বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেছেন যে, নির্বাচন 'অতো সহজ হবে না' এবং ষড়যন্ত্র এখনও 'থেমে নেই'। শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, "যে কথাটা আমি আগে বলেছিলাম যে, নির্বাচন অতো সহজ হবে না, ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই।" এই বক্তব্যের সমর্থনে তিনি সম্প্রতি দুই প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরেন। শুক্রবার দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে চলন্ত রিকশায় গুলি করা হয়। তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর আগে ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে একজন নিহত হন এবং এরশাদ উল্লাহসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন।
তারেক রহমান বলেন, "গত কয়েক দিনের ঘটনা, গতকালকের ঘটনা, চট্টগ্রামে আমাদের প্রার্থীর উপরে গুলিবর্ষণের ঘটনা, এই সবকিছু নিয়েই কিন্তু প্রমাণিত হচ্ছে যে, যা আমি বলছিলাম তা কিন্তু সত্য হচ্ছে আস্তে আস্তে।"
তিনি দলের কর্মীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "কাজেই আমরা যদি নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে নিয়ে না আনি, আমরা যদি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ না হই, এই দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।" তিনি দাবি করেন, প্রত্যেকবার দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বিএনপিই উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, "প্রত্যেকবার এই দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে, প্রত্যেকবার আপনারা, কখনো শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে, কখনো দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, আস্তে আস্তে সেই খাদের কিনারা থেকে দেশকে আবার বের করে নিয়ে এসেছেন।"
তারেক রহমান আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ষড়যন্ত্রগুলো এখনই থেমে থাকবে না, বরং আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিনি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, "আমাদের ভয় পেলে চলবে না, আমাদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত হলে চলবে না। আমাদেরকে মানুষদের সাহস দিতে হবে, আমাদের নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দেশের সাধারণ গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা যত ঐক্যবদ্ধ হবো, আমরা যত সামনে এগিয়ে আসবো, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন হবে…এই পরিস্থিতি যত আমরা তৈরি করবো, ষড়যন্ত্রকারীরা তত পিছু হটতে বাধ্য হবে।" তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন, ষড়যন্ত্রকারীদের পিছু হটানোর ক্ষমতা ও শক্তি একমাত্র বিএনপিরই আছে।
চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুই প্রার্থীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, "এই ঘটনা দিয়ে কেউ কোনো ফায়দা লুটার অবশ্যই প্রচেষ্টা হচ্ছে…তাই মনে হয় না আপনাদের?" তিনি সকলকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন।
কর্মশালার বিষয়বস্তু ও 'যুদ্ধে নামার' আহ্বান
ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে 'দেশ গড়ার পরিকল্পনা' শীর্ষক এই কর্মশালায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাল খনন, স্বাস্থ্য কার্ড, কৃষক কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড, শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকার সমস্যা, তথ্য প্রযুক্তি, বায়ু ও পানি দূষণ রোধ প্রভৃতি বিষয়ে বিএনপির প্রণীত পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "এখন আমাদের সময় এসেছে, আমি কি পেলাম… এটা বাদ দিতে হবে। সময় এসেছে, আমি দেশ এবং জাতির জন্য কতটুকু করতে পারলাম।" তিনি কর্মীদের প্রতি নিজের স্বার্থ ভুলে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আজকে আপনি যদি দেশ এবং জাতির জন্য কিছু করেন কিংবা করতে পারেন... তাহলে আগামী দিনে আপনার সন্তান, আপনার নাতি-পুতি, এরা ভালো থাকবে। আসুন আমাদের লক্ষ্য হোক দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করা।"
ধারাবাহিক কর্মশালার সপ্তম দিনের এই আয়োজনে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে তিনি 'যুদ্ধে নামতে' আহ্বান জানিয়ে বলেন, "এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। দয়া করে আসুন, এই যুদ্ধে আমাদেরকে জিততে হবে... বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে এই যুদ্ধে আমাদেরকে জিততে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।" তিনি তিনটি বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, "দেখা হবে যুদ্ধের মাঠে, দেখা হবে সংগ্রামের মাঠে, দেখা হবে আপনাদের সাথে ভোটের ময়দানে।"
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, এবং সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।