Image description
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া, কাল নেয়া হচ্ছে লন্ডন

গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় সঙ্গী হতে ঢাকায় এসেছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে শয্যাশায়ী শাশুড়িকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ওদিকে লন্ডনে মায়ের অপেক্ষায় আছেন পুত্র বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কারিগরি ত্রুটির কারণে কাতারের আমীরের বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স না পৌঁছানোয় খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। তবে জার্মানি থেকে বিকল্প এয়ার এম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার। সেটি শনিবার বিকাল নাগাদ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেই এয়ার এম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোববার তাকে লন্ডনে নেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

গত ২৩শে নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ২৭শে নভেম্বর থেকে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় ওই হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে চিকিৎসা চলছে তার। গতকাল রাতে হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কপি করা হয়। পরে তার আরেকটি মাইনর অপারেশন সম্পন্ন হয়। রাতে এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করেন। সেখানে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা ওঠে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা এখনো ক্রিটিক্যাল। ঝুঁকিমুক্ত নন। উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। সিসিইউতেই আছেন। মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে শুক্রবার রাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সূত্রটি আরও জানায়, খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর শনিবার এয়ার এম্বুলেন্স  পৌঁছাতে পারে ঢাকায়। এয়ার এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলেও খালেদা জিয়াকে ১৩ ঘণ্টা বিমানে রেখে লন্ডনে নেয়া সম্ভব হবে কি না- তা পুরোপুরি তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। সূত্রটি জানিয়েছে, সবচেয়ে ভালো লক্ষণ হলো- খালেদা জিয়ার চেস্ট (বুক) পরিষ্কার হচ্ছে, এটা সবচেয়ে ভালো লক্ষণ। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় যেখানে কফ জমে ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে তার হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা কাটছে না। চিকিৎসায় এই সমস্যাগুলোর একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে। যা কয়েক দিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকরা এখনো এই অর্থে আশাবাদী যে, তারা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। আর ওষুধও কাজ করছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, নতুন করে কিছু বলার মতো সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে। তিনি মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে সিসিইউতে নিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছেন।  

এয়ার এম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে আজ: সবকিছু ঠিক থাকলে আজ দিনের যেকোনো সময় এয়ার এম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। শারীরিক অবস্থাসহ চিকিৎসকদের অনুমতি মিললে আগামীকাল দিনের অগ্রভাগে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেয়া হতে পারে। শুক্রবার দিনের প্রথমভাগে কাতারের আমীরের বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। তাকে ভর্তি করা হবে অত্যাধুনিক লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে। কিন্তু এম্বুলেন্সের কারিগরি জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা জানায় কাতার সরকার।

বিএনপি’র মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, কাতার রাজপরিবারের এয়ার এম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটির কারণে আমীর তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্য একটি এয়ার এম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। এখন যে এয়ার এম্বুলেন্সটি আসছে সেটিও কাতারের এয়ার এম্বুলেন্স। কিন্তু জার্মানি কোম্পানির তৈরি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার এম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে। ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ৭ই তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন।

ওদিকে এয়ার এম্বুলেন্স আজ ঢাকায় আসলে রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নয়াপল্টনের জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়া মাহফিলের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কিনা সেটা ডাক্তাররা বা মেডিকেল বোর্ড নিশ্চিত করলেই তাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে লন্ডন নিতে হবে। চিকিৎসকরা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন এবং আশা করছেন যে, তিনি শনিবার যদি এয়ার এম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় কাতার থেকে তাহলে রোববার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এয়ার এম্বুলেন্স দ্রুত আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।  
ফখরুল বলেন, এই নেত্রী সারাটা জীবন এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। বিগত হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার তার প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছেন, নির্যাতন করেছেন, নিপীড়ন করেছেন। দীর্ঘ ৬ বছর তাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে দুই বছর তাকে নির্জন কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করে সেখান থেকে তার এই রোগের সূচনা হয়। একটা অপরাধমূলক অবহেলা, সুচিকিৎসার অভাবে এই কারণে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সারা দেশে জুমার নামাজের পর বাংলাদেশের মানুষ দল-মত-নির্বিশেষে এই মহান নেত্রীর আরোগ্য লাভের জন্য মানুষ আল্লাহতায়ালার কাছে চেয়েছেন। আমি আবারো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, তাকে সুস্থ করে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

খালেদা জিয়ার পাশে জুবাইদা রহমান: খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় সঙ্গী হতে ঢাকায় পৌঁছেছেন জুবাইদা রহমান। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে (বিজে-৩০২) ডা. জুবাইদা রহমান দেশের পথে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছান শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে। সেখান থেকে সরাসরি হাসপাতালে যান। এ সময় শাশুড়িকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন তিনি। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন মানবজমিনকে বলেন, ম্যাডামকে দেখে ভাবি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ম্যাডামের পাশে ছিলেন ভাবি। সেখান থেকে পরে ধানমণ্ডিতে বাবার বাসা মাহবুব ভবনে আসেন। রাতে তিনি বাবার বাসাতেই থাকবেন বলেও জানান রুমন। 

বিমানবন্দরে জুবাইদা রহমানকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক রিচার্ড জন বিল, জুবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর সৈয়দ শফিউজ্জামান ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল ইসলাম শামস, শারমীন আখতার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মঈনুল হোসেন।

চলতি বছরের ৭ই জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেয়া এয়ার এম্বুলেন্সে করেই লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসা শেষে চার মাস পর ৫ই মে কাতারের আমীরের দেয়া এয়ার এম্বুলেন্সেই দেশে ফিরেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তখন তার সঙ্গে দেশে এসেছিলেন পুত্রবধূ জুবাইদা। 

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারা দেশে দোয়া: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারা দেশের মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন জুমার নামাজের পর বঙ্গভবনের মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। 
এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গভবন জামে মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেন। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল কবির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন। খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।