Image description
 

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার যে প্রবণতা ১৯৭২-৭৩-এ শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। সে সময় থেকেই এদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দলাদলির প্রেক্ষিতে, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, এরপর সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ড, এরপর শুরু হয় রক্ষীবাহিনী দিয়ে জাসদ নিধন এবং জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ আর যুবলীগ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধন। এসব হত্যাকাণ্ডে সহায়তা বা ধামাচাপা দেওয়ার কাজ তখন প্রধানত পুলিশই করত। যখন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের পুলিশ এবং পুলিশের এসবি (গোয়েন্দা) জড়িত হয়ে হত্যাকাণ্ড চালায়, তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ একাকার হয়ে যায়। আজ যে সুশীলরা শুধু সাম্প্রতিক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের দুঃশাসনের কথা বলেন, তারা ১৯৭২-৭৫ বা ১৯৯৬-২০০১-এর আওয়ামী লীগের কথা বলেন না বা বলতে চান না।

 

এবার আসি রাজনীতিতে সেনা গোয়েন্দাদের ভূমিকা প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ডিজিএফআইয়ের দৃশ্যমান আগমন জেনারেল এরশাদের হাত ধরে। তিনিই ডিজিএফআইকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তবে বিএনপি গঠন প্রক্রিয়ায় ডিজিএফআইয়ের ভূমিকা আছে কী নেই, তার স্পষ্ট ধারণা আমার নেই, কারণ তখন আমি এইচএসসির ছাত্র মাত্র। তবে এটি আন্দাজ করা যায় যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেহেতু সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, হতে পারে তিনিও তার দলের প্রাথমিক নেতা নির্বাচনের কাজে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাদের ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়া ডিজিএফআইকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিধনের কাজে ব্যবহার করেননি। এছাড়া মেজর জেনারেল মহব্বত জান চৌধুরী নিজেও ডিজিএফআইয়ের প্রধান থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতাদের অন্য রাজনৈতিক দল থেকে ডিজিএফআই দিয়ে ভাগিয়ে আনার কালচার শুরু হয়েছিল এরশাদের সময় এবং সে সময় ডিজিএফআই যে এক শক্তিধর রাজনৈতিক সহায়ক শক্তি ছিল, তা আমি নিজেই বুঝতাম যদিও তখন আমি সেনাবাহিনীর এক অতিশয় কনিষ্ঠ অফিসার ছিলাম। এই ডিজিএফআইকে ব্যবহার করে এরশাদ বিএনপিকে ভেঙে কিছু নেতাকে নিয়ে তার দল গঠন করেন।

 

সাম্প্রতিককালে ডিজিএফআইয়ের রাজনৈতিক দানব হয়ে ওঠার কাজটি শুরু হয় ১/১১ থেকেই। ওই সময় থেকেই তারা নিজেদের অসম্ভব ক্ষমতাবান ভাবা শুরু করে, কারণ তখন তারা দুজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সব রাজনৈতিক নেতাকে জেলে বন্দি করেন। এছাড়া ডিজিএফআইয়ের কিছু অফিসারের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের অনেকের থেকে অর্থ আদায় করার খবর বাজারে চালু আছে। ডিজিএফআইয়ের এই পরিবর্তিত রূপ আওয়ামী লীগ খুব ভালোভাবে বুঝে যায়, ফলে তারা এই সংস্থাকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে থাকে আর খাস চামচা অফিসারদের নিয়োগ দিয়ে তাদের মুক্ত হস্ত করে দেয় আওয়ামীবিরোধীদের নিধনে এবং ইচ্ছামতো টাকা কামানোর কাজে।

ডিজিএফআইয়ের এই কর্মকাণ্ডে পুলিশের সব গোয়েন্দা সংস্থা ভাবতে থাকে তারা কেন পিছিয়ে থাকবে। এর ফলে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দানব হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় নামে। তখন পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইজি বেনজীরের সময় এসে অভূতপূর্ব দানবে পরিণত হয়। আসলে পুলিশের মাঠপর্যায়ে দানব হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। এর সর্বশেষ রূপে পরিণত হওয়ার কারণ ভারত। ভারতের ভূমিকার বিষয়টি পরে ব্যাখ্যা করছি। উল্লেখ্য যে, দেশের ইতিহাসে হোম মিনিস্টারের নেতৃত্বে পুলিশের কর্মকর্তাদের এক বিশাল দল নিয়ে প্রথম ভারত ভ্রমণ এ সময়েই ঘটে।

১৯৭১ সাল থেকেই ভারতের কোলে লালিত হওয়া মুজিব বাহিনী, যা পরে ১৯৭২ সালে রক্ষীবাহিনী নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই রক্ষীবাহিনীই শেখ মুজিবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনে ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত ভালো ফল দিয়েছে, এতে প্রায় ৩০ হাজার জাসদের নেতাকর্মীকে হত্যা করে তার রাজনৈতিক পথ পরিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয় রক্ষীবাহিনী নামক বিষবৃক্ষটি সমূলে উৎপাটিত হয় রক্ষীবাহিনীর বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই।

ভারত তার লালিত রক্ষীবাহিনী বিলুপ্তির কারণে এবং শেখ মুজিবকে হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে এবং তারা এর বিকল্প খুঁজতে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রক্ষীবাহিনীর থেকে আসা সেনাবাহিনীর অফিসারদের যোগ্যতা/অযোগ্যতা কোনো রকম বিবেচনা না করেই পদোন্নতি দেয়। ফলে তারা আশা করে যে ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীতে আত্মকৃত রক্ষীবাহিনীর অফিসারদের প্রভাবে এবং আওয়ামীবান্ধব সেনাপ্রধানের (লে. জেনারেল হারুন-অর-রশীদ, বীরপ্রতীক, আরসিডিএস, পিএসসি) কারণে আওয়ামী লীগ ২০০১-এর নির্বাচন সহজেই জিতে যাবে। কিন্তু সেনাবাহিনীর মোটামুটি সর্বস্তরের অফিসারদের সততা ও নিরপেক্ষতার কারণে ২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করে। এর ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে তাদের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সব পথ নিজেদের পক্ষে করে নেওয়ার প্রকল্পে মনোনিবেশ করে।

এই প্রকল্পের প্রথম লক্ষ্যবস্তু ছিল সেনাবাহিনী, কারণ তাদের নিরপেক্ষতাই ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ভারতেও প্রথম লক্ষ্যবস্তু, কারণ তারাই বাংলাদেশকে এক আত্মপ্রত্যয়ী দেশ ও জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করতে একমাত্র শক্তি, যাকে কোনোভাবেই ভারত বশে আনতে ব্যর্থ হচ্ছিল। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড করে যদি সেনাবাহিনীর কেউ—বিশেষত বিডিআর অফিসাররা নিহত হন, তবে দেশের সেনাবাহিনীর ভারসাম্য ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ভারতের দীর্ঘদিনের কিছু লক্ষ্য বাস্তবায়িত হতে পারে। সুতরাং ভারত এবং আওয়ামী লীগের কমন লক্ষ্যবস্তু সেনাবাহিনী হওয়ায় বিডিআর বিদ্রোহ পরিকল্পনার জাল বোনা শুরু হয় ২০০৮ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের ভারত সফরে প্রণয় মুখার্জিকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরে আনার ওয়াদা দেওয়ার পর থেকে। সেই অনুযায়ী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় তার বাস্তবায়ন।

এ কাজটি শুরু হয় ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ পদে মেজর জেনারেল মোল্লাহ ফজলে আকবরের (যিনি ১৯৯১ সালে লে. জেনারেল নাসিমের আশীর্বাদে ভারতে এডিএ হিসেবে নিয়োগ পান এবং তখনই ‘র’ তাকে রিক্রুট করে তাদের অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে) চাকরির শেষ দিনে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান এবং সেনাবাহিনীর এমএস ব্রাঞ্চের প্রধান হিসেবে (লে. জেনারেল মুস্তাফিজের পিএস)-কে নিয়োগে পরিবর্তনের মাধ্যমে। এ দুটি পদের পরিবর্তনের পর তারা তাদের এবং মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকের পরিকল্পনায় বিডিআর মেধাবী কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আপসহীন অফিসারদের বিডিআরে আনা হয় এবং র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ে আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন চাকরিখেকো অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়। এর ঠিক দুমাস পর ২৫ ফেব্রুয়ারি-২০০৯-এ বিডিআরের সাধারণ সদস্যরা সেনাবাহিনী থেকে আসা অফিসারদের হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত এবং ডাল-ভাত কার্যক্রমে অফিসারদের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা শুরু হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীকে পিলখানা থেকে অফিসারদের উদ্ধারে নবাগত ডিজিএফআইয়ের প্রধান এবং তার অধীনে নবাগত সব পরিচালক এবং স্টাফরা সেনাবাহিনীর অভিযান ঠেকাতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে অফিসারদের হত্যা নিশ্চিত করে ভারত এবং আওয়ামী লীগের কমন শত্রু নিধনে সফলতা অর্জন করে।

বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিকদের অনেকগুলো দাবির একটি ছিল সেনাবাহিনীর অফিসারদের ফিরিয়ে নিয়ে বিডিআরের নিজস্ব অফিসার নিয়োগ দিয়ে বিডিআর গঠন করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসের পরপরই বিডিআর পুনর্গঠনের কাজে তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেনাবাহিনী থেকে নতুন অফিসারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন শহীদ অফিসারদের প্রতিস্থাপক হিসেবে। তখন শেখ হাসিনা উত্তর দিয়েছিলেন, বিডিআরে এখন থেকে সেনা অফিসারদের পরিবর্তে বিসিএস অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে এবং তাদের দিয়ে বিডিআর নতুন করে পুনর্গঠন করা হবে। এটিই ছিল ভারতের প্রেসক্রিপশন।

এতে শেখ হাসিনাকে বোঝানো হয়, বিসিএস অফিসারদের দিয়ে নতুন বিডিআর গঠন করা হলে ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর অফিসারদের বিডিআর থেকে আর্মিতে ফেরত পাঠানো হবে। সেখানে বিসিএস অফিসার দিয়ে সীমান্তে ভারতের আজ্ঞাবহ বাহিনীর মাধ্যমে একটি নামকাওয়াস্তে সীমান্তরক্ষী নিয়োজিত থাকবে। পরে এরাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের অভ্যন্তর থেকে আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়ে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ে এবং আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়ে আওয়ামী শাসন চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করে। কিন্তু সে সময় বিডিআর বিদ্রোহের ফলে আওয়ামী নেতারা যে প্রতিক্রিয়া সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসারদের মধ্যে দেখেছিলেন, সেই ভয়েই আওয়ামী লীগ ও ভারত তাদের সেই গ্র্যান্ড পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

এর পাশাপাশি ১/১১-এর সময় ডিজিএফআইয়ের বিএনপি-বিরুদ্ধ ভূমিকা আওয়ামী লীগকে ভাবতে বাধ্য করে ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ পদগুলোয় আওয়ামীবান্ধব অফিসারদের নিয়োগ করা। এতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কারণে ফুঁসতে থাকা সেনাবাহিনীকে খুব নিবিড়ভাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখা এবং সৎ এবং আওয়ামী আনুগত্যে আনা অসম্ভব দেশপ্রেমিক ভারতবিরোধী অফিসারদের বেছে বেছে নিধন করা অথবা নিষ্ক্রিয় করার কাজে নিয়োজিত করা হয়।

এরপর শুরু হয় রাজনৈতিক গুম ও খুন এবং এভাবেই ১৭ বছর ডিজিএফআই এবং র‌্যাব এই খুনি আওয়ামী অফিসারদের নিয়োগ দিয়ে দেশের সবচেয়ে দক্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থাকে এবং র‌্যাবের মতো একটি চৌকস বাহিনীকে কিলার সংগঠন বানানো হয়। এই কিলার হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যারা যারাই প্রো-অ্যাকটিভ হয়ে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের সবাইকে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী শাসনের প্রথম তিন বছরে এসব কিলার এভারেজ মানের চরিত্রদের পদোন্নতি দেখে এনএসআইয়ের অফিসারদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। তারা ভাবতে থাকেন যে তারা (অর্থাৎ এনএসআই) ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে সংগঠন হিসেবে শেখ হাসিনার প্রিয় হয়ে উঠতে পারছে না এবং প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। এই ভাবনা থেকে এনএসআই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে তাদের নতুন অফিস চালু করে এবং এদের মূল দায়িত্ব হয় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কাজে লেগে যাওয়া এবং পরিবারের সব সদস্যের বিভিন্ন ব্যবসায়িক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো, যা আস্তে আস্তে এনএসআইকে নির্বাচনের দুর্বৃত্তায়নের দিকে নিয়ে যায়।

এই সুযোগে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পদধারীরা নিজেদের পকেট ভরানো ছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। আজকে যে অফিসারদের বিরুদ্ধে গুম ও খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা সেনাবাহিনীর এই পরিবর্তনের সিম্পটম মাত্র, এর ক্ষতের শেকড় আরো অনেক গভীরে প্রোথিত। এখন প্রশ্ন হতে পারে, এর সমাধান কী? এর সমাধান আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওভারহোলিং।

* যার প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনের দিকের খোলা জানালাগুলো চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া।

* আর রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিধনের কাজে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহার না করে।

* গোয়েন্দা সংস্থায় প্রেষণে পাঠানো সেনা অফিসারদের মনে রাখতে হবে, তারা রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল নন।

* আর তাদের অনুগত্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার উৎস খোঁজা এবং দেশের কমান্ডার ইন চিফকে (সে যেই হোক) অবগত করা এবং শুধুই রাষ্ট্রকে রক্ষা করাই তাদের কাজ। এর বাইরে তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই।

সংশ্লিষ্ট অফিসার নিজে দেশের কোনো বিশেষ শাসক গোষ্ঠীর প্রিয় হতে চাইলে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অফিসারের, সমগ্র বাহিনীর নয়। এ ধরনের অফিসার চিহ্নিত হওয়া মাত্র তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট বাহিনী কর্তৃক নেওয়া তাদের নিজ দায়িত্ব। তাই ওই ধরনের সব সেলফিশ করাপ্ট অফিসারকে নিজেদের বাহিনীর সদস্য ভেবে তাদের বাহিনীর এসেট ভাবার কোনোই কারণ নেই। বাহিনীর শীর্ষ পদে যারা থাকেন, তারা দুটি কথা মনে রাখতে পারলেই তাদের জন্য সব সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। বাহিনীর প্রধানদের মনে রাখতে হবে, তারা যেন

# আইনত সঠিক থাকেন।

# তারা যেন সঠিক পদ্ধতি গ্রহণে সঠিক পথ অনুসরণ করেন।

এই দুই কাজে বাহিনীপ্রধানদের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে যারাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তারাই ঘুণ পোকা। এদের প্রথম দফাতেই পরিষ্কার করুন। Remember the ethical advice from Singapore’s First Prime Minister ‘Keep your System Clean.’

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

ব্রি. জে. এ টি এম জিয়াউল হাসান