Image description
 

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। সিডরের দুর্বিষহ স্মৃতি আজও বহন করছে উপকূলের মানুষ। একই ভয় নিয়ে দিনযাপন করছেন উপকূলের মানুষ।

একসঙ্গে পরিবারের পাঁচজনকে হারিয়েছেন শরণখোলা উপজেলার চালতাবুনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ মোশারফ হাওলাদার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঝড়ের দিনটা এখনো চোখের সামনে ভাসে। ঝড়ে বাড়িতে থাকা বাবা (আব্দুল করিম), মা (মোসাম্মৎ কুলসুম), বোন (মোছাম্মৎ আকলিমা), স্ত্রী ও দুই মাসের মেয়েকে একসঙ্গে হারাই। সন্ধ্যা থেকে ঘরে পানি বাড়তে থাকায় ঘরের মাচায় উঠে আশ্রয় নেন তারা। ঝড়ে ঘরের উপর গাছ পড়ে আটকা পড়ে মারা যায় সবাই। আমি কাজের জন্য ভান্ডারিয়া থাকায় মরদেহ কবর দেওয়ার সময় কারো মুখও দেখতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক জমি ছিল। সিডর ও নদীভাঙনে সব শেষ গেছে। এখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলছে।’

১৮ বছর পরও একই ভয়, অরক্ষিত উপকূল

 

মোরেলগঞ্জের আমতলার গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি সিডরের সময় মারা যান। আমরা তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভাসতে আছি। আমাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার তো কিছু করেই না আর আমাদের নেতারাও কিছু করে না। আমাদের একটা বেড়িবাঁধ দিছে তাও ভেঙে নদীতে গেছে। শুনছি কয়েকশ কোটি টাকা দিয়ে বেড়িবাঁধ নাকি করছে কিন্তু তা কোনো কাজে আসে না। সব ভেঙে চুরে নদীতে গেছে। এখন বন্যা আসলে আমরাও মারা যাব।

মোরেলগঞ্জের আমতলার গ্রামের বাসিন্দা রমজান শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিডরের কথা এখনো মনে পড়লে চোখ দিয়ে পানি আসে। নতুন বেড়িবাঁধের কয়েক জায়গা থেকে ভেঙে গেছে। এখন যদি নদীশাসন না করে তাহলে তো এই বেড়িবাঁধের কোনো মূল্য নেই। এমন পরিস্থিতি থাকলে আমাদের পরিস্থিতি সিডরের থেকেও ভয়াবহ হবে।’

 

১৮ বছর পরও একই ভয়, অরক্ষিত উপকূল

রমজান শেখ আরও বলেন, ‘সিডরের সময় আমাদের অনেক ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়। পরে নদীভাঙতে ভাঙতে অবশিষ্ট ফসলি জমিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীতে মাছ ধরি আর পরের জমিতে কাজ করে খাই।’

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ও ব্লকগুলো হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে নরম হয়ে ভেঙে পড়েছে। বাঁধের বেশ কয়েকটি জায়গা ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো মেরামতের জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে আর বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।’

সরকারি হিসাবে সিডরে বাগেরহাটে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯০৮ জন। আহত হয়েছিলেন ১১ হাজার ৪২৮ জন। সিডরে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয় ৬৩ হাজার ৬০০ বাড়িঘর। আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ৬ হাজার বাড়িঘর। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক, কাঁচা সড়ক ধ্বংস হয় প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মারা যায় ১৭ হাজার ৪২৩টি গবাদিপশু। বিনষ্ট হয় ১২ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল ও ৮ হাজার ৮৮৯ হেক্টর চিংড়ি ঘের।