Image description

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়া দলের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার দুটি সংসদীয় আসন হাতছাড়া হয় বিএনপির। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের ‘হারানো দুর্গ’ পুনরুদ্ধারে মাঠে জোরেশোরে নেমেছে বিএনপি। 

১২ উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়ায় সংসদীয় আসন রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে দুটি আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা। কোনো নির্বাচনে না হারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবারও লড়বেন বগুড়া-৭ আসনে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নামছেন বগুড়া-৬ আসনে।

বিএনপির দুই শীর্ষ রাজনীতিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে তৎপর জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় জেলার অন্য আসনগুলোতেও প্রচারে নেমেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদও মাঠে সক্রিয় আছে। এ ছাড়া জেলার সাতটি আসনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে ১৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী রাফিয়া সুলতানা।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) 

বগুড়া–১ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে। বর্তমানে তিনি গণসংযোগ, কর্মী সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে পাশে পাচ্ছেন না দলের একাংশের নেতা–কর্মীদের।

সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব (জাকির) আসনটিতে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হলে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ তবে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, ধানের শীষের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’

জামায়াত এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য শাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। ইসলামী আন্দোলন এ বি এম মোস্তফা কামাল পাশাকে এবং বাসদ শাহজাহান আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ)

জেলায় একমাত্র বগুড়া–২ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এবারও বিএনপি আসনটিতে তাঁকে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। ইতিমধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এই আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ আসনে জামায়াত সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাতুজ্জামানকে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি জামাল পাশা ও বাসদের মাসুদ পারভেজও মাঠে আছেন।

যদিও এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী  শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর শাহে আলম। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশমতো ধানের শীষের পক্ষে জনমত গঠন ও দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ভোট যদি হয়, আমি এখানে দাঁড়াব। আমার দল আছে, দলের নিবন্ধন আছে; মার্কা (প্রতীক) আছে। আমার মার্কায় আমি ভোট করব।’

বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি)

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার। অন্যদিকে জামায়াত দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরকে প্রার্থী করেছে। ইসলামী আন্দোলনের শাজাহান তালুকদার ও বাসদের সুরেশ চন্দ্র দাসও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

 আবদুল মহিত তালুকদার বলেন, তাঁর বাবা ও বড় ভাই এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ধানের শীষের জোয়ারের সঙ্গে এলাকায় পারিবারিক জনপ্রিয়তায় জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু)

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনকে এবারও আসনটিতে প্রার্থী করেছে বিএনপি। মোশারফ হোসেন বলেন, ধানের শীষের পক্ষে চারদিকে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। মানুষ ভোটের উৎসবের জন্য মুখিয়ে আছে। 

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। তিনি ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি। ইসলামী আন্দোলন এখানে  ইদ্রিস আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাসদ প্রার্থী করেছে দলের জেলা সদস্য সাইফুজ্জামান টুটুলকে।

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)

এ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। জামায়াত এখানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির দবিবুর রহমানকে প্রার্থী করেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সন্তোষ সিংকে প্রার্থী করেছে বাসদ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মীর মাহমুদুর রহমান।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’

বগুড়া-৬ আসন (সদর)

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জয়ী হয়ে এসেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এবার এখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, বগুড়া বিএনপির দুর্গ ছিল, এখনো অক্ষুণ্ন আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখানে প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের ভোটারের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। সব রেকর্ড ভেঙে তারেক রহমান সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে তিনি আশাবাদী।

এ আসনে শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমানকে (সোহেল) প্রার্থী করেছে দলটি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর বগুড়ার রাজনীতির চিত্র পাল্টে গেছে। বগুড়া কোনো দলের একক দুর্গ নয়, আগামী নির্বাচনে ভোটাররা তা প্রমাণ করে দেবেন।

এ আসনে বাসদ দলের জেলা সদস্যসচিব দিলরুবা নূরীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন মনোনয়ন দিয়েছে আ ন ম মামুনুর রশিদকে।

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি গাবতলী উপজেলার সঙ্গে শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনে বরাবর প্রার্থী হয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জেতেন তিনি। তবে তিনি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে তিনবার জয়ী হন বিএনপির স্থানীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, একবার উপনির্বাচনে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনা হয় কেন্দ্রীয় নেতা মওদুদ আহমদকে।

আসন্ন নির্বাচনেও এখানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াত প্রার্থী করেছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানীকে। এ ছাড়া মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও বাসদের শহিদুল ইসলাম।

জামায়াতের প্রার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগেও করেছি। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ভোট দিতে পারেননি ভোটাররা। গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপারসন প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা উচ্ছ্বাস–আবেগে ভাসছেন।