Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপি নেতাদের ‍মনোনয়নপত্র নেওয়ার হিড়িক লেগেছে। গত দুইদিনে ২৩ জন বিএনপি নেতা মনোনয়পত্র নিয়েছেন। তবে তাদের কেউই দলীয় মনোনয়ন পাননি।

 

জানা যায়, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আসন ছাড়া সব আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। কেবল চট্টগ্রাম- ১৪ ও চট্টগ্রাম- ১১ আসনে এখনও কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি।

 
 
 

তবে মনোনয়ন না পেলেও পৃথক তিন দিনে (গত রোববার, মঙ্গলবার ও বুধবার) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ২৩ জন নেতা।

সর্বশেষ বুধবার চট্টগ্রামে তিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মোট ৮ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা যায়, বুধবার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম- ৩ আসনে মনোনয়নপত্র নেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম- ৬ আসনে নেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার।

এছাড়াও চট্টগ্রাম- ১৪ আসনে পাঁচজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তারা হলেন, বিএনপি নেতা ‍মো. ইফতেখার হোসেন, মো. আল হেলাল, এম এ হাশেম রাজু, মহসিন জিল্লুল করিম, এজাজ আহমদ চৌধুরী। এদের মধ্যে উজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।

এছাড়াও একই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম- ৯ আসনে শাহজাদা মোহাম্মদ আহসান নামে বিএনপি থেকে একজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আর একইদিন আঞ্চলিক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির হয়ে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন শেখ তাফসী জহুরা নামে একজন।

এর আগে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম- ২ (ফটিকছড়ি) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিম উল্লাহ বাহার, চট্টগ্রাম- ৩ (সন্দ্বীপ) আসনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক রফি উদ্দিন ফয়সাল, চট্টগ্রাম- ১৪ (চন্দনাইশ) আসনে চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। একই দিন চট্টগ্রাম- ১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ ও বিএনপি নেতা সৈয়দ সাহাত আহমেদ।

এর আগে গত রোববার সাতজন বিএনপি নেতা মনোনয়ন না পেলেও নগর ও জেলার বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তারা হলেন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে শাকিলা ফারজানা। এছাড়াও চট্টগ্রাম-৯ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সামশুল আলম মনোনয়নপত্র নেন। একইদিন চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপি নেতা জাকের হোসেন ও দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম। তার আগে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়নপত্র নেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম জানান, যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন তারা নিতেই পারেন। তারা সবাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। দল যখন চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে সেখানে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের জন্য কাজ করবে। জাতীয় নির্বাচনে কোন প্রভাব পড়বে না।

এ বিষয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নেই। কিন্তু তাদের সমর্থকরা সবাই দেশে আছে। নির্বাচনের দিন হয়তো ভোট দিতেও যাবে তারা। তাই ভোটের হিসেব এতো সরল হবে না। বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবার জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা হয়তো ভাবছেন ২৪ সালে আওয়ামী লীগে আমি-ডামি নির্বাচনের মতো আরেকটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেই কারণে অনেকেই মনোনয়ন নিয়ে রাখছেন। শেষ পর্যন্ত তারা ভোটের মাঠে কজন থাকবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের যদি নির্বাচনে মাঠ থেকে তুলে নিতে না পারে তাহলে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন প্রকাশ পাবে তেমনি ভোটের মাঠেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।