Image description
 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনে। রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান-সব জায়গায় নির্বাচনের আলোচনা। ইতোমধ্যে এসব আসনে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি দল তাদের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। প্রার্থীরা গণসংযোগও শুরু করেছেন। যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে। তবে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থা ‘লেজেগোবরে’। দলটি এখনো কোনো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ কারণে ভোটারদের মধ্যে একই প্রশ্ন-কারা হচ্ছেন এসব আসনে বিএনপির প্রার্থী।

 

জেলার ৬টি আসনের প্রতিটিতে ৭ থেকে ৮ জন বিএনপি নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রায় সবাই কর্মিসভা, আলোচনা সভাসহ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এতে এলাকায় এক ধরনের নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। তবে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। এদিকে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি গ্রুপিং আর কোন্দলে জর্জরিত। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার বলে মনে করছেন মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। তা না হলে নির্বাচনে কঠিন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) : বিএনপি থেকে দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন জেলা কমিটির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান মামুন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হান্নান, জেলা বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেএম বশির উদ্দিন তুহিন, জেলা বিএনপির পরিবেশবিষয়ক সহসম্পাদক ড. শামসুল হক কিবরিয়া, নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আযম চৌধুরী ও প্রিন্সিপাল এমএ মোনায়েম। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মাঠে রয়েছেন শাহানুল করমি গরীবুল্লাহ।

জামায়াতে ইসলামীর জেলা জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য ও নাসিরনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক (অব.) একেএম আমিনুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা সাইফুল্লাহ বিন আনসারী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) : এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এসএন তরুণ দে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শেখ মোহাম্মদ শামীম, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান শিপন, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ও ডাক্তার নাজমুল হুদা বিপ্লব। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোবারক হোসাইন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ উদ্দিন মাহদী, ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী হয়েছেন নেছার আহমেদ নাছেরী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মাইনুল ইসলাম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (জেলা সদর-বিজয়নগর) : এ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। ২০১১ সালের উপনির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জোনায়েদ হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মনোনয়ন চাইবেন যুগ্ম সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা গাজী নিয়াজুল করিম এবং খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মুহসিনুল হাসান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা খন্দকার, জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাছির উদ্দীন হাজারী, সাবেক আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুসলেম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার। ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুফতি জসিম উদ্দিন এবং খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা জয়নাল আবেদীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) : এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন জেলা বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সায়েদুল হক সাঈদ, কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা তকদীর হোসেন মো. জসিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক কেএম মামুন অর রশিদ, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু ও উচ্চ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল বাকি। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আব্দুল বাতেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ূম ফারুকী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন সাবেক সংসদ-সদস্য এমএ খালেক, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ও বাঞ্ছারামপুর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ।

এছাড়া জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি এবং খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আবদুল মজিদ। তবে জোটগত কারণে এ আসনটি গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকিকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।