
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানোর এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ইতিমধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বাগেরহাটে সংসদীয় আসন একটি কমে হবে তিনটি। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে বাগেরহাটে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিবিদদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন দুই দলের নেতারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাগেরহাটে বর্তমানে চারটি সংসদীয় আসন রয়েছে। যেখানে চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১ আসন। বাগেরহাট সদর ও কচুয়া নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন। রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন এবং মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৪ আসন।
কিন্ত বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের অংশ হিসেবে একটি আসন বাদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাবে বাগেরহাট-২ ও বাগেরহাট-৩ আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। নতুন বিন্যাসে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর, কচুয়া ও রামপাল) এবং বাগেরহাট-৩ (মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অবহেলিত বাগেরহাটের যদি একটি আসন কমে যায়, তাহলে আরও অবহেলিত হয়ে যাবে এখানের মানুষ। এমনিতেই কোনও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। আবার যদি আসন চারটি থেকে একটি কমে যায়, তাহলে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে। এটা নির্বাচন কমিশনের ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনে তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে।’
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য ও বাগেরহাট-৪ আসনে ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী খায়রুজ্জামান বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন পরিকল্পিতভাবে এটি করেছে। এটি বাগেরহাট-৪ আসন তথা জেলাবাসী কোনোভাবেই মেনে নেবে না। বিশেষ করে বাগেরহাট-৪ আসন ভাঙার চেষ্টা করলে সর্বস্তরের জনতাকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সরকারের নীলনকশা কখনও বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
বাগেরহাট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাগেরহাটের চারটি আসন খুবই প্রয়োজন। এই জেলার জনসংখ্যা কিছুটা কম হলেও আয়তন মোটেও কম নয়। কয়েকটি নদী জেলাটিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছে। জেলায় নয়টি থানা ও তিনটি পৌরসভা রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় জেলার উন্নয়নে চারটি আসন খুবই প্রয়োজন। কোনোভাবে আসন কমানোকে জেলাবাসী মেনে নেবে না। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।’
আসন কমানোর প্রস্তাব দেওয়ার খবরে বাগেরহাট জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজাউদ্দিন মোল্লা সুজন ‘সর্বস্তরের জনতার’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি আমরা দেখতে পেলাম। বাগেরহাট একটি বৃহত্তম জেলা, নয়টি উপজেলায় চারটি আসন নিয়ে গঠিত এটি। ১৯৮৪ সাল থেকে জেলায় চারটি আসন। বাগেরহাটকে তিনটি আসনে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব নিন্দনীয়। বাগেরহাটের জন্য একটি অপমানের। এটি একটি প্রাচীন শহর, এখানে দিন দিন আরও আসন বাড়ানো উচিত। সামনে সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির রেজাউল করিম বলেন, ‘বাগেরহাটে চারটি আসন থেকে একটি কমানোর প্রস্তাবকে আমরা ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি। এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার দাবি জানাচ্ছি। সিদ্ধান্ত না মানা হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।’