সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ঘিরে দেশজুড়ে মানুষের মাঝে যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তখন সংবেদনশীল এই মুহূর্তকে পুঁজি করে ভুয়া ও অপতথ্য ছাড়াচ্ছে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী। যার নেপথ্যে মনিটাইজেশন ও ভিউ বাণিজ্য। খালেদা জিয়াকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর ৭০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও পেইজ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে চ্যানেল 24।
দেশে বড় কোনো ঘটনা ঘটলেই অপতথ্যের ডালপালা মেলে বিদ্যুৎ গতিতে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গত দু'সপ্তাহে অসংখ্য ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গেল নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ৭০টি ফেসবুক প্রোফাইল, গ্রুপ ও পেইজ বিশ্লেষণ করে চ্যানেল 24। এতে দেখা যায়, ২৯ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোস্ট করা হয়েছে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব। যেখানে পোস্টের ভাষা, টেমপ্লেট, গ্রাফিক্স, ভিডিও ক্লিপ এবং সময় প্রায় একই। অ্যাকাউন্টগুলোর বেশিভাগই খোলা হয়েছে ওই দু'সপ্তাহের মধ্যে।
৭০টি কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৮টিতে সরাসরি খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়েছে। ৬টিতে দাবি করা হয়েছে, তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া হয়েছে। ২২টিতে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য পোস্ট করা হয়েছে। আর ৪টি পোস্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মৃত্যুর নাকি খবর গোপন রাখা হয়েছে।
কথিত ব্রেকিং নিউজের টেমপ্লেটে ব্যবহার করা হয়েছে খালেদা জিয়া ও হাসপাতালের ফেক ছবি ও ভিডিও। যেমন- একটি পোস্টে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার যে ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে, তা মূলত সামসাদ বেগম নামে এক নারীর চার বছর আগে হাসপাতালে ভর্তি থাকার ছবি। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার মেয়ে মৌ সামারা। তিনি বলেন, আমার মা মারা গেছেন ২০২১ সালে। আর আমার মায়ের সঙ্গে শতভাগ মেলেও না। এই ছবিটা আমাদের সামনে আসছে এবং মানুষ দেখছে, সন্তান হিসেবে আমাদের খারাপ লাগছে।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশের সিনিয়র ফ্যাক্ট চেকার তানভীর মাহতাব আবীর বলেন, দ্রুত সময়ে ফেসবুকে মনিটাইজেশন পেয়ে টাকা কামাতে, ভুয়া তথ্য ছড়ায় সাইবার জগতের একটি গোষ্ঠী। আমরা এমন অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভিডিওগুলো প্রচার করতে দেখেছি। সেগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচার করা হয়। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কারও বিরুদ্ধে গেলেও তাদের কিছু আসে-যায় না। এগুলোকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন তারা।
ডিজিটাল মিডিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, একযোগে অপতথ্য ছড়ানোর নেপথ্যে আছে সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবিশ্বাস পরিবেশ তৈরি করা। এই কঠিন সময়ে গণমাধ্যমকে একটু বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমের তথ্য শেয়ার করার আগে উৎস পরীক্ষা করা, অফিসিয়াল বিবৃতি দেখা এবং ফ্যাক্ট- চেক করার পরামর্শ বিশেষেজ্ঞদের