
বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি তাঁর ভাষায়, “জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই স্বৈরাচারকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সাভারের আশুলিয়ায় দারুল ইহসান মাদরাসা মাঠে “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: নারকীয় আশুলিয়া” শীর্ষক স্মরণসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজনটি ছিল জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার পরিবারের প্রতি সম্মান জানাতে।
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেড় দশকের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এই শহীদদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ছিলেন শ্রমজীবী মানুষ।”
তিনি অভিযোগ করেন, “বিশেষ করে সাভার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এমন বর্বরতা যেন কারবালাকেও হার মানায়।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর যে আন্দোলন হয়েছিল, সেটিতে শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, “রিকশাচালক, গার্মেন্ট শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, দিনমজুরেরা কেন রাজপথে নেমেছিলেন? কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করতেন—ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্টরা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তাহলে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষই আর তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবে না।”
তারেক রহমান বলেন, “জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের রাজনীতিই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রতিটি নাগরিক যেন নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সেজন্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি বারবার দাবি জানায়।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে যদি সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্রে জনগণের ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।”
তারেক রহমান বলেন, “যে শহীদদের অধিকাংশই ছিলেন শ্রমজীবী, আজ রাষ্ট্রের সংস্কারে তাঁদের অবস্থান কোথায়? বর্তমান সরকার ও প্রশাসনে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? এটা জিজ্ঞাসা করার অধিকার তাঁদের আছে।”
তিনি মনে করেন, শহীদ শ্রমিকদের অবদান স্মরণ রেখে প্রশ্ন তোলা উচিত, “তাঁরা কি শুধুই সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন? না, তাঁরা এক মানবিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন।”
একজন রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিক হিসেবে তারেক রহমান বলেন, “একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নির্বাচন। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণের সরাসরি ভোটেই প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়া উচিত।”
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “বর্তমানে যাঁরা সরকারের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বিচক্ষণতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।”
তারেক রহমান জানান, “বিএনপি যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে সাভার আশুলিয়া কিংবা উপযুক্ত কোনো স্থানে শ্রমজীবী শহীদদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।”
তিনি বক্তব্য শেষ করেন শহীদদের প্রতি দোয়া ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনার মধ্য দিয়ে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের স্বজনদের আত্মত্যাগে দেশ আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত। রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।