Image description
অর্থনীতির গতি ফেরাতে রয়েছে নানা পরিকল্পনা চার কোটি পরিবার পাবে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কৃষক কার্ডের মাধ্যমে কৃষি সুবিধা স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে সাধারণত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। তবে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে বাস্তবসম্মত নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে হাজির হচ্ছে। নতুনত্বে ভরপুর থাকছে বিএনপির এই নির্বাচনী ইশতেহার। এতে তারুণ্যের পাশাপাশি কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

অর্থনীতির গতি ফেরাতে রয়েছে নানা পরিকল্পনা। ইশতেহারে সংযোজন করা হচ্ছে ‘ফ্যামিলি কার্ড’, যা পাবে চার কোটি পরিবার। এ ছাড়া ‘হেলথ কার্ড’ ও ‘কৃষি কার্ড’কে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় এনে কিভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে, তা প্রার্থীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিএনপি ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করে।

সাত দিনের অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কিভাবে পরিচালনা করবে, কিভাবে উন্নয়ন করবে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন তারেক রহমান। এ ছাড়া বেশ আগে থেকেই বিএনপি তাদের ৩১ দফা নিয়ে মাঠে রয়েছে। সেগুলোও তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত হবে।

এই ৩১ দফার সঙ্গে জনসম্পৃক্ত আট দফা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণ আমাদের কাছে কথার ফুলঝুরি পছন্দ করে না। জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে, কিভাবে আমরা দেশকে পরিচালনা করব, তাদের সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করব। পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চায়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ডিটেইল প্ল্যানিং শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়।

তারেক রহমান আরো বলেন, ‘আমরা শিক্ষার পেছনে টাকা খরচ করব, জনবল তৈরির পেছনে খরচ করব। আমরা কোনো মেগা প্রজেক্টে যাব না, এতে দুর্নীতি হয়। এক লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে, যার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ হবেন নারী। চার কোটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা বানাতে চায় না, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চায়।’

সূত্র জানায়, ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বয়ে ইতিমধ্যে ইশতেহারের সব কাজ সুবিন্যস্ত করে রেখেছে বিএনপি। এখন দলটি গঠন করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আরো পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে ইশতেহার চূড়ান্ত করা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করবে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে যে ৩১ দফা বিএনপি দিয়েছে সেখানেই ইশতেহারের বিষয়গুলো চলে এসেছে। এর বাইরে দেশ গড়ার পরিকল্পনা কর্মসূচিতেও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। ইশতেহার নিয়ে কাজ চলছে। তৃণমূল থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমান দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে আলোচনার পরই তা চূড়ান্ত হবে বলে আমরা আশা করছি।’

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি। ফ্যামিলি কার্ড, কৃষি কার্ড, হেলথ কার্ড, শিক্ষা, বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বেকার সমস্যা সমাধান, জাতীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা ইশতেহারে থাকবে।

বিভিন্ন কার্ডের ব্যাপারে জানা যায়, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা অথবা খাদ্য সুবিধা চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়া হবে। কৃষক কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনা, স্বল্প মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সুবিধা, স্বল্প ব্যয়ে সেচ সুবিধা, সহজ শর্তে কৃষিঋণ, কৃষিবীমা সুবিধা, ন্যায্যমূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রয়ের সুবিধা, কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণের সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া মোবাইলে আবহাওয়া ও বাজার তথ্য, ফসলের চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। মৎস্যচাষি ও প্রাণিসম্পদ খামারিরাও কৃষক কার্ডের সুবিধা পাবেন।

স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে জানা যায়, দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। দেশজুড়ে সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন করে প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, যার ৮০ শতাংশ হবেন নারী। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরে বসবাসকারী সব নাগরিকের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।

জানা যায়, একজন শিক্ষার্থী যখন দশম বা ১২তম ক্লাস পাস করবে, অন্তত দুটি বিদেশি ভাষা লিখতে ও পড়তে সক্ষম হয়, শিক্ষা খাতে এমন ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। দমবন্ধ করা এই শহরে খেলার মাঠ নেই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিনগণের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মানী প্রদান করা হবে। অন্যান্য ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য) উপাসনালয়ের প্রধানদেরও এই মাসিক সম্মানীর আওতায় আনা হবে।

ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, সারা দেশে অন্তত ২০ হাজার কিলোমিটার খাল ও নদী খনন-পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ করা হবে। তিস্তা ব্যারেজ উন্নয়ন ও পদ্মা ব্যারেজের মতো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পাঁচ বছরে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে ২৫ কোটি গাছ। সারা দেশে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। খাল খনন, বায়ু ও পানি দূষণ রোধ প্রভৃতি বিষয়ে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। 

খেলাধুলার ব্যাপারে ইশতেহারে উল্লেখ থাকছে, জাতীয় শিক্ষাক্রমে চতুর্থ শ্রেণি থেকে খেলাধুলাকে অন্তর্ভুক্ত করা, ‘নতুন কুঁড়ি’র মাধ্যমে ১২ থেকে ১৪ বছরের প্রতিভাবান ক্রীড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা, ৬৪ জেলায় ইনডোর সুবিধাসম্পন্ন স্পোর্টস ভিলেজ নির্মাণ, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বিষয়ভিত্তিক ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগ, প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির শাখা প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম।