রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো বহু বছরের পুরোনো। প্রায় অকেজো হয়ে পড়া অনেক লঞ্চের ওপরে চকচকে রঙের প্রলেপ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ ভিতরের অনেক কিছুতেই জোড়াতালি দেওয়া। প্রশিক্ষিত মাস্টার না নিয়ে অল্প বেতনে অনভিজ্ঞ হেলপার দিয়ে লঞ্চ চালাছেন সংশ্লিষ্ট লঞ্চমালিকদের অনেকে। পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই অধিকাংশ লঞ্চে।
এর মধ্যে ‘এমভি ফাতেহা নূর’ এবং ‘এমভি নজীর’ নামের লঞ্চ দুটির আবাসপত্র সবচেয়ে বেশি খারাপ। অনেকটা ভাঙাচোরা বডি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (বিআইডাবিব্লউটিএ) নাকের ডগায় ওই লঞ্চ দুটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে অবাধে যাত্রী পারাপার করছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। প্রতিদিন সেখানে নারী, শিশুসহ হাজারো যাত্রী লঞ্চে পারাপার হয়। বর্তমান দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করছে।
চলাচলকারী ওই লঞ্চগুলোর অধিকাংশই ৪০ থেকে ৪৫ বছরের পুরোনো। সেখানে প্রশিক্ষিত কোনো মাস্টার (চালক) না নিয়ে অনেক লঞ্চমালিক সামান্য বেতনে অনভিজ্ঞ হেলপার দিয়ে তাদের লঞ্চগুলো চালাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার বাকেট, প্রয়োজনীয়সংখ্যক লাইফ বয়া, ফাস্টএইডসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চেই সেগুলো নেই।
এদিকে, নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিআইডাবিব্লউটিএর। এ জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে বিআইডাব্লউটিএর দুজন ট্রাফিক পরিদর্শক রয়েছেন। লঞ্চ টার্মিনালে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার কথা। অথচ ট্রাফিক পরিদর্শকের উপপরিচালকরাই লঞ্চমালিক ও সংশ্লিষ্ট লোকজন তাদের নিজ নিজ লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে লঞ্চ চালাচ্ছেন।
কালুখালী থেকে আসা ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রী আসাদ প্রামাণিক বলেন, এসব লঞ্চে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু লঞ্চে দ্রুত নদী পারাপার হওয়া যায়। এ জন্য লঞ্চে নদী পার হচ্ছি তবে কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়গুলো দেখে দ্রুত লঞ্চগুলো মেরামত করা।
ঝিনাইদহ থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী আকলি বেগম বলেন, এসব লঞ্চে যাত্রী পারাপারের সময় যদি কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটে এই দায় কে নেবে? নবীনগর থেকে আসা যাত্রী জয়নাল উদ্দিন বলেন, ওই পার থেকে আসলাম মনে হলো জীবন হাতে নিয়ে এলাম। লঞ্চের যে অবস্থা। এগুলো দ্রুত মেরামত করা হোক তা না হলে বন্ধ করে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডাব্লউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর মধ্যে এমভি ফাতেহা নূর এবং এমভি নজীর নামের লঞ্চ দুটির অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট লঞ্চের লোকদের অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্ত তারা কোনো কথাই শুনছেন না।
ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পারাপার প্রসঙ্গে এমভি ফাতেহা নূর লঞ্চের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, আমার লঞ্চের বডিতে সমস্যা রয়েছে—এ কথা সত্য। এখন বাজার (লঞ্চের ব্যবসা) খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে মেরামতের কাজ করাতে দেরি হচ্ছে। তবে চলতি (ডিসেম্বর) মাসের মধ্যে আমি আমার লঞ্চের মেরামতকাজ করাব।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের (বিআইডাবিব্লউটিএ) কর্তৃপক্ষ জানান, ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ চলাচলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট লঞ্চমালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।