নির্বাচন আসলেই আমাদের মত দলিত গোষ্ঠীদের প্রতি দরদ বেড়ে যায় দেশের সকল রাজনৈতিক দলের। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমাদেরকে উপেক্ষা করেন সকল দলের নেতৃবৃন্দ। আমরা এবার নিজেদের দল করে সংসদে প্রতিনিধি পাঠিয়েই আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করতে পারবো। তাই আমাদের মত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সরকারের লোকজন মনে করত আমরা তাদের ভোট ব্যাংক। আমরা এই তকমা আর দেখতে চাই না। এখন আমরাই দল গঠনের মাধ্যমে সংসদে প্রতিনিধি পাঠাবো।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এসব অভিযোগ করেন আলোচকরা।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাম্য ও ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার থাকলেও বাস্তব রাজনীতিতে দলিত জনগোষ্ঠী আজও উপেক্ষিত—এমন চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশের দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আন্দোলন ও ইতিহাসভিত্তিক এক বিশ্লেষণধর্মী নথিতে। নথিটি উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপট থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত দলিত রাজনীতির ধারাবাহিক সংকট ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সামনে এনেছে।
বক্তারা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে দলিত রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দলিত জনগোষ্ঠী কাঠামোগতভাবে পিছিয়ে পড়েছে। সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ এবং রাষ্ট্রীয় অবহেলার কারণে দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কখনোই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি।
দলিত গোষ্ঠীদের নেতারা বলেন, ব্রিটিশ শাসন ও পাকিস্তান আমলে দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সক্রিয়তা ছিল সীমিত এবং সংগঠিত নেতৃত্বের অভাব ছিল প্রকট। স্বাধীনতার পর সংবিধানে সমান অধিকারের ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে শিক্ষা, চাকরি ও জনপ্রতিনিধিত্বে দলিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ আজও নগণ্য। দলিত গোষ্ঠীর কাউকে সদস্য করে দিলে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন অনেকাংশে পূরণ হবে। আমাদের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী থেকে এবার অন্তত একজন জনপ্রতিনিধি সংসদে যাবে। এটা আমরা প্রত্যাশা করছি।
আলোচনা সভায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা। নির্বাচনের সময় দলিত জনগোষ্ঠীকে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের দাবি ও সংকট বরাবরই উপেক্ষিত থেকে গেছে। ফলে দলিত রাজনীতি কখনোই মূলধারায় জায়গা করে নিতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়লেও কার্যকর সংগঠন, নেতৃত্ব বিকাশ এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আন্দোলন টেকসই রূপ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। এতে সতর্ক করে বলা হয়েছে—এই অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মৌলিক দর্শন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও জানান তারা।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হলে দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আর কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং রাষ্ট্রের দায়। প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি, নীতিগত সংস্কার এবং দলিত নেতৃত্ব বিকাশ ছাড়া এই বৈষম্যের চক্র ভাঙা সম্ভব নয়।
শীর্ষনিউজ