আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, উসকানি ও ষড়যন্ত্র হতে পারেÑ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা হলে সব ধরনের উসকানি সত্ত্বেও বিএনপিকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হতে পারে।
ভোট ইস্যুতে আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ এলে সেটিকে মোকাবিলা করতে হলে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না হই রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। ফলে বিএনপির নেতাদের সতর্ক হতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন নিয়ে যখন নানামুখী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং দেশকে গভীর সঙ্কটে ফেলার চক্রান্ত চলছে তখন বিএনপি দল-মত নির্বিশেষে দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের মতামত গ্রহণের এই সময়োপযোগী বৈঠকের আয়োজন করে। নির্বাচনের আগে দেশবরেণ্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের এমন মতামত নেয়ার নজির অতীতে কোনো দলকে গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। গতকাল রোববার দেশের প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, প্রিন্ট-ইলেকট্র্রনিক-অনলাইন মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয়। আসন্ন নির্বাচন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে বিএনপি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। গতকাল রোববার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা দেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সম্পাদকদের মতামত জানতে চান, তারাও বিএনপির কাছে স্বাধীন গণমাধ্যমের নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন প্রত্যাশা তুলে ধরেন। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যেকোনো অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে জনগণের ভোটের আধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সবাই দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূ এ মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা প্রধানসহ শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপির করণীয় এবং গণমাধ্যমের নানামুখী চাপ, প্রতিবন্ধকতা, সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্র বির্নিমাণে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা ও কি ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সেগুলোও উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বিএনপির মতো বড় দলের কাছে গণমাধ্যম কী প্রত্যাশা করেÑ সেটিও বলেন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামল গণমাধ্যমের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। সমালোচনা করার কারণে সে সময় গণমাধ্যমকে চরম চাপের মুখে থাকতে হয়েছে। মিথ্যা মামলা, সাংবাদিকদের কারাবরণ, মালিকানা ও সম্পাদক পরিবর্তনের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে বিএনপির শাসনামল গণমাধ্যমের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। নানা জরিপে দেখা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে অনেক বেশি ভোট পেয়ে বিএনপি বিজয়ী হবে, তারা ক্ষমতায় আসছে। তাই দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব এবং বিএনপির কাছে এমন প্রত্যাশা করছেন দেশের বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা।
গণামাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেন, আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ যেটা আসছে, তা মোকাবিলা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, রাষ্ট্র বিপন্ন হয়ে যাবে। সেই রাষ্ট্রের যদি অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়, তাহলে আমরা কেউই থাকব না। বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্থির ও কঠিন সময় উল্লেখ করে তারা বলেন, বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো নেতৃত্বের সঙ্কট। আমাদের একজন নেতা প্রয়োজন। মাসখানেক আগেও তারেক রহমানকে নিয়ে অনেকের মনে দ্বিমত ছিল, তিনি কতটুকু কী করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে তারেক রহমানের সঠিক ও শক্তিশালী অবস্থানের পক্ষে সবারই সমর্থন রয়েছে।
যায়যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান বলেন, সাংবাদিকদের দায়িত্ব সমালোচনা করা, ঠিক আছে কিন্তু প্রশংসা করাও তাদের দায়িত্বেÑ এটি আমার মনে রাখতে হবে। আমি যখন আবার ফিরে পেলাম যায়যায় দিন, আমি সম্পাদক বিভাগকে বলেছি, তোমরা খেয়াল রাখবেÑ একটি ছোটখাটো প্রশংসার কাজও হয় যদি ব্যক্তিগতভাবে সরকারিভাবে ওই কথাটি সম্পাদকীয়তে লিখবে। খালি সমালোচনা করো না। সাংবাদিকদের দায়িত্ব কিন্তু প্রশংসা এবং সমালোচনাÑ দুটো করাই উচিত। আপনাদের অনুরোধ করছি সাংবাদিক হয়ে যাওয়া মানে ফ্রি লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া সরকারের সমালোচনা করা ইউনূস সাহেবের সমালোচনা এটি কিন্তু নয়। আমি কিন্তু সরকারকে টেনেই বলছি।
বাংলাদেশের বর্তমান সব সংকট মোকাবিলায় তারেক রহমানের মতো নেতা প্রয়োজন মন্তব্য করে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো নেতৃত্বের সঙ্কট। আমাদের একজন নেতা প্রয়োজন। মাসখানেক আগেও তারেক রহমানকে নিয়ে অনেকের মনে দ্বিমত ছিল যে, তিনি কতটুকু কী করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে তারেক রহমানের সঠিক ও শক্তিশালী অবস্থানের পক্ষে সবারই সমর্থন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রের ওপর যে ধরনের সঙ্কট শুরু হয়েছে, তা তো মাত্র শুরু। সামনের দিকে আরো কী হতে পারে, তা আমরা এখনো বলতে পারছি না।’
বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘সারা দেশে অনেক উসকানি সত্ত্বেও বিএনপি ইতোমধ্যে যে ধৈর্য ও দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারেক রহমান আগামী দিনের সংবাদপত্রের জন্য যে আশাবাদ ও পরিকল্পনার কথা বলছেন, তার যদি ২৫ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাতেও আমরা সন্তুষ্ট।’
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির এক ডাকে কোটি লোক হাজির হবে। দেশের এই বিশাল জনশক্তি এবং সংবাদমাধ্যম যদি একত্রে কাজ করে, তবে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে কোনো সমস্যা থাকবে না।’
মতমিনিময় সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, আগের ফ্যাসিবাদী শাসনামল ছিল গণমাধ্যমের জন্য কঠিন একটা সময়। মিথ্যা মামলায় কয়েকজন সাংবাদিককে কারাগারে যাওয়ার মতোও ঘৃণ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। পত্রিকার মালিকানা বদলে দেয়া, সম্পাদক পরিবর্তনসহ সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেয়া হতো। তবে তুলনামূলকভাবে বিএনপির শাসনামল গণমাধ্যমের জন্য অধিকতর স্বস্তিদায়ক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এই মুহূর্তে দেশের বৃহৎ দল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে তাদেরও বড় দায়িত্ব রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে নিজেদের করা জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল, এটি স্বীকৃত। আমাদের জরিপ, আমরা যেটা করেছি। আমরা এটি বিশ্বাস করি যে, জরিপটা মোটামুটি সত্যের কাছাকাছি বা মানুষের চিন্তা জগতের কাছাকাছি। সেখানে বিএনপি কিন্তু বৃহত্তম দল হিসেবে এসেছে। নির্বাচনে অনেক বেশি ভোট পেয়ে তারা বিজয়ী হবেন, সেটি কিন্তু আছে। আমরা এটি বিশ্বাস করতে চাই, বা আমরা এটি হয়তো ভাবতে পারি, তারা ক্ষমতায় আসছেন। ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিনয় প্রত্যাশা করেন প্রথম আলো সম্পাদক।
তিনি জানান, গণমাধ্যমের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দল-মত নির্বিশেষে যে সংহতি দেখা গেছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো মিডিয়া হাউসে আগুন দেয়া হয়নি। সর্বপ্রথম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সমালোচনা ও মতপ্রকাশের ইস্যুকে অবশ্যই সুস্থ ধারার একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি এই মুহূর্তে মিডিয়ার সঙ্গে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবই প্রকাশ করছে। এর একটি কারণ হতে পারে দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় আসেনি। যখন তারা ক্ষমতায় আসবে, তখনই দেখা যাবে তাদের সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা এখনকার মতো বজায় থাকে কি-না।
মাহফুজ আনাম বলেন, গত অর্ধশতাব্দীতে যারাই দেশের ক্ষমতায় ছিল, কেউই গণমাধ্যমের করা বিশ্লেষণভিত্তিক সমালোচনা পছন্দ করেনি। আগামীর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন এই আবহে প্রবেশ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর উপর হামলা হলো। এরপরে কী হবে কেউ জানে না। সে কারণে এই অবস্থায় বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা সবচাইতে বেশি। বিএনপি মানুষের পাশে থাকবে। তারেক রহমান আসবেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি দেবেন। সেটি আমি জানি। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছেÑ আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে চাই, লিখতে চাই। আমাদের কথা বলতে দিন। আপনারা যদি এটা নিশ্চিত করেন, সাধুবাদ জানাবো। আর নাহলে আবারো হয়তো বা আমরা আপনাদের সমালোচনা করব। কিন্তু এই সমালোচনা যেন হঠকারীতায় পরিণত না হয়, সেই দিকটিও দেখতে হবে আমাদের।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় আজকে এখানে আমরা যারা সমবেত হয়েছি, আমাদের সহকর্মীরা, সবাই এই কথাই বলবেনÑ আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ যেটা আসছে, সেটিকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ না হই রাষ্ট্র বিপন্ন হয়ে যাবে। সেই রাষ্ট্রের যদি অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়, তাহলে আমরা কেউই থাকব না। আগামী দিনের সুন্দর ভবিষ্যত, তারেক রহমানের আগমনকে আমি শুভেচ্ছা জানাই, আমি মনে করি তিনি এলে বাংলাদেশের চেহারা হয়তোবা পাল্টে যাবে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্থির ও কঠিন সময় উল্লেখ করে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশটা দু’ভাগে বিভক্ত। বিভাজনের মধ্যে কথা বলাও খুব ডিফিকাল্ট (কঠিন)। তবে আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে আমার খুবই ভালো লেগেছে এই কারণে বিএনপির যে, তিনজন নেতা বক্তৃতা করেছেন, আগামী দিনে দলটি ক্ষমতায় এলে মিডিয়া পলিসি কী হবে, তা সালাহউদ্দিন আহমদ ও রিজভী আহমেদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। আমি খুবই আশাবাদী হতে চাই, আগামী দিনে যদি এর সিকিভাগ বাস্তবায়িত হয়।
মতিউর রহমান চৌধুরী আরো বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে গণমাধ্যমের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে এবং এই সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা।
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ভবনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় অনেকেই ব্যথিত হয়েছেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে, আবার অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি বলতে পারে তারা ক্ষমতায় নেই। তবে ক্ষমতায় না থেকেও এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো যেত, ভূমিকা রাখা যেত। বিএনপি কি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পেরেছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা কি এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলেছে?
ফাহিম বলেন, ‘আমরা বরাবরের মতো ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চাই। গত ১৫ বছরেও যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাইলেও প্রশ্ন করা যায় না, তবুও আমরা প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখনো যখন ক্ষমতাকে প্রশ্ন করি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি তখন ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে অভিহিত করা হয়, ট্যাগ দেয়া হয়। আগামী দিনে এর অবসান ঘটবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপি অতীতের সব তিক্ততা ভুলে আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের কথা মাথায় রেখে গণমাধ্যমকে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমকে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়া হবে। অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই এই সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কিছুদিন যাবৎ গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে, টার্গেট করে হামলা করতে দেখেছি। কিছু স্থাপনায়, ঠিকানায় মবোক্রেসিকে এলাউ করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, কিন্তু হয়ে গেছে মবোক্রেসি। এ জন্য সরকারের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছি। এগুলো আরো কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশ নিয়ে গণপ্রত্যাশা ও গণআকাক্সক্ষা অনেক বেশি। বাংলাদেশের সব মানুষ পূর্ণ গণতন্ত্র চায়, গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চায়। গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে, যাতে সেগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, অনেকে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে, আছে; কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থের বিবেচনায় সব সময় আমরা যেন দেশের পক্ষেই থাকি। নিরপেক্ষ না থাকি।
সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব ও দেশপ্রেমের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে সবাইকে আপসহীন থাকতে হবে। তারেক রহমানের আসন্ন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গণতন্ত্রের ভিত্তি যেন আরো মজবুত হয়, সে লক্ষ্যে তিনি গণমাধ্যমের ইতিবাচক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের সুবিধার জন্য নয়; বরং দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেই সবার সহযোগিতা চায়।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ দেয়, তাহলে আমাদের সহযোগিতা থাকবে সর্বোচ্চ। আমরা অতীত ভুলে যেতে চাই, তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কী করেছে, সেটি স্মরণে রাখতে চাই।
সভায় তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনগণ আশা করছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুঁটিটা শক্তিশালী হবে। তিনি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর কষ্টকর নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
হামলার ঘটনায় সরকারের দায়ভারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম আলো-ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। সেটি আমাদের জন্য লজ্জার। এটিকে কোনোভাবেই শুধু দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে সমাপ্ত করতে পারব না। এখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, আমরা জেনেছি হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট (গোয়েন্দা প্রতিবেদন) ছিল। কিন্তু সেটি আমলে নেয়া হলো না কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরেও শুনেছি এক-দুই ঘণ্টা পরে তারা রেসপন্ড (সাড়া) করেছে। সেটি কেন? কাদের হাতে আমরা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা দেবো? নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের ভূমিকাটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশ একটি ঘনকালো অন্ধকার সময় পার করেছে, যেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী প্রত্যেকেই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, মতামত ও বক্তব্যের কারণে কারও ওপর হামলা হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ফ্যাসিবাদোত্তর সময়েও এমন ঘটনা গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শফিক রেহমানের মতো বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের যেভাবে জেলে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে ফ্যাসিবাদের আমলে একটি ঘন কালো অন্ধকারের সময় পার করেছি। প্রত্যেকেই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছি। এখনো যে সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের সামনে আসছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।
মতবিনিময় সভায় যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াবের সভাপতি ও সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ইউএনবির সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম, বিবিসির কাদির কল্লোল, এটিএন বাংলার পরিচালক বার্তা হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন, আশরাফ কায়সার, আবদুর নূর তুষার, নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অফ নিউজ শরীফুল ইসলাম খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকদের মধ্যে নয়া দিগন্তের সালাহ উদ্দিন বাবর, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের শামসুল হক জাহিদ, দেশ রূপান্তরের কামাল উদ্দিন সবুজ, বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ডেইলি সানের রেজাউল করিম, লোটাস, সমকালের শাহেদ মোহাম্মদ আলী, আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, খবরের কাগজের মোস্তফা কামাল, জনকণ্ঠের খুরশীদ আলম, প্রতিদিনের বাংলাদেশ মারুফ কামাল খান, বাংলা বাজারের রাশেদুল হক, বাংলা নিউজের তৌহিদুর রহমান মিঠু,, ইটিভির আবদুস সালাম, ডিভিসির লোটন ইকরাম, বাংলা ভিশনের আবদুল হাই সিদ্দিকী, এসএ টিভির মাহমুদ আল ফয়সাল, এনটিভির ফখরুল ইসলাম কাঞ্চন, বৈশাখী টিভির জিয়াউল কবির সুমন, একাত্তর টিভির শফিক আহমেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্টের মোস্তফা আকমল, মাছ রাঙ্গার রেজানুল হক রাজা, নাগরিক টিভির এরফানুল হক নাহিদ, জিটিভির গাউসুল আজম বিপু, এটিএন নিউজের শহীদুল আজম, দেশ টিভির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, এখন সময় তুষার আবদুল্লাহ, নিউ এজের শহীদুজ্জামান, যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন, আমাদের সময়ের নজরুল ইসলাম, স্টার নিউজের ওয়ালিউল মিরাজ, মোহনা টিভির এম এ মালেক, গ্রিন টিভির মাহমুদ হাসান, দীপ্ত টিভির এএম আকাশ, ঢাকা পোস্টের কামরুল ইসলাম. ঢাকা মেইলের হারুন জামিল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ, মহিউদ্দিন খান মোহন, জাহিদুর রহমান রনি, নিউজ টোয়েন্টিফোরের ডিএমডি গিয়াস উদ্দিন রিমন, শীর্ষ নিউজের একরামুল হকসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল জবিহ উল্লাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়া উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা মাহাদী আমীন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আতিকুর রহমান রুমন, মীর হেলাল, মোর্শেদ হাসান খান, শাম্মী আখতার, শায়রুল কবীর খান, মাহমুদা হাবিবা, ফারজানা শারমিন পুতুল, শামসুদ্দিন দিদার, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম শামসুর ইসলাম প্রমুখ নেতারা ছিলেন।