
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
গতকাল আমি সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনযোগে ভৈরব যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন যাতায়াত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ও পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ। ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করি ও ট্রেনে যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করি। ১০টা ১৫ মিনিটে ভৈরব পৌঁছাই ও সেখান থেকে গাড়িতে যেয়ে আশুগঞ্জ ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করি।
সেখানে পৌঁছে বিএনপি, জামাতসহ স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলি। তাদের দাবি, স্টেশনটিকে পূর্বের ন্যায় ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। স্টেশনটির বেহাল অবস্থা। উঁচুতে অবস্থিত স্টেশনটিতে মহিলা ও বয়োঃবৃদ্ধদের ওঠার ব্যবস্থাটি কঠিন। সিগনালিংসহ স্টেশনটির অন্যান্য ত্রুটি নিরসন ও দীর্ঘমেয়াদে কি করা যায়, সে বিষয়ে রেলের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিই।
সেখান থেকে সরাইলের পথে রওনা হই। সাত-আট কিলোমিটার পথে এক ঘণ্টা অবস্থানের পরেও অগ্রগতি না হওযায় প্রথমে পায়ে হেঁটে ও পরে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দিই। মোটরসাইকেল খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, চালক কিংবা যাত্রী, কারোই হেলমেট নাই। আট-দশটা মোটরবাইক খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজে পরে রওয়া দিই।
হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ ও বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। যানজটের মূল কারণ সরাইল চৌরাস্তার নির্মাণ কাজ হলেও, পথে দেখতে পাই যে মূলত: চালকদের শৃঙ্খলাবোধ ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থাপনার অভাবে যাত্রায় বিলম্ব ঘটছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে এনে এখন পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে।
দুই লেনের মূল রাস্তার ডানপাশে দুই লেন ও বামপাশে একটি সার্ভিস লেন আছে। যেগুলির যথাযথ ব্যবহার করা হলে এত যানজট হবার কথা নয়। মূল রাস্তার দুই পাশে ডিভাইডার স্থানে স্থানে ভেঙে ফেলেছে। পাশ থেকে গাড়ি উঠে দুই লেন কোথাও তিন চার লেনে পরিণত হয়েছে। ফলে সবাই আগে যেতে চাচ্ছে, কেউই আগাতে পারছে না। হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে এটা হতো না। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপির সাথে কথা হয়েছে, আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে কথা বলব।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সাথে পরামর্শক্রমে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বেই নির্মাণকাজ তদারকির জন্য অতিরিক্ত প্রদান রকৌশলী সহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদস্থ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত এ রাস্তায় চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে।
ফেরার পথে সমকালের সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসাবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করি না।
উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত ৮টায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিইনি। নিজের সীমিত সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি। ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি।
তাই, আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়!
লেখক: উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়