Image description

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলারের ঋণ গ্যারান্টি পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, গত ১০ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সারসংক্ষেপ অনুমোদন হয়। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ গ্যারান্টির প্রস্তাব পাওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত করে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান এই প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করলে ৯ ডিসেম্বর সেটি অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এবং স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি নিশ্চিত করতে এ ঋণ গ্যারান্টি নেওয়া হবে।

‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ (ইএসএসইপি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্যারান্টি দেবে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ)। এর বিপরীতে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নন-ফান্ডেড এবং ফান্ডেড ফ্যাসিলিটির প্রস্তাব করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ঋণ গ্যারান্টি প্রস্তাব দেওয়া হলে চলতি বছর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পেট্রোবাংলার মতামতের আলোকে প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল ডকুমেন্ট (পিএডি) চূড়ান্ত করা হয়। পরে গত ১৮ জুন বিশ্বব্যাংকের বোর্ড এ গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি অনুমোদন করে।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রাথমিক জ্বালানি চাহিদার ৬০-৬৫ শতাংশ মেটে প্রাকৃতিক গ্যাসে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার দুটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় প্রতিবছর ৫৬টি এলএনজি কার্গো এবং ২৩টি মাস্টার সেলস অ্যান্ড পারচেস এগ্রিমেন্টের (এমএসপিএ) আওতায় অনলাইন বিডিং পদ্ধতিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানি করছে। স্পট মার্কেট থেকে আমদানিকৃত এলএনজি কার্গো প্রাপ্তি এবং মূল্য-সংক্রান্ত অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ সরকার আরও তিনটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি সই করেছে। স্টান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (এসবিএলসি) প্রদানের শর্তে ২০২৬ সাল থেকে এসব চুক্তি কার্যকর হবে। এ তিন চুক্তির আওতায় বছরে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৪টি এলএনজি কার্গো আমদানি করা যাবে। তবে এসবিএলসি শুধুমাত্র বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যু করতে হবে।

গত ৯ ডিসেম্বর ঋণ গ্রহণ প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ। এতে বলা হয়, ২০২৬ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির জন্য ২৪০ থেকে ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এসবিএলসি ইস্যুর প্রয়োজন হবে, যা দেশে অবস্থিত বিদেশি ব্যাংকগুলো ইস্যু করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে সাত বছর মেয়াদী ঋণ গ্যারান্টি দিচ্ছে। যার মধ্যে প্রথম ছয় বছর সব ফ্যাসিলিটি ব্যবহারের জন্য এবং ষষ্ঠ বছরে নেওয়া ফ্যাসিলিটির বিপরীতে সপ্তম বছর শুধুমাত্র ক্রেডিট লাইনের অংশটি চালু থাকবে। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার শুধু এসবিএলসি ইস্যু করার জন্য ব্যবহৃত হবে।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সই করা সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালে চালু হতে যাওয়া তিনটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি কার্গো আমদানি করার জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্যারান্টি অন্যান্য বিকল্পসমূহের তুলনায় ব্যয় সাশ্রয়ী। এটি কার্যকর হলে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ব্যাংকসমূহের ‘মনোপলিস্টিক বিহেভিয়ার’ কমে আসবে। যার ফলে ওই ব্যাংকসমূহ ভবিষ্যতে পেট্রোবাংলার অনুকূলে যৌক্তিক শর্তে এসবিএলসি প্রদানে সম্মত হবে বলে আশা করা যায়। এতে পেট্রোবাংলার তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং ছয় বছরে প্রায় ১১৬ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিশ্বব্যাংক যেটি দিচ্ছে, তা গ্যারান্টি। ফলে সরকারের সরবরাহকারীর কাছ থেকে এলএনজি কেনা আরও সহজ হবে। কারণ এক্ষেত্রে যে রিস্ক প্রিমিয়াম চার্জ করা হয়, গ্যারান্টি থাকলে তার হার কমে। সরবরাহকারীরা গ্যারান্টি খোঁজে। তারা যখন দেখবে এখানে গ্যারান্টি আছে, অর্থাৎ সরকার টাকা না দিতে পারলে সেটি বিশ্বব্যাংক দেবে, তখন রিস্ক প্রিমিয়াম কম চার্জ করবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এলএনজি কিনতে হচ্ছে। কারণ এই মুহূর্তে বিকল্প নেই। শর্ট টার্মের জন্য হলেও ঋণ নিতে হবে। কোন পথে হাঁটলে ঋণের খরচ মিনিমাম হবে, সেই বিবেচনায় চুক্তিটা ইতিবাচক।