে অনির্বাণ শিখা হিসেবে প্রজ্জ্বলন করে রেখেছেন। কুচক্রী সরকার তার এ ভূমিকাকে স্তব্ধ করে দিতে তার বিরুদ্ধে ২৯ টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এসব মামলায় দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনার নীল নকশা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং তথাকথিত একটি ভিত্তিহীন মামলায় সাজার ব্যবস্থা করে তাদের সেই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করে। কিন্তু জেল-জুলুম সহ্য করেও খালেদা জিয়া তার নীতিতে অটল রয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে গেছেন, “বিপদে ভেঙ্গে পড়তে নেই। সব সময় এক রকম যায় না। বিপর্যয় কেটে যাবে। দেশ ঘুরে দাড়াবেই। কারণ গণতন্ত্রের জন্যই বিএনপির জন্ম হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র আমরা একদিন ফিরিয়ে আনবোই।” শেখ হাসিনার দখলদার সরকারের বর্তমান হিটলারি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তাই খালেদা জিয়ার এ সংগ্রামও বিজয় লাভ করবে, এ আশা দেশের প্রতিটি গনতন্ত্রকামী মানুষের।
তথ্য নির্দেশঃ
সৈয়দ আবদাল আহমদ, নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া, দিব্য প্রকাশ ২০১৩।
মওদুদ আহমদ, বাংলাদেশে গনতন্ত্র (১৯৯১-২০০৬),ইউপিএল ২০১৫
শফিক রেহমান, খালেদা জিয়ার সংগ্রামী জীবন, অন্য দিগন্ত, ২০১৫
মহিউদ্দিন আহমদ, বিএনপি-সময় অসময়, প্রথমা প্রকাশন ২০১৬
সৈয়দ আবদাল আহমদ, লুৎফর রহমান বীনু, গনতন্ত্রের সংগ্রাম ১৯৯২
সিরাজুর রহমান, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২০১৩
দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক প্রথম আলো (বিভিন্ন সংখ্যা)
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে কেমন ছিলেন খালেদা জিয়া, জানালেন দুই চিকিৎসক