আওয়ামী লীগ শাসন আমলের ষোলো বছরেও এতটা নিস্তব্ধ হয়নি পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দাপট আর পুলিশ-প্রশাসনের রক্তচক্ষু কখনো দমাতে পারেনি তাদের। কিন্তু কেন্দ্রের এক সিদ্ধান্তে দমে গেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
হঠাৎ করেই উপকূলীয় এ জনপদের রাজনীতিতে যেন সুনসান নীরবতা। রাগ, ক্ষোভ আর অভিমানে নেতাকর্মীরা মনমরা হয়ে ঘরমুখি হচ্ছেন।
মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। সেখানে এ আসনটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এতেই দশমিনা-গলাচিপার রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়।
এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হাসান আল মামুন। যিনি একাদশ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে শেষ পর্যন্ত পাননি। ওই নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষে ভোট করেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি এবারও এই আসন থেকে ভোট করতে চান। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকও নুর এই আসন থেকে ভোট করতে চান।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন ছিল পটুয়াখালী-৩ আসনটি বিএনপির মিত্র গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছেড়ে দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নুরকে আসন ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনার খবর প্রকাশ হলে অনেকটা ভেঙে পড়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির দা-কুমড়ো সম্পর্ক। গত জুনে গলাচিপায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ ওঠে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একইভাবে নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সে সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, স্বাধীনতার পর সরাসরি জনগণের ভোটে ও প্রতিযোগিতামূলক কোনো সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি একবারের জন্যও এ আসনটিতে জয়লাভ করতে পারেনি। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও জনগণের কাছে আস্থা অর্জন না করতে পারা ছিল এর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে, এই প্রথম কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে কেন্দ্র করে এখানে ইতিহাস রচনার সুযোগ থাকলেও জোটের গুঞ্জনে সে স্বপ্নে গুড়েবালি।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ-আলমকে করা হয়েছে প্রার্থী। একইভাবে হাফেজ মাওলানা মুফতি আবু বকর সিদ্দীক নামে একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। সে সময় দশমিনা-গলাচিপায় নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে ফের পদত্যাগের হিড়িক পড়বে বলে দাবি স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, হাসান মামুনকে একক প্রার্থী হিসাবে গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছিল। এতে দলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছিলেন এই প্রথম আসনটি বিএনপির দখলে যাবে। কিন্তু আসনটিতে এখনও বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ। তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলের বাইরে জোটের কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে ধস তো নামবেই সঙ্গে আর কোনো দিন এ আসনটি বিএনপির ঝুলিতে যাবে না।
তিনি বলেন, হাসান মামুনের বাইরে মনোনয়ন দেওয়া হলে তা আমরা মেনে নেব না। তিনি দাবি করেন, হাসান মামুন ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে জামায়াত প্রার্থী নিশ্চিত এমপি নির্বাচিত হবেন।
উপজেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি কেএম ইমরান শাহিন বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটের এখনও কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। দল থেকেও তৃণমূলে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বিএনপির সঙ্গে জোট ঘোষণা হলে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে গণঅধিকার।