সবার আগে প্রার্থী তালিকা দিয়ে ভোটের ময়দানে অবস্থান নিলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় আনা হচ্ছে বড় ধরনের পরিবর্তন। চলমান আন্দোলনের শরিক দল, মহিলা, অমুসলিম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করতেই জামায়াত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। জামায়াতের নির্বাচনি টিম বর্তমানে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ করছে যাতে থাকছে বড় চমক।
চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে নির্বাচনি মাঠে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে। প্রার্থীরা মাঠে রাত-দিন কাজ করছেন। সব আসনেই তাদের একক প্রার্থী। এমন কোনো আসনের কথা শোনা যায়নি যেখানে জামায়াতের একাধিক প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থী আছে। অধিক সময় ময়দানে থাকার কারণে প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে জুলাই সনদের ওপর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করাসহ ৫ দফা দাবিতে সমমনা আরও ৭টি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে জামায়াত।
৮ দলের শরিক অপর ৭টি দলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন ছাড়বে জামায়াত। এই জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজ করছেন। জামায়াত শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, ৮ দলের শীর্ষ নেতাকে তারা সংসদে দেখতে চান। ইতঃপূর্বে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনায় দলীয় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, সব ইসলামপন্থিদের এক ছাতার নিচে আনতে জামায়াত প্রয়োজনে ১০০ আসন ছাড় দেবে। তবে ৮ দল এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা এখন একমত যে, যাকে যে আসনে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবে তাকে সেখান থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি শরিকদের মধ্যে যে দলেরই হন। সবাই তার জন্য কাজ করবেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের যুগান্তরকে বলেন, ৮ দলের শরিকরা কেউই এখন আসন সংখ্যার ভাগাভাগিতে নেই, তারা এখন বিজয়ী হতে চান এবং ইসলামকে বিজয়ী করতে চান। যাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দিলে জিতবে তাকেই চূড়ান্ত করবে ৮ দল। ইসলামপন্থিদের বাক্স হবে একটি। শুধু ৮ দল নয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান তারা।
সূত্রমতে, জামায়াতের ইতঃপূর্বে ঘোষিত তালিকায় বড় পরিবর্তন আসবে শরিকদের জন্য। এর পাশাপাশি অন্তত ৪ জন সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন। সম্প্রতি সমাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ৩ জন ভিপি এবং ২ জন জিএসসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকে জামায়াত মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। যাদের সবাই জুলাই আন্দোলনে ছিলেন সম্মুখসারির নেতা। একজন উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন সম্মুখসারির জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতার জন্য ওইসব আসন ছাড় দিতে পারে জামায়াত। তাদের সঙ্গে জোট করার চিন্তা-ভাবনা থাকলেও যদি জোট না হয় তারপরও কয়েকজনের জন্য আসন ছাড় দিতে পারে জামায়াত।
ইতোমধ্যে বর্তমান সময়কার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামিক বক্তা ও স্কলার মিজানুর রহমান আজহারিকে জামায়াত ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ী-ডেমরা) আসনে মনোনয়ন দিচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জামায়াত সূত্র অবশ্য এ তথ্য সরাসরি অস্বীকার করেনি। উপরন্তু যোগ করেন যে, জামায়াত দেশের খ্যাতনামা জনপ্রিয় আলেমদের সংসদে নিয়ে আসতে চায়। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে আরেক জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা আমির হামজার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও যারা জনপ্রিয় আলেম কিন্তু সরাসরি জামায়াত করেন না তাদেরও মনোনয়ন দিয়ে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চলছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জামায়াত ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে-মন্দির পাহারা, পূজার নিরাপত্তা বিধান করাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় এবং জানমালের হেফাজতের জন্য জামায়াতকে তারা বিশ্বাসী মনে করে। এজন্য অমুসলিম সম্প্রদায় থেকে একাধিক প্রার্থী দিতে পারে দলটি। সেক্ষেত্রে একজন উপজাতি প্রার্থীও হতে পারেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতের ইতঃপূর্বে ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় কোনো মহিলা ছিলেন না। জানা গেছে, চূড়ান্ত তালিকায় বেশ কয়েকজন মহিলা প্রার্থী হিসাবে যুক্ত হতে পারেন। এসব মহিলার অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত ও সুপরিচিত।