নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নে কনের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে সাউন্ডবক্সে গান বাজানোর অপরাধে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবদলের নেতার ডাকা সালিশি বৈঠকে কনের বাবা, মা ও ভাইকে প্রকাশ্যে ১০টি বেত্রাঘাত করা হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন সালিশদার স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম উদ্দিনসহ আলাউদ্দিন মাঝি।
এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গেলে ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এটা আমার এলাকার ব্যাপার এখানে সাংবাদিকদের নাক গলানোর কী আছে?
কনের পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, ঘটনাটি ২০ অক্টোবর ঘটলেও এটি সামনে আসে জরিমানার টাকার জন্য বৃহস্পতিবার কনের ভগিনীপতির অটোরিকশা আটক করার পর। কনের পরিবার সূত্র জানায়, ২০ অক্টোবর কনের বিয়ের তারিখ ছিল। আগের দিন সন্ধ্যায় তার গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে বাড়ির ছেলেমেয়েরা সাউন্ডবক্সে গানবাজনা করে। এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিনকে দাওয়াত না দেওয়ায় আফসার উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির সামনে এসে কনের ভাইকে ডেকে এনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা এসে তাদের থামিয়ে দেন। তখন আফসার উদ্দিন কনের পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
পরদিন সন্ধ্যায় আফসার উদ্দিন উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম উদ্দিন ও আলাউদ্দিন মাঝিকে নিয়ে কনের পরিবারের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক বসান। তখন শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সালিশদাররা কনের পরিবারের কোনো কথা না শুনে এক তরফা নালিশ করে গান বাজানোর অপরাধে কনের বাবা, মা ও ভাইকে ১০টি বেত মারা এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
সালিশদার কৃষক দল নেতা তসলিম উদ্দিন কানের বাবা ও ভাইকে ১০টি করে বেত্রাঘাত করে রক্তাক্ত করেন এবং জরিমানার ২৫ হাজার টাকা আদায় করেন।
বাকি ২৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) কনের ভগিনীপতির অটোরিকশা আটক করেন। এ অটোরিকশা আটকের সূত্র ধরেই ঘটনাটি সাংবাদিকদের নজরে আসে।
বিষয়টি যুগান্তরসহ কয়েকটি পত্রিকার অনলাইনে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হাতিয়াসহ নোয়াখালী জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠন তোলপাড় শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এটা আমার এলাকার ব্যাপার এখানে সাংবাদিকদের নাক গলানোর কী আছে? ওরা আমার ৫০ হাজার টাকা ছিনতাই করছে। এখন এতদূর যখন গড়িয়েছে; তখন শুধু ৫০ হাজার টাকা নয়, তাদের হাতিয়া ছাড়া করব।
সালিশদার আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, সালিশে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার প্রমাণ হয়নি। তবে গানবাজনা বাজানোর কারণে তাদের ১০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। বেত্রাঘাত করেছেন উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম উদ্দিন।
কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম উদ্দিন বলেন, সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি ১০টি করে বেত্রাঘাত করেছি। তাদের ধস্তাধস্তির সময় আফসার উদ্দিনের ৫০ হাজার টাকা খোয়া গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাই ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এরা যেহেতু সাংবাদিকদের এসব জানাচ্ছে তারা কী হাতিয়া থাকতে পারবে? বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের এলাকা ছাড়া হতে হবে।
এ ব্যাপারে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আজমল হুদা বলেন, ঘটনা শুনেছি, কেউ কোনো অভিযোগ না করলে তো পুলিশ কিছু করতে পারে না।
হাতিয়ার ইউএনও মো. আলাউদ্দিন জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম বলেন, অনলাইন রিপোর্টে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার নজরে এসেছে। আমি ইউএনও সাহেবকে যত্নসহকারে খোঁজখবর নিয়ে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। কারণ কাউকে বেত্রাঘাত করা বা একঘরে করে রাখার অধিকার রাষ্ট্র কাউকেও দেয়নি।