আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গঠিত সমমনা আট দলের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে চলছে জটিল হিসাব-নিকাশ। এক ব্যালটে ইসলামপন্থি ভোট একত্রিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই ও আসন বণ্টন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে দাবি জোট নেতাদের। দ্রুতই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা বলছেন, প্রার্থী ও দলের জনপ্রিয়তা, নির্বাচনী মাঠের শক্তি এবং জয়ের সম্ভাবনা—এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আসন বণ্টন করা হবে।
ইসলামপন্থিদের এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসলামপন্থি দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সমমনা আরও কয়েকটি ইসলামী দল নিয়ে আট দলীয় এই জোট গড়ে ওঠে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শুরু থেকে আসন সমঝোতা ও প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে একাধিক দফায় বৈঠক করেছে দলগুলো। প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করবে।
ছাড়ের মানসিকতায় জামায়াত
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক বছর আগেই ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী।
খেলাফত মজলিস ও খেলাফত আন্দোলনের অবস্থান
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আসন সমঝোতার জন্য দুটি আলাদা তালিকা প্রস্তুত করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২০ থেকে ২৫টি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। দলটির নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে বড় কোনো সমস্যা হবে না, মোটামুটি একটি তালিকার ভিত্তিতেই আলোচনা এগোবে।
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দলগুলো ছোট দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। অতীতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অন্যান্য ইসলামী দলের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ইসলামপন্থিদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই ঐক্যের নেতৃত্ব দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
মাঠ জরিপের ভিত্তিতে আসন নির্ধারণ
আট দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কোন দল কোন আসনে আগ্রহী এবং কোথায় জয়ের সম্ভাবনা বেশি—সে তালিকা মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে সব দলই ছাড়ের মানসিকতা দেখাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই—সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে বিজয় নিশ্চিত করা।
জোটভুক্ত দলগুলো
আট দলীয় এই জোটে রয়েছে—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
যা বলছেন নেতারা
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, “সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, জয়ের সম্ভাবনার ভিত্তিতে আসন বণ্টন হবে। ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “আমরা কার্যত এক দলের মতোই কাজ করছি। যিনি যেখানে জিততে পারবেন, তাকেই প্রার্থী করা হবে।”
ঐক্যের পথে এগোচ্ছে ইসলামপন্থিরা
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “দেশ ও উম্মাহর স্বার্থে এবারের নির্বাচনে সব ইসলামী শক্তির মধ্যে ঐক্য অপরিহার্য। অচিরেই আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছাব—ইনশাআল্লাহ।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের বলয় বিস্তারে ব্যস্ত। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামপন্থিদের এই তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত কারা কার সঙ্গে যাবে, তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, একক প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ইসলামপন্থি দলগুলো নির্বাচনী জোট ও বৃহত্তর সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে। যদিও আদর্শগত অমিলের কারণে এই ঐক্য কতটা টেকসই হবে, তা এখনো দেখার বিষয়।