Image description

বিশখালী নদীর তীরে অবস্থিত রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-১ সংসদীয় আসন। এ আসনে ইতোপূর্বে হেভিওয়েট প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, যারা পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। এ কারণে আসনটির বেশ গুরুত্ব। বরাবরই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে এবার দলটির চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে।

জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির এ ঘাঁটিতে দলটির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মূল আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল ও নিউইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা।

এছাড়াও মাঠে সক্রিয় আছেন জাতীয়তাবাদী গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ও আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান এবং জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ড. জাকারিয়া লিংকন।

এ আসনে বিএনপির নির্বাচনি প্রচারে ব্যতিক্রম একটি বিষয় লক্ষ করা গেছে। এখানে দলটির আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রফিকুল ইসলাম জামাল ছাড়া বাকি সাতজন একসঙ্গে নির্বাচনি প্রচারসহ দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন।

বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা রফিকুল ইসলাম জামাল ২০০৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বজলুল হক হারুনের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শাহজাহান ওমরকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

রফিকুল ইসলাম জামাল আমার দেশকে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে গিয়ে জেলজুলুম-হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। তাই আমি মনে করি, দল এবার আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এ ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।

এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন নিউইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা। তিনি বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এবং ঝালকাঠি জেলা বিএনপিরও সাবেক সদস্য ছিলেন। সেলিম রেজা বলেন, ২০২৩ সালের ১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সামনে শেখ হাসিনার আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ি। ঢাকায় ও গ্রামের বাড়িতে আমার স্বজনদের ডিবিপুলিশ পাঠিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। ১২ বছর দেশে আসতে পারিনি। এমনকি মায়ের মৃত্যুর পরও দেশে ফিরে জানাজায় অংশ নিতে পারিনি। এখন নির্বাচনি এলাকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচিত হয়ে রাজাপুর-কাঠালিয়ায় যুগান্তকারী উন্নয়ন করব ইনশাআল্লাহ।

ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম বলেন, একযুগ ধরে এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ জনসেবামূলক বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। টিভি টকশোসহ বিএনপির ইন্টেলেকচুয়াল কার্যক্রমে আমি সব সময় সক্রিয় আছি। এবারও আমি ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইব।

গোলাম আজম সৈকত বলেন, আমি ২০১৮ সালেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছিল। গত ১৬ বছরে দুইবার জেলে গিয়েছি। আশা করি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।

রফিক হাওলাদার বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার আমার নামে ৫০টির বেশি মামলা দিয়েছে, ছয়বার জেলে গিয়েছি। গত ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। আশা করি, বিএনপি আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।

ব্যারিস্টার মঈন আলম ফিরোজী বলেন, দল ও জনগণ এখন ক্লিন ইমেজের লোক চায়। রাজাপুর-কাঠালিয়ায় নেতৃত্বে সংকট রয়েছে, তাই আমি বিএনপির মনোনয়ন চাইব।

কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিয়ে বিএনপিতে যোগদান করি। জুলাই বিপ্লবেও আমরা সক্রিয় ছিলাম। আশা করি, দল আমার অবদান মূল্যায়ন করবে।

এ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য ও রাজাপুর উপজেলা সাবেক আমির অধ্যাপক ডা. মাওলানা হেমায়েত উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে এর পাঁচ মাস পরে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রখ্যাত আলেম কায়েদ সাহেব হুজুরের দৌহিত্র অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ড. ফয়জুল হককে দলীয় সমর্থন জানায় জেলা জামায়াতে ইসলামী।

গত ৪ আগস্ট ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে ড. ফয়জুল হক জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তার স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। বর্তমানে তিনি নির্বাচনি এলাকায় স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঝালকাঠি-১ আসনের পূর্বঘোষিত প্রার্থীর পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল হককে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি আমার দেশকে নিশ্চিত করেন ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. ফয়জুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামি দল ও মতের সমর্থন ও দোয়া নিয়ে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। আমি সব সময় এলাকার মানুষের পাশে আছি। নির্বাচিত হতে পারলে সমাজসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করব এবং সব ধর্মের লোকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি গড়ে তুলব।

এদিকে ইসলামী আন্দোলনও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজীকে ঝালকাঠি-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, আমার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। মনোনয়ন দিলেও আগামী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আমি নির্বাচন করব কি না।

রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করেন, জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর মধ্যে যদি ঐক্য হয়, তাহলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ঝালকাঠি-১ আসনে দলটিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে এ আসনে এনসিপির কোনো প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রাজাপুর প্রতিনিধি বুলবুল আহমেদ ও কাঠালিয়া প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদ)