
এযাবৎ দেশে যত এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের ৯৫ ভাগ নিজেদের স্ত্রী-সন্তানকে পরবর্তী এমপি বানাতে চেয়েছেন, অনেকেই এই প্রচেষ্টায় কামিয়াব হয়েছেন। দেশের ৯৮ ভাগ মন্ত্রী নিজেদের পোষ্যকে মন্ত্রী করার খায়েশ প্রকাশ করে গেছেন। এমনকি এই নশ্বর দুনিয়াকে যারা হাতের ময়লা জ্ঞান করেন, সেই পীর সাহেবদের শতভাগ নিজেদের শাহজাদাদের গদিনশিন পীর বানিয়ে গেছেন। ন্যাশনাল সাইকিতে পরিবারতন্ত্রের এই মহামারি নিয়ে জাতির কোনো টেনশন নেই।
একটা পরিবার গোটা জাতিকে নাস্তানাবুদ করে গেল গত ১৬ বছর। তখন আমরা ‘পরিবারতন্ত্র’কে ভুলে থাকলাম। এখন আবার পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সঠিক মৌসুম শুরু হয়ে গেছে!
পরিবারতন্ত্র নিয়ে জাতির এ বোধোদয়টি খুবই চিত্তাকর্ষক। বিষয়টি নিয়ে প্রথম লিখেছিলাম এক-এগারোর প্রথম দিকে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায়। সেই লেখাটি হাতে নেই। তারপর একই বিষয় নিয়ে লিখলাম দৈনিক নয়াদিগন্তে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল। শিরোনাম ছিল: ‘বংশতন্ত্র কতটুকু খারাপ, কতটা অপরিহার্য’। আমার এই লেখার বিপরীতে দৈনিক দিনকালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী সিরাজ লিখলেন, ‘ম্যাডাম, মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিন।’
সেই সময়টিতে হঠাৎ দৃশ্যপটে উদয় হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একমাত্র জীবিত ভাই আহমেদ কামাল! তখন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুপথযাত্রী তাকেই মান্নান ভূঁইয়ার অন্যতম সাগরেদ কাজী সিরাজসহ কয়েকজন তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেন। পেছনে ছিল সব অঘটনঘটনপটীয়সী ডিজিএফআই। তখন দৈনিক নয়া দিগন্তে আমার সেই কলামটি ডিজিএফআই এবং কাজী সিরাজদের বাড়া ভাতে ছাই ফেলে দিয়েছিল!
এখন সেই পরিবারতন্ত্রকে মতি-মাহফুজ গং ইউনূস-আশিক সুগারকোটিং দিয়ে সামনে আনছে! এক্কেবারে মোক্ষম সময়ে দিল্লি স্টারের কলামটি বের হয়েছে। শিরোনাম করেছে: ‘Bangladesh deserves better leaders. How do we find them?’ অনেকগুলো ভালো ভালো কথা বলে শেষ কথা একটাই—‘পরিবারতন্ত্র’ খতম না হলে এই বেটার লিডার জাতির কপালে জুটবে না!
আলো-স্টারের বুদ্ধিবৃত্তিক এই ইতরামোর জবাব সামনে আরেকটি লেখার মাধ্যমে দেব ইনশাআল্লাহ। তবে আজকের এই নিবন্ধে ২০১৬ সালে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত লেখাটির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হুবহু তুলে ধরছি, কারণ ৯ বছর আগে লেখা এর প্রত্যেকটি বাক্যই আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
“বংশতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র বিশেষ করে বিএনপির পরিবারতন্ত্র নিয়ে অনেকেই তাদের উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পরিবারতন্ত্র বা বংশতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিদগ্ধজনদের সেই উষ্মা বর্তমান শাসক শেখ পরিবারটিকে তেমন করে স্পর্শ করবে না।
বিএনপিকে ঘিরে এই পরিবারটি না থাকলে অনেক আগেই বিএনপির ইতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে গণতন্ত্রের জানাজা পড়তে হতো বলে অনেকেই মনে করছেন। বিএনপিকে যতই দলিত-মথিত চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হোক না কেন এই পরিবারের ছোঁয়া পেয়ে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো জায়গা থেকেই তা আবার দাঁড়িয়ে পড়তে পারে। কথাটি যতই খারাপ শোনাক না কেন, এটাই বাস্তব সত্য।
গণতন্ত্রের জন্য দরকার দুই বা ততোধিক সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। পরিবারতন্ত্রে যতই খারাপ থাকুক না কেন, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য প্রয়োজনীয় আনুগত্য বা শৃঙ্খলা এটি জুগিয়ে এসেছে। অন্যথায় উপমহাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সকাল-বিকাল অ্যামিবার মতো খণ্ডিত-বিখণ্ডিত হতে থাকে। ভারতে বামপন্থিরা কোনোমতে টিকে থাকলেও বাংলাদেশে তাদের মধ্যে আনুগত্য ও শৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক।
উপমহাদেশে পরিবারতন্ত্রের বাইরে যে আবেগটি রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্য জুগিয়েছে তা হলো ধর্মীয় আবেগ বা ভাবাদর্শ। তাও সব দল নয়। ভারতে বিজেপি ও পাকিস্তান বা বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে পারিবারিক উত্তরাধিকার দেখা যায় না।
উপমহাদেশের বাইরে সভ্য বিশ্বও পরিবারতন্ত্রকে পুরোপুরি বাদ দিতে পারেনি। বুশের ছেলের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। হিলারি ক্লিনটন ‘অবিশ্বস্ত’ স্বামী ক্লিনটনের ছায়া ধরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। সেখানকার ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউশনগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে বলেই এসব পরিবারতন্ত্র সেখানে কোনো মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। কাজেই আমাদের জন্য কোনটা আগে জরুরি—পরিবারতন্ত্রকে খতম করা, নাকি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো?
এক-এগারোর সময়ে যারা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ শুরু করেছিলেন, তাদের অনেকে পুরো পরিবার নিয়েই তাতে শামিল হয়েছিলেন। সেই জেহাদে ডা. বদরুদ্দোজা তার পোলাকে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন। এক-এগারোর তথাকথিত হিরো মইন উদ্দিনের এক ভাইও এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছিলেন। কাজেই দুই পরিবার ধ্বংস হলেও নতুন পরিবার যে গজিয়ে উঠত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমাদের রাজনৈতিক মানস বা গঠন সত্যিই অদ্ভুত। অন্যকে যদি মনে করি, আমার মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ, তবে আর আনুগত্য করতে রুচি হয় না। কাজেই পরিবারতন্ত্র আমাদের একধরনের নিয়তি বা রাজনৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পুরো জাতির রাজনৈতিক মানসের পরিবর্তন না হলে দু-একজন চিন্তাবিলাসী দিয়ে পরিবারতন্ত্রের উচ্ছেদ সম্ভব হবে না। কাজেই মূল জায়গায় হাত না দিয়ে এভাবে নিজের অপছন্দের পরিবারকে উৎখাতে মূল্যবান সময় ও শক্তির অপচয় ভিন্ন অন্য কিছু হবে না। ন্যূনতম গণতান্ত্রিক ও মুক্ত পরিবেশে মানুষের ভেতরে পরিবর্তন হলে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব ধীরে ধীরে এমনিতেই কমে আসবে। শক্তি বা কূটকৌশল প্রয়োগ করে এটা কখনই সম্ভব হবে না। পরিবারতন্ত্রের ধ্বংসের চেয়ে এ মুহূর্তে দরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার কার্যকর করা।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটি একটা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, নির্বাচনব্যবস্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত না হলেও জনগণের ইচ্ছার মোটামুটি প্রতিফলন ঘটত। এগুলো নিয়ে আমরা যতটুকু এগিয়েছিলাম, তা থেকেও অনেক পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যখন একটি শক্তিশালী কমান্ড সেন্টারের অধীনে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার, তখন হঠাৎ বংশতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ চিন্তার বিলাসিতা ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না।
বাকশাল বা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি যতটুকু বাধা, তার চেয়ে বড় বাধা হয়ে পড়েছে শহীদ জিয়ার পরিবারটি। ফলে এ মুহূর্তে পরিবারতন্ত্র কিছুটা আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করছে। আমাদের গণতান্ত্রিক বিকাশের একটা পর্যায় পর্যন্ত এই পরিবারতন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। একটি পরিবারের হাত থেকে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে অন্য পরিবারের উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে মজার কথা হলো বিএনপির বলয় থেকে পরিবারতন্ত্র বিলুপ্ত করার জন্য যতটুকু প্রচেষ্টা বা উসখুস লক্ষ করা গেছে, আওয়ামী লীগ বলয়ের ক্ষেত্রে সেরূপ দেখা যায়নি। ফলে বিএনপির পরিবারতন্ত্রের ধ্বংস কামনা করে আওয়ামী লীগের পরিবারতন্ত্রকে পোক্ত করতে চাইছে কি না, সে প্রশ্ন আসছে।
ইদানীং এক ফাটাফাটি পরামর্শক বিএনপিতে উদয় হয়েছেন । একই লেবেলের অর্ধ শতাধিক অ্যাডভাইজার বিএনপিতে থাকলেও আমাদের গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া তাকে বিশেষ কাভারেজ দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, যেন রতনে রতন চিনেছে। তার মেজাজ ঠিক আছে কি না, তা পরখ করতে নাকি পার্টি চেয়ারম্যান আগে তার বউকে ফোন করে তা আন্দাজ করে নেন। এ রকম অনেক পরামর্শকের পরামর্শে দিশাহারা বিএনপি সম্পর্কে লিখেছিলাম, ‘বিএনপিতে কাজের লোক কমে গেছে, পরামর্শকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিএনপির প্রতি অনবরত বুদ্ধি নিক্ষেপ করা বুদ্ধিজীবীরা আবার কয়েক কিসিমের রয়েছেন।
প্রথম পর্যায়ে রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগের হানিফ এবং হাছান মাহমুদের বুদ্ধিজীবীয় সংস্করণ। তারা বিএনপির অবৈতনিক পরামর্শদাতার মতো। বিএনপি থেকে খালেদা ও তারেককে মাইনাস করলেই বিএনপি ঠিক হয়ে পড়বে বলে তারা প্রকাশ্যেই বলেন।
পরামর্শদাতাদের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছেন নিরপেক্ষ ঘরানার বুদ্ধিজীবীকুল।
পরামর্শদাতাদের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছেন বিএনপির তথাকথিত উদার অংশ। তারা বিএনপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘মাই ডিয়ার’ অংশ। তাদের ‘উদার’ পদবিটি আওয়ামী লীগেরই দেওয়া। বিএনপির কর্মী ও নেতাদের বিভ্রান্ত করতে যে কাজটি উপরিউল্লিখিত দুটি গ্রুপ দিয়ে করানো সম্ভব হবে না, সেই কাজটিই তাদের দিয়ে করানো হয়।
তাদের একজন ছিলেন দৈনিক দিনকালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। ইদানীং বিএনপির প্রতি মুহুর্মুহু উপদেশ বর্ষণ করছেন। বিএনপি নিজের পায়ে কুড়াল মারছে, এ ধরনের আর্তচিৎকার করে প্রায়ই বিএনপির অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলছেন তিনি। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির শিরনি এই মুন্সিরাই খেয়েছেন। এখন জিয়ার সহোদরকে তিনিই জিয়ার আসল দল পয়দা করতে সাহায্য করছেন।
এই মুন্সির অন্যতম এজেন্ডা জামায়াতের ‘খপ্পর’ থেকে বিএনপিকে বাঁচানো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে তাদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে বেছে নেয়, তখন এ ধরনের কোনো মুন্সি আওয়ামী বলয় থেকে বের হননি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াকে তারা কতটুকু জানেন বা কতটুকু চেনেন, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা সংযোজন করেছিলেন এই জিয়াই। এখন প্রশ্ন—কোন জামায়াতের খপ্পরে পড়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া এই ভয়ানক কাজটি করেছিলেন?”
শহীদ জিয়ার সহোদরের এই অসময় বোধোদয়টি নিয়ে আরো লিখেছিলাম—
“… বিএনপিকে বিব্রত করতে এক টোকাইকেও ময়দানে নামানো হয়েছে ‘আসল বিএনপি’ সৃষ্টি করার মতলবে। বিএনপির শিরনি খাওয়া দুই-দুইবারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দিয়েও বিকল্প বিএনপি দাঁড় করানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই ফলপ্রসূ হয়নি। এ অবস্থায় জিয়ার এক অসুস্থ সহোদরকে পেয়ে মনে হলো, এই ‘আসল বিএনপি-অলা’রা অমাবস্যার চাঁদ হাতে পেয়ে গেছেন।
এ দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে জিয়ার এই ছোট ভাই আজীবন দূরে থেকেছেন। রাজনীতির গতিধারা সম্পর্কে তিনি যে খুব একটা ওয়াকিবহাল তাও মনে হচ্ছে না। রাজনীতির গতিধারাকে খুঁজে বের করার মতো শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক অবস্থা, কিংবা পূর্ব-অভিজ্ঞতা কোনোটিই তার নেই। যাদের ওপর ভরসা করে জাতির ও নিজের জীবনের এই অসময়ে তিনি ভাইয়ের রাজনীতি খুঁজতে চাচ্ছেন তাদের সবাই সেই একই ঘরানার। তাদের একেকজন মতলববাজির এক চরম উদাহরণ সৃষ্টি করে রেখেছেন। তার পাশে যে কয়টি চেহারা দেখা গেছে, তাদের সবার ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ। বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার আশপাশে থেকে যারা বিএনপির ক্ষতি করছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, নিজের আশপাশে তিনি এর চেয়ে উন্নতমানের কাউকে জোগাড় করতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি।”
সংগত কারণেই আমার সেই লেখাটি কাজী সিরাজদের খুবই খেপিয়ে তোলে। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে তিনি তখন রেগুলার লিখতেন! ২০১৬ সালের ১৫ মে’তে প্রকাশিত কলামটিতে লেখেন—
“বিএনপির সমালোচনা করলে জামায়াতের ‘গা-জ্বলার’ কথা উল্লেখ করেছি আগে। আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যক্তি। আমার লেখায় নির্মোহভাবে আমি লীগ-বিএনপি দুই দলেরই মাঝে মাঝে সমালোচনা করি। বিএনপির সমালোচনার ব্যাপারে দারুণ রি-অ্যাক্ট করেছেন জামায়াতের এক ব্যক্তি। মিনার রশীদ নামে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তে গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে একটি লেখা লিখেছেন—‘বংশতন্ত্র কতটুকু খারাপ, কতটা অপরিহার্য’ শিরোনামে। মূল আক্রমণটা আমার ওপর দিয়েই গেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব পরের কোনো লেখায়। লেখার মূল কথা, আমি বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছি, জিয়ার ভাইকে নিয়ে আলাদা বিএনপি করছি, আমি সরকারের ‘মাইডিয়ার গ্রুপের’ লোক ইত্যাদি। আমি এত বড় রাজনৈতিক পালোয়ান হয়ে গেলাম! এ ব্যাপারে জোরালো জবাব আছে। কিন্তু বন্ধুরা আশঙ্কার কথা যেটি বললেন, নামটি লেখকের ছদ্মনাম। তিনি জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পত্রিকাটির মাধ্যমে তাদের দলের ক্যাডারদের কাছে সাংকেতিক বার্তা পাঠান। এই লেখার মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধেও কি কোনো বার্তা দেওয়া হলো? কী সে বার্তা? তার পর থেকে অপরিচিত ব্যক্তিরা আমার খোঁজখবর নিচ্ছে বলে বাসার দারোয়ান জানিয়েছে। একজনের সঙ্গে দেখা না করে অন্যায় আচরণই করেছি। ভদ্রলোক কষ্ট পেয়েছেন। আশা করি তিনি পরিস্থিতিটা বুঝবেন।”
সত্যি প্রমাদ গুনলাম। কারণ এখন হাসিনার এজেন্সি বা বাহিনীর কেউ যদি এই ভদ্রলোককে উধাও করে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়? কারণ সে নিজেই যা লিখে গেছে, তা আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগত। তার এই লেখার কোনো জবাব আমি দিইনি, চুপ করে থেকেছি, আল্লাহ আল্লাহ জপেছি! গত ১৬-১৭টি বছর যে কত কিসিমের পেরেশানির মধ্য দিয়ে কেটেছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তবে বছর খানেক সময়ের মধ্যেই আসমানি ফয়সালা চলে এলো। আমার পাঠানো সাংকেতিক সংকেতে কোনো ক্যাডার এই কাজটি করেনি! আল্লাহর পাঠানো আজরাইল এই কাজটি বিশ্বাসযোগ্যভাবে করে গেছেন ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায়।
যে কয়বার খুশি মনে ইন্নালিল্লাহ বাক্যটি উচ্চারণ করেছি, এটি তার মধ্যে অন্যতম একটি।