ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর গতরাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের পর আজ (শুক্রবার) সকালেও শাহবাগে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভকারীদের জন্য রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে খাবার নিয়ে ছুটে গেছেন রাশিদা রহমান রহমান নামে এক গৃহিণী।
তিনি নিজের জমানো টাকা দিয়ে কলা, পাউরুটি, খেজুর ও শুকনো খাবার কিনে নিয়ে গেছেন।
সকাল ১০টার দিকে শাহবাগে কথা হয় ৬০ বছর বয়সী রাশিদা রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সন্তানতুল্য ছেলে মারা গেছে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ওর মুখটা চোখের সামনে ভাসছে। সকালে উঠেই নিজের জমানো টাকা দিয়ে খাবারগুলো কিনেছি। ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদীকারীদের মাঝে খাবারগুলো বিতরণ করবো।
এদিকে কেউ মিছিল সহকারে, আবার কেউ নিউ উদ্যোগে শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন। তাদের হাতে পতাকা, মুখে স্লোগান। ‘ফ্যাসিবাদের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা এই বাংলায় হবে না’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা।
শনির আখড়া থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আশফাকুর রহমান। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমরা একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হারিয়েছি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। প্রতিবাদ জানাতে সকালেই এখানে চলে এসেছি। ওসমান হাদির মতো দেশপ্রেমিক সাহসী মানুষকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।
রামপুরা থেকে শাহবাগে এসেছেন ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যু পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই হত্যার প্রতিশোধ নেব। হাদি ভাইয়ের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও শুরু হয় বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে আগুন দেওয়া হয় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে। হামলার কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার প্রকাশ হয়নি প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন ঢাকা-৮ আসনের স্বত্রন্ত্র প্রার্থী এবং রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চে’র মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে (এসজিএইচ) নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যান তিনি৷