
বিতর্ক কিছুতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পিছু ছাড়ছে না। এ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদা বাজি, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অভিযোগ রাজনৈতিক অঙ্গণসহ দেশের সর্বত্রই ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। এসব অভিযোগের দায় নিয়ে অনেককে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সাংগঠনিক শাস্তিকে শুধু লোক দেখানো বলেই মনে করছেন। তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে তুষারকেও শুধু বহিষ্কার করেই দল দায় সেরেছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব এবিএম গাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এনসিটিবির দুর্নীতি নিয়ে প্রথম ঝড় ওঠে। শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগে তাকে দল বহিষ্কার করা হয়। দুদক এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। এরপর এটি চাপা পড়ে যায়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ তায়েব আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এনসিপি নেতা আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের অফিসে কাজ করার অভিযোগ উঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, ‘নগদ থেকে ১৫০ কোটি টাকা বেহাত করেছেন আতিক মোর্শেদ’ এবং ‘নগদে তার স্ত্রীসহ স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন’। তার বিরুদ্ধেও আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গুলশানে এক মহিলা এমপির বাসায় চাঁদা আনতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ পাঁচজন। সে বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এনসিপির নেতাদের বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগের পরও তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং তারা এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের এই বেপরোয়া আচরণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। অনেকের অভিযোগ এনসিপি কোনো মহলের ইন্ধনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি এনসিপির জন্য একটি যথার্থ কর্মসূচি বলেই মনে করি। তবে এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কোনো স্থানে তাদের যে বেপরোয়া ভাব তা রাজনৈতিক সহনশীলতা বা প্রজ্ঞার অভাব বলেই মনে হয়। জুলাই পদযাত্রাকে ঘিরে গোপালগঞ্জে, কক্সবাজারে ও নেত্রকোনায় যা ঘটেছে এর দায় এনসিপিকেই নিতে হবে। গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। আমি তাকে নাই মানতে পারি। কিন্তু তার জন্ম স্থানের লোকজন তো তাকে ভালোবাসে। এটাকে তো আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। তেমনি কক্সবাজারেও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেখানে গিয়ে তাকে গডফাদার বলে কটূক্তি করলে পাটকেল তো খেতেই হবে। নেত্রকোনা জেলাতেও বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর খুব জনপ্রিয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। তার সম্পর্কেও যদি নেত্রকোনায় গিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করা হয় তাহলে তো জনগণ তার প্রতিক্রিয়া দেখাবেই। আসলে এনসিপির এসব বেপরোয়া আচরণ অনেকের কাছে মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে করা। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এটা প্রমাণ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার একটা সূক্ষ্ম কারসাজিও হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনা এনসিপির রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার ফল। তাদের জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি গোপালগঞ্জের ক্ষেত্রে কেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়ে গেল এটি একটি বড় প্রশ্ন। সব মিলিয়ে তাদের বেপরোয়া ভাব রাজনৈতিক অঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এটি কি তাদের পরিকল্পিত নাকি অনভিজ্ঞতা তাও ভেবে দেখতে হবে। অনেকেই মনে করেন নির্বাচন পেছানোর জন্য তারা পরিকল্পিতভাবেই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে এসব করছেন।
এনসিপির এই বেপরোয়া ভাবের জন্য দলটি এখন বহুমুখী সঙ্কটের মুখে। এ দলের নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে দল থেকে পদত্যাগ করছেন। ইতোপূর্বে এ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদা বাজি, নারী কেলেঙ্কারীসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এবার গুলশানে এক মহিলা এমপির বাসায় চাঁদা আনতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ জন হাতেনাতে ধরা পরার পর এ নিয়ে আরো ভয়ংকর কথা বললেন তাদের দলের সাবেক নেত্রী উমামা ফাতেমা। এ দলের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছেÑ এমন অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। গত ২৭ জুলাই ফেসবুক লাইভে উমামা বলেন, ন্যূনতম আত্মসম্মান আছে, এমন কেউ এই প্ল্যাটফর্মে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) টিকতে পারবে না। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে থাকাটা আমার জীবনের একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ছিল। যে মানুষগুলো জুলাইয়ের মধ্যদিয়ে হেঁটে গেছে, আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিল, তারা যখন খুবই সস্তা কাজ করেন, সেটা আসলে নেয়া যায় না। বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে থাকার সময় তিক্ত অনেক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে উমামা ফাতেমা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোডে (উপদেষ্টাদের বাসভবন) বসে ঠিক করা হতো। সেগুলোই বাস্তবায়ন হতো। আমি পুরো প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি বলে মনে হতো। সবকিছু হিজিবিজি লাগতো। বিষয়গুলো এতো অদ্ভুত ছিল যে কোনো কিছুর কোনো ঠিক-ঠিকানা ছিল না। চাঁদাবাজির যে অভিযোগ আসতো, একেকজনের বিরুদ্ধে যে স্বজনপ্রীতি ও শেল্টার দেয়ার অভিযোগ আসত, এগুলো আমি খুব ভালো করেই জানতাম। শুধু চট্টগ্রামের কাহিনী সলভ করতে গেলে অনেকের প্যান্ট খুলে যেত এরকম আরো অনেক জেলার কাহিনী আছে। এগুলো ধরতে গিয়ে দেখেছি, এগুলো তো অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। গত ২৮ জুলাই রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, তাকে ঘিরে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে এবং এর পেছনে ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ জড়িত। পরে আবার এটি এডিট করে নতুন একটি দলের জায়গায় বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, এসব ষড়যন্ত্রই শেষ পর্যন্ত জনসমক্ষে আসবে। তার এই পোস্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রকম জল্পনার। ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা লিখেছেন, তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দিই। সদুদ্দেশে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তী সময়ে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়। মাহফুজ ওই পোস্টে আরো লেখেন, আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসংগতির অভিযোগ করেনি। বিভিন্ন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চেয়েও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য উপদেষ্টার এই পোস্টকে ডা. জাহেদ উর রহমান তার বালখিল্যতা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি তার পোস্টে নতুন একটি দলের মহারথী বলতে কাকে বুঝাতে চেয়েছেন সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে। পরক্ষণে সেটা এডিট করে সেখানে বিভিন্ন দলের মহারথী লিখে পোস্ট করেছেন। সরকারের উপদেষ্টা হয়ে তিনি যদি অভিযোগ করেন যে অনেকে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে নিচ্ছেন, কিন্তু তিনি নিচ্ছেন না, তিনি একমাত্র সৎ। এটা বলেতো এনসিপির নেতাদের দুর্নীতিকে তিনি স্বীকার করে নিলেন। তাহলে আমরা এটাকে বালখিল্য ছাড়া আর কি বলবো। তিনি যদি জানেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন এ প্রশ্নও রাখেন ডা. জাহেদ। অন্যদিকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো আরো পুরানো। দুর্নীতির দায়ে তার পিএসকে বরখাস্ত করলেও এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফকেও কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কুমিল্লাতে আসিফের বাবা নানান অনিয়ম দুর্নীতি করছেন এ রকম খবরও মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এসবের বিষয়ে সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। এসব কারণে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে তাহলে সরকার কি তাদেরকে প্রচ্ছন্নভাবে সহায়তা করছে।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম টাঙ্গাইলের পথসভায় বলেন, চাঁদাবাজের কোনো দলীয় পরিচয় নেই, চাঁদাবাজই তার পরিচয়। চব্বিশের বিপ্লবের পর আমরা আর চাঁদাবাজি দেখতে চাই না। কোনো ধরনের দলীয় বা ব্যক্তিগত অন্য কোনো প্রভাবের প্রটেকশন দিয়ে এই দেশে চাঁদাবাজদের রক্ষা করা যাবে না। কেউ যদি চাঁদাবাজদের প্রটেকশন দেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সেও চাঁদার ভাগীদার হিসেবে বিবেচিত হবে। আর কেউ চাঁদাবাজের পক্ষ নিলে তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা হবে।
রাবিতে জুলাই কনসাটের নামে ৭৬ লাখ টাকার চিঠি ও ঢাকায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে রাজশাহীর দুজন আটক নিয়ে তোলপাড়
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজধানীতে সাবেক এমপির বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে রাজশাহীর দুজন গ্রেফতার ও রাবিতে জুলাই কনসার্টের নামে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে ৭০ প্রতিষ্ঠানকে সাবেক সমন্বয়কের চিঠি নিয়ে তোলপাড় চলছে। ঢাকায় গ্রেফরকৃতরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য। সম্পর্কে তারা ভাই। বড় ভাই সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব দু’জনেই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘৩৬ জুলাই : মুক্তির উৎসব’ কনসার্ট আয়োজনের জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তার এই আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সালেহ হাসান নকীব। আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এই কনসার্ট। ইতোমধ্যেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন তাদের দুই লাখ টাকাও দিয়েছে।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে সালাউদ্দিন আম্মার নিজেই স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের দেওয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব সুপারিশও করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি প্রথমেই বলে দিয়েছি এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অর্থ সহায়তা করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ তোমাদের উদ্যোগে করতে হবে। তখন সে আমায় বলে অর্থ বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করে দিতে। আমি ক্যাম্পাসের অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য এর আগেও সুপারিশ করেছি। এটাও সে রকমই একটি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা এক পোস্টে লেখেন, এই আয়োজন কারা করছে, সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই নিয়ে একটা সিনেমার বিষয়ে সহায়তার জন্য আমরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি কোনো সহায়তা করেননি। অথচ এখানে কনসার্ট হবে সেখানে তিনি কিভাবে সহায়তা দেন?
রাবি ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘বিষয়টি তো চাঁদাবাজির মতোই হয়ে গেল। একটু ঘুরিয়ে ভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করা আরকি। একজন ছাত্রনেতা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকে এভাবে চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করতে পারেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তো থেকেই যায়।
ঢাকায় গ্রফতার হওয়া সিয়াম ও সাদাবের ব্যপারে খোজ নিয়ে জানাযায় তারা রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেফতার হয়েছে এটা শুনে আমি হতবাক। তাদের বাবা এস এম কবিরুজ্জামান পেশায় একজন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। দুই ছেলের গ্রেফতারের খবরে বিস্মিত হয়েছেন। এস এম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং এ্যন্ড সিএনজি স্টেশনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন কবিরুজ্জামান। আগে দুই ছেলে টিউশন করে খরচ চালাতেন। তবে কয়েক মাস হলো তা ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও আর টাকা পাঠাতে হয় না তাদের। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে শুনেছি। ওদের জীবন ধারা আলাদা, দাড়ি রাখে, পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সাথে জড়াবে এটা কেমন কথা। ফিলিং স্টেশনের কয়েকজন বিস্ময় প্রকাশ করেন।