Image description

যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতেই প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসন জোটের শরিক দলকে ছেড়ে দিয়েছে। বাকি তিনটির মধ্যে যশোর-৩ (সদর) আসন ছাড়া সবগুলোতে এলোমেলো অবস্থা। এসব নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

গত বুধবার দুপুরে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের পর রাতে যশোর-১ (শার্শা) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। যশোর-৫ আসনে প্রাথমিকভাবে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিল দল। পরে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

যশোর-১ আসনে প্রাথমিকভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসানকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর যশোর-৬ আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে বাদ দিয়ে কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।

মনোনয়ন পরিবর্তনের পর যশোর-৫ আসনে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ মিছিল করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অন্য দুই আসনে রাজপথে মিছিল সমাবেশ না হলেও প্রাথমিক প্রার্থীদের পক্ষের লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাদের মাঠে নামানো চ্যালেঞ্জ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল করা হয়। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাস। এর আগে তার বাবা মুফতি ওয়াক্কাস এখানে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মনিরামপুর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির দুজন নেতা জানিয়েছেন, যশোর-৫ আসনে ৮৪ হাজার সংখ্যালঘু ভোট আছে। সেই ভোট টানতে পারতেন শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। জমিয়তে উলামার প্রার্থীর পক্ষে এই ভোট আনা হয়তো কঠিন হবে।

এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। দেখি, কী সিদ্ধান্ত আসে। এরপর আমরা বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ। এতে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া কাজী রওনকুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত বাদ পড়লেন। মনোনয়ন পরিবর্তনের খবরে তার অনুসারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিলেও আজাদপন্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।

উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট যে প্রার্থী বেশি টানতে পারবেন, তিনি বিজয়ী হবেন। শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম ও তার চার ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও জনপ্রতিনিধি। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট টানা শ্রাবণের পক্ষে সহজ ছিল। এখন তা আর হবে না।

শ্রাবণের অনুসারীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়ে গত দেড় মাস ধরে তিনি এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। মনোনয়ন পরিবর্তনের খবরে তার অনুসারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে আবুল হোসেন আজাদের অনুসারীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আদাদের অনুসারীরা জানিয়েছেন, শ্রাবণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আবুল হোসেন আজাদ বলেন, ‘দল আমাকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে। দলের সব নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে পারবো।’ 

যশোর-১ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন। এতে বাদ পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। দলীয় সূত্র জানায়, এক মাসের বেশি সময় ধরে মাঠে প্রচারণার পর প্রার্থী পরিবর্তনের কারণে একাংশের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে নুরুজ্জামানের পক্ষের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে জনসংযোগে নেমে পড়েছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মাওলানা আজীজুর রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘দল থেকে আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দল প্রাথমিকভাবে অনেকের নাম ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণার বিষয়ে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত প্রার্থী আমাকে করায় দলের কাছে কৃতজ্ঞ।’ 

৩টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির একাধিক নেতা

অন্য তিনটি আসনের প্রার্থী অপরিবর্তিত আছে। এর মধ্যে যশোর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি ও যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে টি এস আইয়ুব দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাদের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নেতারা আছেন।

৬টি সংসদীয় আসনে এ পর্যন্ত ৩৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিন পর্যন্ত আরও প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও জেলার ৩টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। 

যশোর-২ (ঝিকরগাছা -চৌগাছা), যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর বাইরে নয় জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।  দলীয় ও স্বতন্ত্র পরিচয়ে মনোনয়নপত্র নেওয়া নেতারা শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পরিবর্তনের আশা নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে থাকবেন, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।

যশোর-২ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মেহেদী হাসান, বিএনপি মনোনীত সাবিরা নাজমুল মুন্নি, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিএনপির ইমরান সামাদ নিপুণ, স্বতন্ত্র হিসেবে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, বিএনপির নেতা মোহাম্মদ ইসহাক মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

যশোর-৪ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী, বিএনপির মো. আবদুল হাই মনা, বিএনপি মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব ও তার ছেলে ফারহান সাজিদ, স্বতন্ত্র নাজিম উদ্দিন আল আজাদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

যশোর-৬ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনোনয়নবঞ্চিতদের অনেকেই ক্ষোভ ও আবেগ থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে আশা করছি।’