জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও জুলাই সনদে এখনো স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালাচ্ছে। আইনি ভিত্তি পরিষ্কার হলে এনসিপি সনদে সই করবে। এরপর তারা নির্বাচনী তৎপরতায় ঢুকবে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আছে। জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। ৩১ অক্টোবরের আগেই এনসিপির জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে গত বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য এনসিপির প্রতি আহ্বান জানান। এনসিপির দিক থেকে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করার দাবি জানায় এনসিপি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা আইনি ভিত্তি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন কী সুপারিশ করে এবং তার ভিত্তিতে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করছে এনসিপি।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপির কেউ যাননি। সেদিন সকালে দলটির পক্ষ থেকে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ ও গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে; গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী, আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতাবলে সংবিধান সংস্কার করবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা আইনি ভিত্তি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন কী সুপারিশ করে এবং তার ভিত্তিতে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করছে এনসিপি। তাদের শর্ত বা এর কাছাকাছি সিদ্ধান্ত যাতে সরকার নেয়, সে জন্য সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে দলটি। আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবে বলে দলটি গতরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে এনসিপি। সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব
এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা আশা করছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে তাঁদের শর্তের প্রতিফলন থাকবে। সেটি হলে ৩১ অক্টোবরের আগেই তাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন। এরপর দলের নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।
দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আগামী মাসের শুরুর দিকে এনসিপি কিছু দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পারে। তবে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে তৃতীয় একটি জোটে গিয়ে নির্বাচন করা অথবা এককভাবে নির্বাচন করা—এই দুটোর যেকোনো একটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো বড় দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হতে পারে।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবে বলে দলটি গতরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে এনসিপি। সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।’