শীত মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যেত। কিন্তু দুই বছর ধরে শীতেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গত বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল নভেম্বরে। চলতি বছরের তথ্য বলছে, এবারও ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হতে পারে এ মাসেই।
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছে তিন শতাধিক মানুষের। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ এবং যুবক। শুধু ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু হয়েছে ১৫৩ জনের। ২০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মারা গেছেন ৭৭ জন।
সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের আগস্টে যত রোগীর মৃত্যু হয়েছিল, অক্টোবরে সেই সংখ্যার দ্বিগুণ মানুষ মারা গেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫২ জন। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিলেন নভেম্বরে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর হলে তা ডেঙ্গু ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করাতে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নভেম্বরে ডেঙ্গুর বিস্তার কমার সম্ভাবনা খুবই কম। রোগতাত্ত্বিক ত্রিভুজ বন্ধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। গ্রামগঞ্জে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। এটি ভয়ের বড় কারণ।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই মৃত্যুর হার রোধ করতে পারছে না। অথচ এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য। ডেঙ্গু এখন একটি জরুরি পরিস্থিতি। যে কোনো জ্বর-সর্দি উপসর্গে অবহেলা না করে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা জরুরি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে—১৫৩ জন। মোট ৩০৭ জন মৃত্যুর মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে ২২ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৫৫ জন, ৪৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫২ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ২৪ জন।
অধিদপ্তর জানায়, অক্টোবরেই ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৫২০ জন, মারা গেছেন ৮০ জন। সেপ্টেম্বরে ভর্তি ছিল ১৫ হাজার ৮৬৬ জন, মৃত্যু ৭৬ জন। জুলাইয়ে ভর্তি ১০ হাজার ৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১ জন। জানুয়ারিতে ভর্তি ছিল ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, জুনে ৫ হাজার ৯৫১, আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫২ জন। মার্চে কোনো মৃত্যু হয়নি। জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিন, জুনে ১৯, আগস্টে ৩৯ এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মৃত্যু ২৯ জন।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুহীন এক দিনে ডেঙ্গুতে নতুন করে ৪৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৫১৪ জন।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক দিনে ১৮৯ জন রোগী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণে ৪৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৮, চট্টগ্রামে ৬৬, ময়মনসিংহে ৪৬ এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ৮৪ জন ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভর্তি ৭৬ হাজার ৫১৪ জনের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭২ হাজার ৯৬৬ জন। মারা গেছেন ৩০৭ জন।