Image description

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে তারা বেশ অগ্রসরও হয়েছে।

তবে সম্প্রতি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোট হচ্ছে, এমন গুঞ্জনে রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো শক্তি বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগে দুই মেরুতে অবস্থান করলেও, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐক্যের সুর দেখা যাচ্ছে। আর এই কর্মকাণ্ডের অগ্রভাগে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে তারা একটি বৃহত্তর শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, দেশের বিশিষ্ট আলেমসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে। এসব আলোচনায় মূলত ইসলামপন্থি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসলামপন্থি দলগুলোকে নিজেদের জোটে আনতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে দলের শীর্ষ নেতারা কয়েকটি ইসলামি দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপির এসব তৎপরতা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া জামায়াতে ইসলামী শেষ পর্যন্ত কোন কোন দলকে পাশে পাবে, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। সেক্ষেত্রে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে তারা। ইতোমধ্যে উভয় দলের মধ্যে কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। তবে এক সময় জামায়াতের কট্টর সমালোচক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনী সমঝোতা প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, একসময় দলের শীর্ষ নেতারা জামায়াতকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের দাবি, দেশ, উম্মাহ ও ইসলামের স্বার্থে কোনো সমালোচনা বা প্রতিবন্ধকতা নির্বাচনী সমঝোতাকে ঠেকাতে পারবে না।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশের ইসলামিক চিন্তাবিদ ও আলেম-ওলামা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে এবারের নির্বাচনে সব ইসলামী শক্তির মধ্যে একটা নির্বাচনী ঐক্য থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের মধ্যে অচিরেই একটা সমঝোতা হতে যাচ্ছে -ইনশাআল্লাহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা হতে পারে, সেখানে আটটি ইসলামী দল থাকবে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের শক্তি ও বলয় বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মিত্রদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জামায়াতে ইসলামীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। তারা নির্বাচনে মাঠের শক্তি বাড়াতে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কাজ করে আসছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোন কোন রাজনৈতিক দল কার সঙ্গে যাবে, সেটি দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। দীর্ঘ দেড় দশক পর জামায়াতে ইসলামী নির্বিঘ্নে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করে। একপর্যায়ে গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে। এর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ১২ দলীয় জোট, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য।  
এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হক (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), আজিজুল হক ইসলামাবাদী (হেফাজতে ইসলাম), আব্দুল মাজেদ আতাহারী (বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি), আবু জাফর কাসেমী (বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন একাংশ), জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমীসহ বিভিন্ন আলেম ও মাদরাসাশিক্ষকের সঙ্গেও জামায়াতের আমির পৃথকভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় করেন।

সূত্র জানায়, ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘নির্বাচনী সমঝোতা’ গড়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী। সেক্ষেত্রে প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে ইসলামী আন্দোলনসহ ছয় দলের সঙ্গে আলোচনা করছে জামায়াত। তবে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলন এককভাবে নির্বাচন করবে কি-না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি ইসলামপন্থি একটি জোট বিএনপির সঙ্গেও সমঝোতায় যেতে পারে বলে আলোচনা আছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমাদের মধ্যে হয়তো বিভিন্ন মতবিরোধ আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ ইসলামী সংগঠনগুলোকে এক জায়গায় দেখতে চায়; বিশেষ করে ভোটের মাঠে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের মতো বড় শক্তি যদি আলাদা থাকে, তাহলে তো ঐক্য ফলপ্রসূ হবে না। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে।