Image description
 

পররাষ্ট্রনীতিকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। সুসংহত ঐকমত্য ছাড়া কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। এজন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

 

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইসস্টিটিউটের সভাপতি অ্যাম্বাসেডর হুমায়ুন কবির, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, সাবেক কূটনৈতিক এম শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ ইসস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম, কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ। 

সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, পররাষ্ট্রনীতি কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এর মূল নির্দেশনা আসে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। যদি দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মতভেদ ও দ্বন্দ্ব থেকে যায়- তাহলে সেই নির্দেশনাও দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হলে আগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহমত গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী হতে পারে না।

 
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কূটনীতির সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্র হলো ঢাকা। রাজধানী যদি অস্থিতিশীল থাকে, রাজনৈতিক নির্দেশনায় যদি দ্বিধা থাকে, তাহলে বিদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের পক্ষে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব।

 

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির বলেন, ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। ভৌগোলিক বাস্তবতায় আমাদের সম্পর্ক রাখতেই হবে। কিন্তু এই সম্পর্ক কোনো কাঠামোর ভিত্তিতে হবে- সে ব্যাপারে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমত প্রয়োজন।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিফলিত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাতে হবে। ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার শব্দটি এখন একটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। আমাদের বেকারত্ব হার বেড়েছে এবং মানবাধিকার অবস্থাও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনো টানাপড়েনে আছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে ব্যালেন্স করাটাও অনেক জরুরি।  

জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশ মূলত আমদানিনির্ভর অর্থনীতি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সূত্র হলো রেমিট্যান্স ও আরএমজি। আমরা রপ্তানি আমেরিকা ও ইউরোপে বেশি করে থাকি। আমরা অনেক বেশি ঋণনির্ভর হয়ে গেছি। সাইবার সিকিউরিটিকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই আমাদের জন্য। 

আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অনেক বিষয়ে কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। এটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বেশি প্রয়োজন ছিল। 

অ্যাম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য থাকা দরকার। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। 

ববি হাজ্জাজ বলেন, আমি যখন বাইরে অবস্থানরত নাগরিকের সঙ্গে কথা বলি যে, তারা অ্যাম্বাসিতে গিয়ে কোনো সাহায্য পায় না। সরকার পতনের পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো আগের লোকেরা বহাল আছে। এটি ভালো নয়। আগের সরকার দাসত্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, জাতীয় স্বার্থের জন্য নেগোসিয়েশন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য একটি রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে হবে।